কৌশিক মাইতি
২০১৫ তে প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরে রাফায়েল চুক্তির হঠাৎ পরিবর্তন হল কেন? ডিফেন্সে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা রিলায়েন্স কিভাবে চুক্তিতে ড্যাসল্টের(Dassault Aviation) পার্টনার হল? পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী হ্যাল(HAL) র সাথে প্রযুক্তি হস্তান্তর হল না কেন?১২৬ টি ফাইটার জেট কেনার কথা থাকলেও একই টাকায় মাত্র ৩৬ টি জেট কেন?
প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই। প্রশ্নের উত্তর সোজাসুজি ভাবে না দিয়ে সরকার ব্যস্ত রাজনৈতিক তরজায়। কথায় কথায় ট্যুইট করা বাগ্মী মোদি চুপ, তাঁর হিরম্ময় নীরবতা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে প্রশ্ন। রাফায়েল স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় ডিফেন্স ডিল, টাকার পরিমান প্রায় ৫৮,০০০ কোটি। কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দল রাস্তা থেকে সংসদ সর্বত্র সরব, কিন্তু সরকার দোষ ঝাড়তে ব্যস্ত। রাফায়েল দুর্নীতি নিয়ে সরব প্রশান্ত ভূষণ, যশোবন্ত সিনহা, অরুণ সৌরি সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
ইউপিএ র সময়ে রাফায়েল ফাইটার জেট কেনার চুক্তি হয়। কথা ছিল কেনা হবে ১২৬ টি রাফায়েল। ১৮ টি সম্পূর্ণ রেডি অবস্থায় ভারতের হাতে তুলে দেবে ফ্রান্সের ডিফেন্স দানব ড্যাসল্ট। বাকি ১০৮ টি জেটের জন্য ভারতের সরকারি ডিফেন্স কোম্পানী হ্যালকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। প্রতিটা ফাইটার জেটের গড় মূল্য ৫৬০ কোটি টাকা।
কিন্তু মোদি ম্যাজিকে চেঞ্জ হয়ে গেল সব।২০১৫ সালের ১০ ই এপ্রিল তাঁর ফ্রান্স সফরেই বদলে গেল চুক্তির সবকিছু। একই মূল্যে ভারত পাবে মাত্র ৩৬ টি জেট, তবে সবকটি রেডি অবস্থায়। কিন্তু কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তর হবে না। ক্ষতি হল হ্যালের, ক্ষতি হল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রোজেক্টের। এবং অস্বাভাবিক ভাবে এক একটি জেটের মূল্য বেড়ে দাঁড়াল ১৬৭০ কোটি টাকা। এই চুক্তি পরিবর্তনে ভারত কি পেল? কার লাভ হল? কার ক্ষতি?
প্রশ্নটা স্বাভাবিক, উত্তরও খুব সহজ। অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স, কয়েক মাস আগে গজিয়ে ওঠা কোম্পানী, রাফায়েলের মতো উচ্চ মানের প্রযুক্তির ফাইটার জেট তৈরির বরাত পেল কিভাবে? ড্যাসল্ট রিলায়েন্সের কোন কাজ দেখে তাদের পার্টনার করল? বাচ্চা ছেলেও বোঝে। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অসম্ভব সম্ভব না। মোদির আশে পাশে ঘুরঘুর করতে থাকা শিল্পপতিরা এভাবেই ভারতকে লুটে নেয়, সরকার তাদের জন্য সুযোগ করে দেয়।
সব সময় সরকারের চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে কর্পোরেট কিন্তু গত ২০১৪ র পর ভারত রাষ্ট্র পুরোটাই ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টদের দখলে। একের পর এক শিল্পপতির ঋণ মুকুব করে দেওয়া হচ্ছে, বিদেশে পালাতে সুবিধা করে দেওয়াও হচ্ছে। নানা বিল পাশ করে আম্বানী-আদানিদের নগ্ন ভাবে জনগনের টাকা তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক সম্পদ। আর এই রাফায়েল ডিল অনিল আম্বানী পাওয়া আসলে একটা উদাহরণ মাত্র। বিজেপি উগ্র জাতীয়তাবাদী দল, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদা বড় বড় ভাষণ শোনা যায় কথায় কথায় কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার নামে এই দুর্নীতিই তাদের আসল মুখ, রাষ্ট্রপ্রেম আসলে মুখোশ। ভারতবাসীকে ধর্ম ও জাত-পাতে মাতিয়ে রেখে রাষ্ট্রের ধন সম্পদকে এভাবেই কর্পোরেটের পায়ে সঁপে দিচ্ছে মোদি সরকার। সমস্ত সমস্যা ও তার সমাধান ভুলে বড় অংশের মানুষ মেতেছে ধর্ম ধর্ম খেলায়।
সরকার স্বচ্ছ হলে সংসদে রাফায়েল চুক্তি ও ফাইটার জেটের দাম বিস্তারিত জানাক। উত্তর দিক প্রতিটি প্রশ্নের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বারবার নানা পরস্পর বিরোধী তথ্য দিচ্ছেন কেন? ‘সদা সরব’ মোদির নীরবতা আসলে রাফায়েল দুর্নীতির সত্যতাই প্রমাণ করে। মোদি সরকার বেকায়দায়, এখন দেখার মানুষ কতটা রুখে দাঁড়ায়। চোখের সামনে থেকে রাষ্ট্রপ্রেমের গেরুয়া পর্দা সরিয়ে ‘আসল’ মোদিকে না চিনলে আরও ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
(নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584