রামনবমীতে মমতা এবং সঙ্ঘ- বিজেপি: একে অপরের পরিপূরক

    0
    176

    রামনবমীতে মমতা এবং সঙ্ঘ- বিজেপি: একে অপরের পরিপূরক-গৌতম রায়

    গৌতম রায়:-অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক

    ♦️রামনবমীকে কেন্দ্র করে আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আর রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে কে কতো বেশি রামভক্ত তা জাহির করবার এক বিশ্রী প্রতিযোগিতা চলেছে।বস্তুত গত বছর থেকে রামনবমীকে ঘিরে এই ধর্মীয় মোড়কে রাজনৈতিক তান্ডব হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি এ রাজ্যে জোরদার ভাবে শুরু করেছিল।এতোকাল রামনবমীকে ঘিরে হিন্দুত্ববাদীদের উচ্ছ্বাস প্রধানতঃ সীমাবদ্ধ ছিল উত্তর ভারতেই।এ রাজ্যে ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে জনপ্রিয়তার নিরিখে বুঝি বা খানিকটা এগিয়েই ছিলেন যশোদাদুলাল কৃষ্ণ,দশরথনন্দন রামচন্দ্রের নিরিখে।মানুষের ধর্মবোধকে ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে হিন্দু সাম্প্রদায়িক , মৌলবাদী শক্তি গতবছর থেকে রামনবমীকে কেন্দ্র করে তাদের ধর্মীয় আবরণে এই রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে দেয়।হিন্দুত্ববাদীদের সেই কর্মকান্ডে ধুয়ো দিতে তাদের স্বাভাবিক মিত্র হিশেবে আসরে নেমে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এস এস – বিজেপির সেই রামনবমীর পাল্টা হিশেবে তৃণমূল গতবছর পালন করে হনুমান জয়ন্তী।এই বছর আর এস এস – বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূল ও রামনবমী পালনের প্রতিযোগিতায় প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।হিন্দুত্ববাদীদের রামনবমী পালনের পাল্টা হিশেবে তৃণমূল কংগ্রেসের রামনবমী পালনের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যেই স্বাগত জানিয়েছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি।আর এস এসের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, রাজ্যের শহরাঞ্চলে যে ১৫৬ টি বস্তি এলাকাতে সঙ্ঘের সংগঠন এবং তৎপরতা আছে, সেইসব এলাকাতে রামনবমী পালনে সঙ্ঘের বাইরের যে কোনো উদ্যোগ কে তারা সব রকমের সহযোগিতা করবে।আর এস এস প্রকাশ্যে আরো জানিয়েছিল যে, যেসব জায়গাতে তারা নিজেদের উদ্যোগে রামনবমী পালন করতে পারবে না, সেইসব এলাকাতে তারা তৃণমূল কংগ্রেস সংগঠিত রামনবমীর শোভাযাত্রাতে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে।

