কমিশন বাঁচাতে রাজ্যের সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবীগণ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্হ

0
3049

আনিসুর রহমান, কোলকাতা

আজকে বিরল ঘটনার সাক্ষী রইল কলকাতা অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস। ফোরাম আয়োজিত বুদ্ধিজীবি সভায় উপস্থিত বাবা হারানো এক (মৃত্যু জনিত কারণে) চাকুরী প্রার্থী, হাওমাও করে কেঁদে ফেললেন।কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না উপস্থিত সকল বুদ্ধিজীবীগণ।

কান্নায় ভেঙে পড়লেন কামাল হাসান।ইনার বাবা এক মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মারা যান ২০০৯ সালে।কিন্তু তাঁর ভাগ্যে(আরও ৫৯জন সমেত) এখনো চাকরি জোটেনি।

দীর্ঘ পাঁচ বছরে শিক্ষক অভাবে রক্তশূন্যতায় ভুগছে রাজ‍্যের মাদ্রাসাগুলি। 2016 সালের 5 সেপ্টেম্বর ফলপ্রকাশ করলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে 3706 জন সফলপ্রার্থীর। 59 জন ডাই- ইন -হারনেস চাকরী প্রার্থীও অথৈ সাগরে, 2012 সালের শেষ নিয়োগের 24 জন সফল পরীক্ষার্থীও নির্বাচিত মাদ্রাসা গুলিতে এখনো কর্মে যোগদান করার সুযোগ পারেনি।

মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগের এই টালবাহানার জন্য মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইনি বাধাকে দায়ী করলেও তা মেনে নিতে রাজি নয় বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম। দীর্ঘ তিন বছর ধরে তারা মেধার ভিত্তিতে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানিয়ে আসছে। ফোরামের দাবি, কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগে হাইকোর্টর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সক্রিয়তার অভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নত মেধা সম্পন্ন যোগ্য প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।অপরদিকে শিক্ষকের অভাবে সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে।পাশাপাশি কিছু স্বার্থান্বেষী অর্থলোভী মানুষ সরকারী আদেশনামা অগ্রাহ্য করে অবৈধ পথে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করে চলেছে।

এই অব্যবস্থা প্রতিরোধ করে যোগ্যপ্রার্থীরা যাতে নিয়োগপত্র হাতে পায় এবং প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থার অঙ্গহানি না হয় তার জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা চালিয়ে আসছে বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম।তারই অঙ্গ রূপে আজ অ্যাকাডেমি অফ্ ফাইন আর্টসের সভাগৃহে রাজ্যের শিক্ষা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

উপস্থিত ছিলেন প্রফেসার ও প্রাক্তন এম. পি. সেখ সাইদুল হক(বর্ধমান রাজ কলেজ), মসিউর রহমান(অবসর প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার),মিরাতুন নাহার ( অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও সমাজ সেবি), রাজিয়া আহমেদ(বিশিষ্ট আইনজীবী, কোলকাতা হাইকোর্ট),সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার( ফিল্ম মেকার এবং সমাজ সেবক),এম.রহমান(অ্যাসিষ্ট‍্যান্ট প্রফেসার আলিগড়),মনিরুজ্জামান(আর,আই,ওয়াই ইন্ডিয়া),মহঃ মুসারুদ্দিন(কমিটি মেম্বার, সি.এফ.আই), আলতাফ আহমেদ(এ.পি.ডি.আর) । উপস্থিত প্রত‍্যেকেই কোর্টের ১১ই সেপ্টেম্বরের রায়কে কার্যকর করে এম এস সির মাধ্যমে অতিসত্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার এবং এই সমস্যা সমাধানে মুখ‍্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জোরালো দাবি করেন । ড.মিরাতুন নাহার বলেন ” রাজ্যসরকারের সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়নের স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়ছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিসনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার মাধ্যমে। তবে এর জন্য কিছু সুবিধাবাদী মানুষও দায়ী “।অধ্যাপক ড. মুকলেসুর রহমান বলেন-“কমিটির মাধ্যমে নিয়োগে দূণীর্তির সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নিতে হবে”।উপস্থিত মশিউর রহমান বলেন-“সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে বেশি করে অসংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে”।

বক্তব্যে সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার

এছাড়াও উপস্থিত সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার বলেন-“সমস্যাটা খুব গভীর এখনই চিকিৎসা হওয়া দরকার। না হলে সামাজিক মারন রোগে পরিণত হবে”। সভার শেষে ফোরাম সভাপতি অনুরোধ উপস্থিত সকল বুদ্ধিজীবীদের অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টা অবগত করানোর জন্য।জানা গেছে কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের দাবিতে সারা রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মতিপত্র নিয়ে জমা দেবে ফোরাম।ফোরাম সভাপতি ইসরারুল হক মন্ডল আরও বলেন-“মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের ভরসা আছে, আশাকরি শীঘ্রই তিনি ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন”।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here