ঈপ্সিতা নায়ক
ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র সম্পর্কে মোটামুটি সকলেই অবগত। টক-ঝাল-মিষ্টি-নোনতা সব ধরণের ক্যাটাগরিতেই রকমারি খাবারের বাহার। এদের মধ্যে কিছু এমন রয়েছে যেগুলি ভারতীয়দের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু সেই সকল খাবার যে ভারতের একান্ত নিজস্ব নয় অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবে তারা ভারত বহিৰ্ভূত সেটা খাওয়ার সময় আমাদের মাথায় আসে না। জিভে জল ও মনে তৃপ্তি আনা সেই সকল খাবারের দিকে একবার নজর দেওয়া যাক!
প্রথমেই যে নামটা আসে তা একটি পানীয়, যেটা ছাড়া আমাদের দিন শুরু হয় না। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন- চা। লিকার চা, দুধ চা, মশলা চা, লেবু চা, বিভিন্ন রকমের ফ্লেভার্ড চা- যে রূপেই হোক না কেন চা কিন্তু মানুষের খুব কাছের ও প্রিয়। ব্রিটিশদের হাত ধরে চা আসে ভারতে। কিন্তু এই চা-এর অভ্যাস বেশি প্রচলিত ছিল চীনে। তাই চা-র গুণাবলী লক্ষ্য করে এবং ব্যবসায়িক লাভের আঙ্গিককে কেন্দ্র করে দেশে শুরু হল চা চাষ। আর এভাবেই ক্রমশ খ্যাতির শিখরে পৌঁছে গেল চা।
সিঙ্গাড়া যা বাংলা তথা ভারতের সব মানুষের খুব পছন্দের স্ন্যাক। এই ফেভারিট স্ট্রিট স্ন্যাক-এর উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে একাধিক মতবিরোধ। কেউ বলেন এটি একটি ইরানিয়ান খাবার। ইরানের সানবোসাগ নামক জায়গায় এর উৎপত্তি, এরপর সেন্ট্রাল এশিয়া হয়ে এটি প্রবেশ করে ভারতীয় খাবারের তালিকায়।
আবার কেউ বলেন মোঘলদের ভারতে আসার আগে দিল্লিতে যে সুলতানরা রাজত্ব করতেন তাদের সময়ে বানানো হতো সিঙ্গাড়া, তবে তার পুর হতো মাংসের। ষোড়শ শতকে পর্তুগিজরা ভারতে আলুর প্রচলন করলে সিঙ্গাড়া তৈরী আলুর পুর ব্যবহার করে। আর সেই সিঙ্গাড়াই আজকেও আমাদের রোজকার রসনাতৃপ্তি করে চলেছে।
সিঙ্গাড়ার সাথে বেশ জমেছে এক মিষ্টির জুড়ি। কোনো ময়রা এই মিষ্টান্ন তৈরী করে না তা হতে পারে না, শুধু ময়রা নয় পথ চলতি বিভিন্ন ফুডস্টল থেকে মেলা থেকে বড় রেস্তোরাঁ সব জায়গায় এই আড়াই প্যাঁচ সুপারহিট। আন্দাজ করতে পারছেন হয়তো। জিলিপি – আট থেকে আশির প্রিয় এই মিষ্টির আসল কৃতিত্ব কিন্তু পারস্যের। আরবি নাম তাকে ডাকা হতো জালাবিয়া। তুর্কীদের হাত ধরে এই মিষ্টি প্রচলিত হয় ভারতে, নতুন নাম পায়। আগে সংস্কৃতে একে কুন্ডলীকা নামে ডাকা হতো। পরে তার নাম হয় জিলিপি।
আরও পড়ুনঃ সামার কেয়ার – ব্যবহার করুন এই ৫ ভার্সেটাইল ইনগ্রেডিয়েন্ট
দক্ষিণ ভারতের আর এক খুব পরিচিত খাবার হল সাম্ভার। ইডলি হোক বা দোসা সাম্বার ছাড়া কিন্তু একেবারেই জমে না। ইডলির আবির্ভাবের ৫০০-৬০০ বছর পরে এটির আবির্ভাব হয়। মারাঠা সম্রাট শাহুজি কোকাম দিয়ে তৈরী পদ আমতি খেতে খুব পছন্দ করতেন।
কিন্তু কোনো কারণে কোকাম-এর যোগান কমে যাওয়ায় তেঁতুল ব্যবহারের পরামর্শ দেন সভাসদরা। তার পরেই ডাল, সবজি ও তেঁতুল দিয়ে তৈরী হয় সাম্ভার। সম্রাটের এক আত্মীয় সাম্ভাজি তখন উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিই প্রথম পদটি চেঁখে দেখেন। তাঁর নামেই নামকরণ করে পদটির নাম রাখা হয় সাম্ভার।
আরও পড়ুনঃ দশ মিনিটে ডিটক্সিফিকেশন- প্রাচীন এই আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি আপনাকে করবে রোগমুক্ত
অবশেষে রয়েছে শেষ পাতের ডেসার্ট। গুলাব জামুন বা গোলাপজাম- অতি লোভনীয় মিষ্টান্নের মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এর উৎপত্তিও ভারতে নয় সুদূর পারস্যে। বলা হয় সেখানকার রাঁধুনিরা চিনির রসের মধ্যে গোলাপ ফ্লেভার যোগ করতেন। তাই নামে গোলাপ শব্দটি প্রাধান্য পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিচিত ও প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকা এই গোলাপজামের আবিষ্কার হঠাৎ করেই করেন শাহ জাহানের পাচকরা, এমন ধারণাও রয়েছে অনেকের। তবে কারণ যা-ই হোক, এর জয়জয়কার এখন সর্বত্র।
এগুলি ছাড়াও নান, বিরিয়ানি, পাও ভাজি এই সমস্ত প্রিয় খাবারগুলি কোনো না কোনোভাবে ভারতের বাইরে থেকেই এদেশে এসেছে। আর সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় খাবারের তালিকায় অনতিরভুক্ত করেছে নিজেদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584