    সমস্ত ছবি-সংগৃহীত

    পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের উদ্যোগে ধর্মীয় উৎসবের নাম করে রামনবমী পালন এই প্রথম।স্বাধীনতার আগে ঔপনিবেশিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এ রাজ্যে শাসক দলের উদ্যোগে রামনবমী বা কোনো ধর্মীয় উৎসব দলীয় উদ্যোগে কখনো পালিত হয় নি।শাসন ক্ষমতায় রয়েছে যে রাজনৈতিক দলটি তারা অপর একটি সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গিয়ে রামনবমীর মতো একটি ধর্মীয় উৎসব সরাসরি মাঠে নেমে পালন করছে– এমনটা এরাজ্যের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নি।রাজ্যের শাসক তৃণমূলের উদ্যোগে ধর্মের এই রাজনৈতিক ব্যবহারের সুযোগটা পূর্ণমাত্রায় নিয়েছে সাম্প্রদায়িক আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি।বস্তুত রাজ্যের শাসক তৃণমূলের রামনবমী ঘিরে যে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ,তা সর্ব অংশে মদত জোগাচ্ছে আর এস এস, বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে।ফলে ভুগছে সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।তৃণমূল কংগ্রেসের এই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের কৌশলের ভিতর দিয়ে সেই দলের উপরে নিজেদের মতাদর্শগত প্রভাব প্রতিপত্তি আরো অনেকখানি ই বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব বলে প্রাদেশিক সঙ্ঘ নেতৃত্ব তাঁদের জাতীয় নেতৃত্বের কাছে জানাতে শুরু করেছেন।মমতাশাহীকে হিন্দুত্বের প্রচার ও প্রসারে সহায়ক বলে বর্ণনা করে ইতিমধ্যে ই সঙ্ঘের প্রাদেশিক নেতাদের পক্ষ থেকে নাগপুরে তাঁদের শীর্ষস্তরের নেতাদের জানানো হয়েছে।
    এই প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতাকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এ রাজ্যে তাঁরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাড়তে দিয়েছেন।আর এস এসের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে প্রকাশ্যে সাংবাদিক সন্মেলন করে বলা হয়েছে যে, ১৯২৫ সালে তাঁদের সংগঠনের জন্মের পর থেকে এই রাজ্যে তাদের সীমাবদ্ধ সাংগঠনিক ক্ষমতার গন্ডিকে তারা গত পাঁচ বছরে ভেঙে দিতে পেরেছে।সঙ্ঘের প্রাদেশিক নেতারা প্রকাশ্যে সাংবাদিক সন্মেলনে বলেছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসন কালে ২০১৩ সাল থেকে তাঁদের উল্লেখযোগ্যভাবে সাংগঠনিক ভাবে বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে।২০১৩ সালে এই রাজ্যে আর এস এসের ” শাখা” ছিল ১১৩ টি।২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি তে এই” শাখা” র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২৭৯ টি।এর ভিতরে কেবলমাত্র দক্ষিণবঙ্গে ই রয়েছে ৯১০ টি।সপ্তাহে একদিন করে স্বয়ংসেবকরা মিলিত হন এমন ” শাখা” র সংখ্যা ১০৯২ টি। আর এস এস নেতৃত্ব দাবি করছেন যে , তাদের ” আর এস এসে যোগ দাও” ঘোষণার পর এখন নাকি তারা প্রতি মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ আবেদনপত্র পান।
    আর এস এস এ রাজ্যে গত কয়েকবছর ধরেই একটা জোরদার সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং চালাচ্ছে।এই রামনবমীকে কেন্দ্র করে সেই সামাজিক প্রযুক্তির ভিতর দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিটা তারা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে করে চলেছে।শাসক তৃণমূল কার্যত আর এস এসের সেই বিভাজনের রাজনীতির একটা বিশেষ সহায়ক শক্তি হিশেবেই কাজ করে চলেছে।আর এস এসের সামাজিক প্রযুক্তির সঙ্গে মূল ধারার রাজনীতির সংযোগের রেখা কোথাও তীব্র কোথাও অস্পষ্ট। এই প্রসঙ্গে বর্তমান নিবন্ধকারের একটি ক্ষেত্র সমীক্ষাজনিত অভিজ্ঞতার কথা বলা যেতে পারে।
    নদিয়া জেলার উদ্বাস্তু অধ্যুষিত অঞ্চল তাহেরপুর। গোটা রাজ্যের ভিতর শিলিগুড়ি কর্পোরেশন বাদ দিলে একমাত্র বামপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত পৌরসভা।এলাকার বিধায়ক গত নির্বাচনে বামপন্থী ও কংগ্রেসের যৌথ ভোটে নির্বাচিত হলেও এখন শিবির বদল করে শাসক তৃণমূলের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এই উদ্বাস্তু অঞ্চলটিতে তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষদের যথেষ্ট বসবাস রয়েছে। এই তাহেরপুরে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জাল বিস্তারের জন্যে সঙ্ঘের হাজারো বর্ণের সব সংগঠনকে এখানে নিয়োজিত করেছে আর এস এস।গরিব তপশিলি পরিবারগুলির ভিতর জাতপাতজনিত হীনমন্যতা দূর করতে এখানে সঙ্ঘের উদ্যোগে নানা রকমের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে গণহারে পৈতে পরানো হচ্ছে।তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষ,দেবনাথ উপাধিধারী মানু ইত্যাদিদের পৈতে পড়িয়ে তাদের ” ব্রাহ্মণ” হিশেবে মেলে ধরে একধরণের সামাজিক প্রযুক্তির ভিতর দিয়ে সেইসব মানুষদের ভিতরে সঙ্ঘীয় রাজনীতির আমদানি ঘটানো হচ্ছে।
    এইসব মানুষদের ভিতর জাতপাতের হীনমন্যতাকে এখানে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল হিশেবে ব্যবহার করছে আর এস এস।গত শতাব্দীর নয়ের দশকের সূচনাপর্ব থেকে গঙ্গার দুধারে চটকল অধ্যুষিত শ্রমিক মহল্লাগুলিতে এই পৈতে পরানোর কাজটি করতো ” শান্তি কুঞ্জ , হরিদ্বার ” নামক সঙ্ঘের একটি শাখা সংগঠন। এই সংগঠনটি মহিলাদের ও পৈতে পরাতো।সেই সংগঠনের ভিতরে হিন্দি ভাষী সংস্কৃতির প্রাবল্য ছিল।এখন উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই পৈতে পরিয়ে জাতিগত উন্নতির তথাকথিত রাজনৈতিক কার্যক্রমে যে সংগঠনগুলিকে ব্যবহার করছে সঙ্ঘ সেগুলির ভিতরে বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলায় জনপ্রিয় ধর্মীয় দেবদেবী,বক্তিত্বের ই প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রে নদিয়া জেলার জনপ্রিয় বৈষ্ণব উপাখ্যানগুলির ব্যাপক ব্যবহার ওইসব অঞ্চলে বর্তমান নিবন্ধকারের চোখে পড়েছে।

