–উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থানাধিকারী দেবশুভ্র চক্রবর্তী লিখলেন নিজের কথা নিউজ ফ্রন্টের পাতায়
আমি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেছি। আমার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৩।আমি যখন টিভিতে আমার নাম ঘোষণা হতে শুনি তখন আমার আনন্দের সীমা ছিল না। আমার মা ও দিদি খুব খুশি হয়েছিল এই খবর শুনে। আস্তে আস্তে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকদের শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকে। কিন্তু আজ থেকে ঠিক ন’মাস মতো যদি আমি পিছিয়ে যাই তাহলে কিন্তু সেদিন আমাদের বাড়ির পরিস্থিতি এরকম ছিল না। ২৭শে আগষ্ট ২০১৭ আমার বাবা শ্রী দেবব্রত চক্রবর্তী প্রয়াত হন। বিষয়টা মেনে নেওয়া যে কোন ছেলের পক্ষেই প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক হয়। আমার পক্ষেও তা অত্যন্ত কষ্টকর হয়েছিল। কিন্তু এই দুঃসময়েও আমার মা শুভ্রা চক্রবর্তী আমার পাশে ছিলেন। তিনি সবসময় আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর ইচ্ছাটার প্রতি যেন আমি সম্মান দেখাই। আমি যেন ভালো মানুষ হই, ভালো ভাবে পড়াশোনা করি। পিতৃশোক সামলানোর মধ্যেই আরেক বিপর্যয় ঘটে আমাদের পরিবারে। ১৭ই সেপ্টেম্বর আমার কাকা শ্রী সুব্রত চক্রবর্তী

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই পারিবারিক বিপর্যয়ের সময় মা সবসময়ই আমার সাথে থেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন।এর কিছু মাসের মধ্যেই আমার উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা ছিল। আমাকে স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনাতে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। আমার স্কুল কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের শিক্ষক, তথা আমার গৃহশিক্ষকেরা সবাই অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমার প্রতিটি বিষয়ের একজন করে গৃহশিক্ষক ছিলেন।তাঁরা সবাই খুবই সহযোগিতা করেছেন। বার বার পরীক্ষা নিয়ে ভূল ত্রুটি ধরে দিতেন। স্কুলের স্যার রাও প্র্যাকটিকাল ও থিয়োরি দুটোই খুব যত্ন সহকারে শেখাতেন। আমি টেস্টে ৪৬৯ পেয়েছিলাম। আমি JEE Main এবং WBJEE পরীক্ষা ও দিয়েছিলাম। আমার JEE Main এর সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ২০৩৭৭, এবং WBJEE র্যাঙ্ক ৬২২। আমি ISI এর লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছি। Interview আছে ২১ শে জুন।
যাই হোক অবশেষে এলো ৮ই জুন ২০১৮। সকাল থেকে মনে ভয় ছিল যে ফল আশানুরুপ হবে কিনা।স্নান করে পুজো দিয়ে মা আর দিদির সাথে টিভির সামনে বসে পড়ি সকাল দশটা নাগাদ। আমার নাম ঘোষণা হতেই মুহুর্তের মধ্যে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর? তারপর ……
বাবার কথা মনে পড়ছে। বাবা আমার এই সাফল্যে নিশ্চয় গর্ব অনুভব করতেন।করতেনই। আমি পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। বাবা মা’র দেখানো পথে এগিয়ে গিয়ে তাঁদের স্বপ্নের সার্থকতা দেখতে চাই……
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584