উত্তর দিনাজপুর,ইসলামপুরঃ-
বর্তমান সমাজে যখন চারিদিকে সাম্প্রদায়িক হানাহানি।জাতি ধর্ম নিয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ।তারই মাঝে এক অন্য ভারতকে জগতের সামনে তুলে ধরল উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর ব্লকের মাটিকুন্ডা গ্রাম।এই গ্রামের এক মৃত হিন্দু সম্প্রদায়ের মা ও তার জিবত পুত্রসম মুসলমান সম্প্রদায়ের কর্মচারী। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর ব্লকের মাটিকুন্ডা গ্রাম। এই গ্রামেই মমতা বাড়ুইয়ের হোটেল ‘বৌদির হোটেল’ নামে পরিচিত এলাকায়। বৌদির হোটেলের শুরুর থেকেই মমতা বাড়ুইয়ের কাছে বড় হচ্ছিল মহাম্মদ সেলিম নামের এক বালক। মমতা মায়ের হোটেলে মমতাদেবীর সাথে কাজে সাহায্য করতো সে। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে প্রায় ১৬ বছর। সেলিম এখন ২৪ বছরের যুবক। কিন্তু আচমকাই সেলিমের রোগাক্রান্ত মমতা মায়ের মৃত্যু হয় চলতি মাসের ২ তারিখ। আর সবাইকে অবাক করে সেলিম হিন্দু রীতি মেনে মমতার দাহ সংস্কার করা থেকে গুরুদশা পালন সবকিছুই করে।
মমতা দেবীর নিজের সন্তানও আছে। সে প্রায় সেলিমের বয়েসি। কিন্তু তা থাকলে কি হবে, মমতা মা যে নিজে সেলিমকে সব ধর্মকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে শিখিয়ে গেছে। শুধু সেলিমকে নামাজ পড়তে পাঠানো, মসজিদে যেতে শেখানো নয়। ঈদের নামাজের পরে নিজে হাতে যে সেয়ই এর পায়েস বানিয়ে খাওয়াতো মমতা। সেহেন সেলিম কিকরে পারে সব ভুলে যেতে। তাই মমতা মায়ের আত্মার শান্তির জন্য এ’কদিন নিয়ম মেনে নিরামিষ খাওয়া দাওয়া করেছে সেলিম। গত বুধবার মমতা দেবীর শ্রাদ্ধ শান্তিতেও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে প্রসেনজিৎ এর সাথে অংশগ্রহন করেছে সেলিম। করিয়েছে শ্মশানবন্ধু আত্মীয়দের খাওয়া দাওয়ার কাজও। সেলিমের নিজের মা, বাবা ওই এলাকাতেই থাকেন। সেলিমের মা সবিনা খাতুন জানিয়েছেন, ও ছোটো থেকে মমতার কাছেই বড় হয়েছে। ও নিজের মনের শান্তির জন্য করেছে। প্রথমে একটু আধটু আপত্তি এসেছিল আত্মীয় পরিজনের কাছ থেকে। কিন্তু সেলিমের অটল সিদ্ধান্তে পরাজিত হয়েছে তথাকথিত ধর্মগুরুরা।
তবে শনিবার বৌদির হোটেল প্রথমার্দ্ধে বন্ধ ছিল। কারন সেলিম ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিল যে। সেলিমের একটাই আক্ষেপ তার বৌদিমা এবার তার জন্য সেমাই এর পায়েস রাধেনি, এবার ঈদে সেলিমের কপালে বৌদি মায়ের হাতের বানানো পায়েস জোটেনি।
এখন মাটিকুন্ডা এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের সব মানুষ সেলিমকে আইকন করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী রক্ষার শপথ নিচ্ছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584