    এ রাজ‍্যে নতুন

    গত সাত বছরে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে প্রাইমারি শিক্ষার ক্ষেত্রে যে চরম হতাশা জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপূর্ণ সুযোগ আর এস এস নিয়েছে।ক্ষেত্রসমীক্ষার অঞ্চলটিতে দেখা গেছে আর এস এসের উদ্যোগে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার নামে চলেছে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন।আগে আর এস এস এইসব ইস্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে ” সরস্বতী শিশু মন্দির” বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ” ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ” পরিচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি ” প্রণবানন্দ শিশু মন্দির” ইত্যাদি নাম বেশি ব্যবহার করতো।এখন বেশিরভাগ মানুষি জানতে পেরে গেছেন যে ওইসব নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আড়ালে কে বা কারা রয়েছেন।তাই এখন বাংলায় জনপ্রিয় মনীষীদের নাম ই ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করছে আর এস এস।এইসব মনীষীদের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের নাম বেশি ব্যবহার করে সেখানে কোনো না কোনো গৈরিকধারীকে রেখে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সুনামকে এইভাবে ঘুর পথে ব্যবহার করছে আর এস এস। তাছাড়াও সারদা দেবী, বিবেকানন্দ এমনকি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম ও ব্যবহার করা হচ্ছে ইস্কুলের নামকরণের ক্ষেত্রে।অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকাতে শিশুদের এইসব সঙ্ঘের ইস্কুলগুলি থেকে ভালো পুষ্টিকর মিড ডে মিল দিয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।পড়াশুনার নানা রকম উপকরণ দিয়ে এইসব গরিব পরিবারের বাচ্চাদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে সঙ্ঘের ইস্কুল গুলি সম্পর্কে।এইসব অঞ্চলে মূলত আর এস এসের শাখা সংগঠন ” বনবাসী কল্যাণ আশ্রমে” র অন্তর্গত।এই বনবাসী কল্যাণ আশ্রম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি এবং প্রশাসনের সুযোগ নিয়ে গত কয়েক বছরে এই রাজ্যে মারাত্মক ভাবে তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে।
    ছোট জায়গা তাহেরপুরেই তিনজন স্বয়ংসেবক এবং একজন প্রচারক আছেন যারা সঙ্ঘের সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের সদর দপ্তর নাগপুর থেকে।এদের ভিতরে যিনি প্রচারক তিনি দাবি করছেন যে, তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নিয়েছেন।

    বিগত ২০০৫ সালের মাঝামাঝি মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে সঙ্ঘের শাখা সংগঠন বনবাসী কল্যাণ আশ্রম আদিবাসী যুব সম্প্রদায়ের ভিতরে কিছু প্রশিক্ষণের প্রচলন করেছিল। সেই মডেলটি তারা এখন আমাদের এই রাজ্যের তপশিলি জাতি উপজাতি ভূক্ত এলাকাগুলিতে প্রয়োগ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।পশ্চিম মহারাষ্ট্রে আদিবাসী যুবকদের ভিতরে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে যেসব বইপত্র বিলি করা হতো তার সঙ্গে এই মুহুর্তে এ রাজ্যের তপশিলি জাতির মানুষদের বেশি বসবাস যুক্ত অঞ্চলে যুবকদের ভিতরে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিলিকরা পুস্তকের ভিতরে বিষয়গত যথেষ্ট সাযুজ্য আছে।মহারাষ্ট্রে বিলি করা ওইসব বইগুলির বিষয়বস্তু ছিল আদিবাসীদের জন্যে সঙ্ঘের শিক্ষাক্রম ” একাল বিদ্যালয়ে” র সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

