নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক দিক মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের বাগানের সবজি দিয়েই মিড ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। নিজেদের হাতে লাগানো সবজির গাছ থেকেই সবজি সংগ্রহ করে মিড ডে মিলের তরকারি হচ্ছে। সেই তরকারি দিয়েই স্কুলে মিড ডে মিল সারছে পড়ুয়ারা।
শালবনীর মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ অভিনব এই কাজে পথ দেখাচ্ছে অন্যান্য বিদ্যালয়গুলিকেও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর মৌপাল ভাদুতলা পিড়াকাটা রাজ্য সড়কের পাশেই রয়েছে এই বিদ্যালয়। পিছিয়ে পড়া এলাকার এগিয়ে যাওয়া একটি বিদ্যালয় এটি। খেলাধুলা, পঠনপাঠন, পড়ুয়াদের নিয়মানুবর্তীতায় জেলার নামকরা বিদ্যালয়গুলিকেও হার মানিয়ে দেয় দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ।
এই বিদ্যালয়েই এবার শুরু হল সবজি চাষ। বিদ্যালয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারশো ছাত্রছাত্রীর রান্না, সঙ্গে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের ১৪৫ জন ছাত্রের রান্না করতে বিপুল পরিমাণে সবজি কিনতে হয়। খরচও হয় বিপুল। তার উপর সবজির বাজার এখন অগ্নিমূল্য। এই সমস্যার সমাধান করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডঃ প্রসুন কুমার পড়িয়া এক অভিনব পন্থা আনলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে গঠন করেন বাগান উপসমিতি।
শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষক দেবব্রত সাঁতরা এই উপসমিতির কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের জমিতে শুরু করলেন সবজি চাষ। লাউ, খসলা, পালং শাক, নটে শাক, লাল শাক, বেগুন, বাঁধাকপি, ওলকপি, কাঁচকলা, গাজর , বীট সঙ্গে পেঁয়াজ–কী নেই এই বাগানে। তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা আর বাগান উপসমিতির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইতিমধ্যেই সেই বাগান থেকে পরিশ্রমের ফসল পেতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ কালিয়াগঞ্জে তরঙ্গপুরে দুই দিনব্যাপী জেলা উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা
এই সবজি বাগান থেকেই এখন সপ্তাহের তিন-চারদিন অনায়াসেই বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল এবং ছাত্রাবাসের ছাত্রদের খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডঃ প্রসুন কুমার পড়িয়া জানান, বাজার থেকে আমরা যে সবজি কিনে আনি তার যেমন প্রচুর দাম, তেমনই সেই সবজি সব সময় টাটকা পাই না।
এছাড়াও সেই সবজি বিভিন্ন রকম রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়, যা আমাদের শরীরের পক্ষ খুবই ক্ষতিকর। সেই কারণেই আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই সবজি বাগান করার চিন্তা ভাবনা করি। এতে যেমন অর্থের সাশ্রয় হয়ে তেমনই টাটকা ও সতেজ সবজি পাই।
জানা গেছে, প্রথম বছরে প্রতিদিনের এই সবজি দেওয়া যাচ্ছে না৷ তবে আগামী দিনে বিদ্যালয়ের সবজি বাগানের সবজি দিয়েই পড়ুয়াদের রান্না করে খাওয়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই বাগান তত্ত্বাবধান করছেন দেবব্রত সাঁতরা। তিনি জানান, সবজিতে আমারা কোনও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করি না। ফলে বিষ মুক্ত সবজি পাই।
আরও পড়ুনঃ উত্তরবঙ্গ উৎসব শুরু হল কোচবিহারে
তিনি আরও জানান যে প্রায় কয়েক কাঠা জমির উপর এই সবজি বাগান আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই দেখাশোনা করে। প্রয়োজন পড়লে ছাত্রছাত্রীদের এবং জাতীয় সেবা প্রকল্পে যে সব ছাত্রছাত্রী আছে তাদের সাহায্য নেওয়া হয়। বিকেলের দিকে ছাত্রবাসের ছাত্ররা এই বাগান দেখাশোনা করে প্রয়োজন মতো।
বিদ্যলয়ের এই অভিনব উদ্যোগে খুশি বিদ্যালয়ের অভিভাবক অভিভাবিকারা। তাদের বক্তব্য, বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলে মেয়েরা তো অন্ততপক্ষে সতেজ এবং বিষ মুক্ত সবজির তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে আসছে। অন্যদিকে মৌপাল বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জঙ্গলমহলের অন্যান্য বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষকরা। তাঁরা জানান এই উদ্যোগ আমাদের পথ চলার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584