প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার
সূর্য ডোবার পর লেকের নিস্তরঙ্গ কালো ঘোলাটে জলটা আট বছরের বাবলুর চোখে আরও মায়াবী হয়ে উঠলো। পাশ থেকে একটা ঢিল কুড়িয়ে নিয়ে গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে লেকের জলে ছুঁড়ে মারলো সে। নিস্তরঙ্গ জলে তরঙ্গ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সার্থক হলো কিনা, অন্ধকারে ঠিকমতো ঠাওর করতে পারলো না বাবলু।
নরলোক জুড়ে কি যেন একটা কঠিন ছোঁয়াচে ব্যামো এসে জুটেছে। তাতেই বাবলুর মা মালতীর বিহারের ইঁটভাটার কাজটা চলে গেল। সেই থেকে, দিন নেই, রাত নেই, মায়ে-ব্যাটায় শুধু হেঁটেই চলেছে। মেদিনীপুরের বাড়িতে ফিরতে হবে। মালতীর বাপের বাড়ি। মালতীর বর বিয়ের দু’মাস পরেই কাউকে কিছু না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।
মালতীর জ্বর। হেঁটে হেঁটে বাবলুরও পায়ের পাতা থেকে মাংসের চোকলা উঠে রক্ত বেরুচ্ছে। তাই আজ দুপুর থেকেই এই লেকের ধারে মা-ছেলে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। একটা পরিযায়ী পাখির বাচ্চা দলছুট হয়ে তাদের পাশে এসে বসেছে। ডানায় কিছু একটা হয়েছে, উড়তে পারছে না।
সন্ধ্যের পর এক দয়ালু কাকু পলিপ্যাকে একগাদা ভাত-ডাল-তরকারি এনে দিল। বুভুক্ষু মা-ছেলে গোগ্রাসে গিললো। পাখিটাকেও কয়েকটা ভাত দিলো। যাবার আগে কাকুর সাথে মায়ের চোখাচোখি হলো। মা বললো, ‘রাতে এসো।’
মাঝরাতে হালকা ঘুমের মধ্যে বাবলু টের পেলো, সন্ধ্যেবেলার কাকু ফিরে এসে মাকে নিয়ে সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেল। ঝোপের ভিতর থেকে একটা গোঙানির আওয়াজ ভেসে এলো। এই আওয়াজটা বাবলুর চেনা। ইঁটভাটার বাবুরাও মাঝেমাঝে মাঝরাতে তাঁবু থেকে মাকে নিয়ে বেরিয়ে যেত।তারপর এই আওয়াজটা শুনতে পেত বাবলু।
ভোরবেলা মা-ছেলে আবার হাঁটার জন্য তৈরি হলো। পাখির ছানাটাও এরমধ্যে ডানায় বল ফিরে পেয়েছে, তার সাথিরাও ফিরে এসেছে। পাখির দল উড়ে গেল মাঝ-আকাশে, মা-ছেলে উঠে এলো জাতীয় সড়কে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584