বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নীল বাড়ি আজও অসংরক্ষিত, ক্ষুব্ধ হিলিবাসী

0
66

নিজস্ব সংবাদদাতা,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

দীর্ঘ ৪৯ বছর পর, ১৯৭১ এর বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সোনালী অধ্যায়ের রঙ ফেরাতে বিএসএফ-র উদ্যোগে হিলিতে বিজয় দিবস মহা সমারোহে বুধবার পালন করা হল ঠিকই ৷ তবে সেই সময়ে রাতের অন্ধকারে গোপনে হিলিতেই ভারত- বাংলাদেশের মিলিত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিদ্বজনেরা যে ঘরটিতে বসে মুক্তি যুদ্ধের ‘রূপ রেখা’ তৈরি করেছিল।

nil house | newsfront.co
স্মৃতি বিজড়িত নীল বাড়ি ৷ নিজস্ব চিত্র

আজও সেই পাক সেনার গুলিতে ক্ষত- বিক্ষত স্মৃতি বিজড়িত নীল রঙের টিনের বাড়িটি সংরক্ষণের অভাবে অবহেলিত ৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পাক- ভারত যুদ্ধে হিলির আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমিকদের বলিদানের স্বর্ণালী অধ্যায় সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কোন পদক্ষেপ না গ্রহণ করায় ক্ষুব্ধ হিলিবাসী । যদিও হিলির বিশিষ্ট সমাজসেবী ও বঙ্গভূষণ প্রাপ্ত অমূল্য রতন বিশ্বাস নিজ উদ্যোগে তা কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।নইলে হয়তো এতদিনে আধুনিকীকরণের ঠেলায় তাও লোপ পেত।

locked | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

১৯৭১ সালে ভিন্ন রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল আন্দোলন, সংঘর্ষ চলছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা পূর্ব পাকিস্তান দখল করে আক্রমণ শুরু করে। বাংলাদেশের দাবিতে অনড় পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সমূলে বিন্যাস করতে তৎপর হয় পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা। সেই সময়ও ভারতের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি৷

আরও পড়ুনঃ ভগবানগোলায় গঙ্গা পাড়ের ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজে গরমিলের অভিযোগ গ্রামবাসীদের

ঠিক সেই সময়ে দেশভাগ ঠেকাতে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকে রণেভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলি এসে পড়তে থাকে তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। কার্যত শেলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় হিলি স্থল বন্দর সংলগ্ন এলাকার নীল রঙা বিশালাকার টিনের তৈরি বাড়িটি।

গোলা, বারুদের ধোঁয়াটে গন্ধ এখন নেই তবে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী রয়েছে ওই কুটির ৷ আঘাতের যন্ত্রণা কাঁটিয়ে ৪৯ বছর আগের ইতিহাস বহন করে চলছে বাড়িটি। কালক্রমে সেই বাড়িটি এখন স্মৃতির ভারে বিদ্ধ । তবে, ইতিহাসকে সংরক্ষিত করায় ব্রতী হয়েছেন বাড়িটির মালিক।৪৯ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের শেল, মাটার, স্পিনটার, গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ওই বিশালাকার শতাব্দী প্রাচীন নীল টিনের বাড়িটি আজও স্বমহিমায় বিরাজ করছে স্থলবন্দরের পাশেই।

আরও পড়ুনঃ পিআরএস সেন্টার খোলার দাবিতে কোলাঘাট স্টেশন ম্যানেজারকে ডেপুটেশন

একাত্তরের ইতিহাসকে সংরক্ষিত করতে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন বাড়িটির বর্তমান মালিক তথা সমাজসেবী বঙ্গ ভূষণরত্ন প্রাপ্ত অমূল্যরতন বিশ্বাস। তবে, ইতিহাস সংরক্ষিত হয়নি বলে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে স্থানীয় সকলের। তাঁদের দাবি, হারিয়ে যাওয়ার আগেই সংরক্ষিত করুক সরকার।

এ প্রসঙ্গে বাড়ির মালিক তথা সমাজসেবী বঙ্গভূষণ প্রাপ্ত অমূল্যরতন বিশ্বাস বলেন, “একাত্তর সালের লক্ষ্মীপুজো পরবর্তী সময়ের ঘটনা। বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের রাজাকাররা শেল ফেলে। শেলের আঘাতে বাড়ির দেওয়াল ক্ষতবিক্ষত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই ক্ষতগুলি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক সাক্ষর বহন করে সেই কারণে ক্ষত চিহ্নগুলি সংরক্ষিত করে রেখেছি।স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই হিলি বহু ইতিহাস বহন করে চলেছে।

আরও পড়ুনঃ ডোমকল রমনা বসন্তপুর জেট সোসাইটি দখল নিয়ে হাতাহাতির অভিযোগ আইপিএস নজরুল ইসলামের

কিন্তু কখনও এই ইতিহাস সংরক্ষিত করার জন্য কাউকে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখিনি। দেশের জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে ইতিহাসকে তুলে ধরা প্রয়োজন।”জেলার ইতিহাস গবেষক ও বিশিষ্ট শিক্ষক ও জেলার হেরিটেজ সোসাইটির সদস্য সমিত ঘোষ তাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে এই মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষিত করবার দাবি যথাযথ স্থানে তুলবেন বলে জানান। পাশাপাশি তার দাবি ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেন বাড়িটি সংরক্ষিত হলে যেমন তাদের কাজে সুবিধে হবে। তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বাংলাদেশে জন্মে ভারত তথা হিলির আত্মত্যাগের বিষয়টি জানতে পারবে।”

যদিও হিলি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশু সাহা জানিয়েছেন ,বাড়িটির সংরক্ষণ হওয়া প্রয়োজন,কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় হিলির মানুষ ও যে সামিল হয়েছিল , সবার সেটা জানা দরকার। তিনি আর ও জানান, তাদের সীমিত ক্ষমতা, তবে তাদের কাছে কেউ এই দাবি জানালে তারা তাদের উচ্চস্তরে বিষয়টি জানিয়ে সেটি পূরণের জন্য দরবার করবেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here