শুভদীপ ভট্টাচার্য্য, মুর্শিদাবাদঃ
‘হুলমাহা’ পালনে শপথের মধ্যে দিয়ে প্রদীপটা জালিয়েছিলেন নিলয় মুর্মুরা, এইদিন সেই শপথের প্রদীপের শিখাই উস্কে দিলেন তারা ডি এম ডেপুটেশনের মধ্যে দিয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলা সার্বিকভাবেই অনগ্রসর। ক্ষমতা ও পতাকার নানা রং বদল সত্ত্বেও বদলায়নি মানুষের প্রকৃত অবস্থা। এখনও চাকরির খোঁজে গ্রাম উঠে যায় শহরে। হাজারো একটা সমস্যা নিয়েই দিনগুজরান মুর্শিদাবাদ বাসীর। জেলায় মূলত দুটি আধিপত্যকারী জনগোষ্ঠির বাইরে রয়েছে কিছু অন্যান্য জনগোষ্ঠিরও বাস, তাদের মধ্যে আদিবাসীরা অন্যতম। শতাংশের নিরীখে ০. ১১% শতাংশের নীচে আদিবাসী জনসংখ্যার বাস জেলা জুড়ে। স্বভাবতই শিক্ষা, চাকরি, সংস্থান নানা কিছু থেকেই পিছিয়ে তারা। সরকার থেকে সমাজের মুলস্রোতে ফেরাতে যতটুকু সাহায্য তারা পান, তার অধিকাংশই রয়ে যায় মুলস্রোতের বিলিবন্টনকারীদের হাতে।
সরকারি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, প্রায় পুরাতন হতে চলা, ‘পরিবর্তন’ এর দিশারী’রা আদিবাসি উন্নয়নে এনেছে একগুচ্ছ প্যাকেজ। কিন্তু তা আদিবাসীদের অধিকাংশই ভোগ করতে পারেননা। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে সারা বাংলা সান্তাল কল্যান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার ছত্রছায়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার নানা প্রান্তের আদিবাসীরা মিছিলের মধ্য দিয়ে দাবী জানাতে ডেপুটেশন দেয় ডি এম এর কাছে। মিশন নির্মল বাংলা, বার্ধক্যভাতা দান, বা সজলধারা প্রকল্পের মত কয়েকগুচ্ছ প্রকল্পের বাস্তবায়নে ত্রুটি, এবং টাকার তসরুপ ও প্রশাসনিক ভাবে ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে আদিবাসীদের কাটাতে হচ্ছে সেই মধ্যযুগীয় জীবন। পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ের প্রত্যক্ষ প্রভাবের শিকার হচ্ছেন আদিবাসী ঘরের মেয়েরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে নিরাপত্তার অভাব। অন্যদিক মন জুড়ে ছেয়ে থাকা অশিক্ষার অন্ধকারের কারণে প্রতিনিয়তই লালসার শিকার হচ্ছেন যুবতী আদিবাসী মেয়েরা। নানাপ্রকারের লাঞ্ছনারও শিকার হচ্ছেন তারা। এদিক দিয়ে শিক্ষার দাবীকেও ভীষণ রকম ভাবেই জানান দিতে চান আদিবাসী গ্রামবাসীরা। এদিনকার ডেপুটেশনে আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলের দাবীও তোলেন তারা। যদিও হস্টেলের দাবীতে তাদের আন্দোলন বিগত সরকারের আমল থেকেই চলছে। ২০০৪ সাল থেকে চলা এই আন্দোলনের আংশিক জয়, হস্টেলের জমি দেখা শুরু করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি সাওতালি, অলচিকি ভাষাতে শিক্ষাগ্রহণের দাবীও তাদের দীর্ঘদিনের। সরকার তরফের সামান্য হেলদোলে সেই দাবীর মর্যাদা খানিক পূরণ হলেও, চাহিদামতো হয়নি মোটেও। যে সার্বিক বিস্তৃতি, তার তুলনায় পরিণতি যত টুকু মিলেছে, তা সামান্যই। জেলায় সব মিলিয়ে আদিবাসী গ্রাম প্রায় তিনশো। কম বেশি প্রত্যেক গ্রামেই গড় পঞ্চাশটি পরিবারের বাস। তাদের সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বাবা মার প্রত্যাশা শিক্ষাগ্রহন হোক অলচিকি ভাষাতে। কিন্তু নেই প্রয়োজনীয় স্কুল। নবগ্রাম ব্লকে সাতটি এবং সাগরদিঘী ব্লকে পাঁচটি স্কুল রয়েছে। কিন্তু নেই যর্থার্থ পরিকাঠামো। নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষকও। অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগেও বিশেষ তৎপরতা নেই সরকারী তরফে। তাই বঞ্চনা ক্রমাগত বাড়ছেই। পাশাপাশি হিন্দি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যাদের গর্জন প্রতিনিয়ত, অন্যান্য ভাষার স্বাতন্ত্র্যদানের দাবীতে যারা নিয়মিত সোচ্চার। বিশেষ দাবী তাদের তরফেও করা হয়নি। তাই ‘হুলমাহা’র শপথে নিজেদের লড়াই নিজেই জিতে নেওয়ার অঙ্গীকার জেলার আদিবাসীদের। বঞ্চনার প্রতিবাদে দাবী ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584