পরকীয়ার বৈধতা ≠ সমানাধিকার

    0
    109

    আবুল খায়ের

    বেশ কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা।ভাঙন তখন গিলে খাচ্ছে মুর্শিদাবাদকে।গ্রামের পর গ্রাম স্কুল হাসপাতাল তলিয়ে যাচ্ছে ভাগীরথী পদ্মার লক লকে জিহ্বায়।ভাঙ্গন শুধু অর্থনৈতিক ভাবেই বিপর্যস্ত করেনি তার সর্বগ্রাসী থাবায় ধ্বসে গেছে সম্পর্কের বাঁধনও।এই সময়ে পাচার হওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতায়।উদ্ধার হওয়া কিশোরীর জন্মদাতা পিতাই তাকে বিক্রি করে দিয়েছে পাচারকারীদের নিকট বলেই অভিযোগ। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে পতিতালয় থেকে উদ্ধার হওয়া সেই কিশোরী কিছুতেই বাড়ি ফিরতে চাই না।সমাজ বিজ্ঞানের পুস্তকে লেখা সামাজিক বাধা বা ইত্যাদি ইত্যাদি নয় তার বাড়ি না ফেরার পশ্চাতে যে যুক্তির অবতারণা সে করলো সেদিন অনেকের মতো আমিও চমকে উঠেছিলাম।

    সেই কিশোরী বলে উঠল আমি ফিরে যেতে চাই পতিতালয়ে কারন সেখানে দুবেলা পেট ভরে খেতে পায়,লজ্জা নিবারণের পোষাক পায়।বিনিময়ে মেলে দিতে হয় শরীর।সে তো এখানেও তার শরীর খুবলে খায় কত জন কত নামে কিন্তু তবুও এখাানে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের জন্য প্রতি মূহূর্তে কাটাতে হয় অনিশ্চয়তায়।দুটি অনিশ্চয়তার মধ্যে তুলনামূলক বিচারে আপাত নিশ্চিয়তাকেই সে বেছে নিতে চেয়েছে।সেদিন আমারও সদ্য যৌবনে পদার্পণ,প্রশ্ন জেগেছিলো মনে কি দরকার রাষ্ট্র সমাজ প্রশাসনের এতো আয়োজনের যেখানে একজনের অন্ন বস্ত্রের জন্য বিলিয়ে দিতে হয় নিজের সব কিছুকে।আজ যখন পরকীয়ার বৈধতার স্বীকৃতিতে সমানাধিকারের প্রসঙ্গ নিয়ে এতো আলোচনা পর্যালোচনা তখন আমার মনে পড়ে গেলো ডাগর চোখের সেই কিশোরীকে।তারপর কি হয়েছিলো আমার জানা নেই।কিন্তু অর্থনৈতিক স্থায়িত্বহীনতা তাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে কে জানে।

    ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারার বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে নাগরিকের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন এ বিষয়টি প্রশ্নাতীত।স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে স্ত্রীর পরকীয়া সমর্থন যোগ্য।অর্থাৎ স্ত্রীর শরীর মালিক স্বামী এই বৈষম্যের অবসানে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করে সমাজকে আরো পরিনত করবে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই।কিন্তু শুধু আইনের মাধ্যমে পাওয়া শরীরের অধিকার কি পারবে সমানাধিকার এনে দিতে?ওই যে কিশোরীর কথা দিয়ে শুরু করলাম সে ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারনের তাগিদেই ভেসে গেছে,অধিকারের দাবী নয় প্রয়োজন তাকে দাঁড় করিয়েছে বাস্তবের মুখমুখি।

    আরও পড়ুনঃ পরকীয়া আর অপরাধ নয়ঃ সুপ্রীমকোর্ট

    তাই সার্বিক ভাবে এই আইনকে স্বাগত জানালেও মনে প্রশ্ন থেকেই যায়।নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া ব্যক্তি স্বাধীনতা শরীরের স্বাধীনতা অনেকটা আকাশ কুসুমের মতোই শোনাবে।ফলে সমানাধিকারের প্রশ্নে আগে প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সুনিশ্চিতকরন।

    পরকীয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়,স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নয় এই বিধানে দীর্ঘদিনের চলে আসা অন্যায় অবসানের একটি পদক্ষেপ হলেও তা সমনাধিকারকে সুনিশ্চিত করবে কিনা তা ভবিষ্যতই বলবে।কিন্তু সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ভাবে প্রতি মূহুর্তে নিষ্পেষিত শোষিত এদেশের অধিকাংশ নারী আজও অশিক্ষার অন্ধকার কানাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।আজও তাদের কাছে পতি দেবতা,পতির পদসেবা স্বর্গ লাভের সিঁড়ি তাদের কাছে এ বিধান কি অনুরণন তুলবে?ফলে নারীকে মনুষ্যত্বের সম্মানে উন্নীত করতে আমাদের আরো অনেক পথ চলা বাকি।

    (নিবন্ধকার পেশাগতভাবে নিউজফ্রন্টের সম্পাদক।মতামত ব্যক্তিগত)

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here