    ফলাফল-আক্রান্ত প্রশাসনও

    তাহেরপুর অঞ্চলে আর এস এসের শাখা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিলি করা যেসব বইপত্র বর্তমান নিবন্ধকারের দেখার সুযোগ হয়েছে তা থেকে তার এই ধারণা হয়েছে যে, আর এস এস তাদের ” একাল বিদ্যালয়ে” র ধাঁচে তপশিলী জাতির মানুষদের টার্গেট করে ইস্কুল খুলেছে অথবা খোলবার পরিকল্পনা তাদের আছে।কারণ, পশ্চিম মহারাষ্ট্রে দেখা সেইসব বইগুলির প্রশিক্ষণের ধরণধারণের সঙ্গে তাহেরপুরে দেখা বইপত্রের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে।পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ” শঙ্কর বর্গ” নামে একটি পুস্তক বর্তমান নিবন্ধকারের দেখার সুযোগ হয়েছিল। এই পুস্তকটিতে” একাল বিদ্যালয়ে” র শিক্ষকরা কেমন হবেন তার একটা আদর্শ রূপরেখা ( গাইড লাইন) ছিল। সেই রূপরেখাতে বলা হয়েছিল; আমরা কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্মের জন্যে কাজ করি না।কোনো শ্রেণীর জন্যে ও আমরা কাজ করি না। আমরা গোটা দেশের জন্যে কাজ করি।গোটা দেশবাসী ই আমাদের ভাই।সবাইই ভারতমাতার সন্তান।এই মানসিকতা যাদের ভিতরে নেই , সেইসব লোকেদের থেকে আমরা দূরত্ব বজায় রেখে চলি।আমরা ভারতমাতার জীবনবোধ ই হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে আছি।সেভাবেই আমরা ভালো থাকি, সুখী থাকি।ভারতমাতা হলেন দেবী দুর্গার মতো।দেবী দুর্গা যেমন সব অশুভের বিনাশ করেন, ভারতমাতা ও তেমনি সব অনিষ্টকে আপন শক্তিতে ধ্বংস করেন।মা লক্ষ্মী যেমন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তেমন ই সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী হলেন ভারতমাতা,তিনি ই আমাদের সম্পদশালী করেন।মা সরস্বতীর মতোই ভারতমাতা আমাদের ভিতর থেকে সমস্ত অন্ধকার এবং কুসংস্কার দূর করেন,অজ্ঞতা দূর করেন।হিমালয় থেকে হিন্দু মহাসাগর ( রাজনৈতিক হিন্দুরা” ভারত মহাসাগর” বলেন না, বলেন, ” হিন্দু মহাসাগর”) প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি জ্ঞানের আলো জ্বেলে দেন।সাতটি মূল্যবোধ এভাবেই আমরা ছড়িয়ে দিই।সেই সাতটি মূল্যবোধ হলো; ঐক্য, কঠিন কাজ, সমতা, ভবিষৎ চিন্তা, জ্ঞান, আনন্দ এবং শান্তি।”
    এ রাজ্যের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, ছিন্নমূল , নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রাধান্য বেশি এমন সব জায়গায় ” শান্তিদর্শন” নামক এক আপাত নিরীহ অথচ ” শঙ্কর বর্গে” র মতোই সাম্প্রদায়িকতার বিষে ভর্তি বই সঙ্ঘের নানা বর্ণের শাখা সংগঠনগুলি থেকে বিতরণ করা হচ্ছে।২০০৫ সালে যে কাজ সঙ্ঘ পশ্চিম মহারাষ্ট্র জুড়ে করেছিল, সেই কাজ এখন তারা দক্ষিণ বঙ্গ জুড়ে করছে।
    আর এস এসের প্রচলিত কোনো লব্জ যেমন ; মুসলমান, খ্রিস্টান বা বিদেশি– যে সব শব্দ তারা হরবখত ব্যবহার করে, তেমন একটি ও শব্দ মহারাষ্ট্রে ২০০৫ সালে বিলি করা ” শঙ্করবর্গে” ছিল না, আবার ২০১৮ তে এ রাজ্যে বিলি করা” শান্তি দর্শনে” র ভিতরেও নেই।সেই জায়গাতে দুটি বইতেই প্রচলিত হিন্দুদের দেবদেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ইত্যাদির কথা আছে।এই দেশের দুই প্রান্তে দুটি সময়ে আর এস এসের সামাজিক প্রযুক্তির কার্যক্রমের পুস্তকাদি দেখলে খুব সহজে এগুলিকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের কার্যক্রম হিশেবে চিহ্নিত করা খানিকটা সাধারণ চোখে মুশকিলের ই কাজ হয়ে পড়ে।আদিবাসী যুবকরা যখন ” শঙ্করবর্গ” পড়েছিলেন তখন আর এস এসের উপস্থাপনার কৌশলেই তাঁদের একটি বারের জন্যে ও মনে হয় নি যে, এই সংগঠনটি কোনো সুনির্দিষ্ট ধর্ম বা শ্রেণীর জন্যে কাজ করছে। মহারাষ্ট্রের সেই অভিজ্ঞতাকেই আর এস এস এখন এ রাজ্যে কাজে লাগাচ্ছে। আর তাদের সেই কাজের স্বাভাবিক সহায়ক শক্তি হিশেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে এবং নিজের রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনকে মেলে ধরছেন।

    (মতামত সম্পূর্ণ লেখকের)

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here