পল্লব দাস,বহরমপুরঃ
ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পে মুর্শিদাবাদ জেলাটি অনেক প্রাচীন কাল থেকেই প্রসিদ্ধ।নবাবী আমলে গজদন্ত শিল্পে প্রসিদ্ধ ছিল এই জায়গা।তবে এখন তা নেই,বনদফতর আর সরকারি আরক্ষনের জন্য দুষ্প্রাপ্য হাতির দাঁত।তবে শোলা শিল্পে জেলার খ্যাতি রয়েছে আজও,অনেকে মনে করেন হাতির দাঁত শিল্পীরাই পরবর্তীতে শোলা শিল্পের দিকে এসেছেন কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কতখানি যুক্তি সঙ্গত।অনেক প্রাচীন কাল থেকেই হিন্দু দেবদেবীর সাজ তৈরিতে শোলার গহনা ছিল অন্যতম তাছাড়া টোপর,শোলার কদম ব্যাবহার অনেক দিনের।
পুজো আসছে তাই বাঙালির সেজে উঠতে চলেছে ,ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দম ফেলার ফুরসত নেই শোলা শিল্পীদেরও।প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে যেমন জোর কদমে তেমন চলছে প্রতিমা সাজানোর জন্য শোলা নির্মিত বিভিন্ন গহনা,ফুল, মালার সাজ ।আগে শোলা শিল্পীরা টোপর, কল্কা, ঠাকুরের গহনা,কদমফুল, চাঁদমালা ইত্যাদি তৈরি করত এখনো দক্ষিণ ২৪ পরগনা ,মালদহ সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে শোলা শিল্প প্রসার ঘটেছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় বেশ কিছু শোলা শিল্পী আছেন যাঁরা এই জেলার খ্যাতি বাড়িয়েছেন।এমন একজন শিল্পী হলেন সমীর সাহা,উনি বহরমপুর শহরের বাসিন্দা অনেক ছোটো বয়স থেকে এই কাজ করছেন তবে কখনো ভাবেননি যে এই শোলা নির্মিত নৌকো আর হাতি ওনাকে এতো খ্যাতি সম্মান এনে দেবে।জাতীয় পুরস্কার পান ২০০৬ সালে।শিল্পী জানান নেপথ্যে কাজ শেখান বেশ কিছু তরুণকে নিজের বাড়িতে ওয়ার্কশপ করেন।শোলা শিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কথা বলার সময় তিনি জানান ভালো মানের শোলা পাওয়া গেলে কাজ আরো ভালো করা সম্ভব ।
শোলা উৎপাদন ক্রমশ কম হয়ে যাচ্ছে ফলে যারা শোলা সাপ্লাই দেয় তাদের পারি দিতে হচ্ছে ভিন রাজ্যে,তাই বাড়ছে মূল্য।জলাজমি কমে যাওয়ায় শোলা গাছের সহজ লভ্যতা কমে এসেছে তারপর ভরাট হচ্ছে জলাশয় সব মিলিয়ে শিল্পীদের ঐতিহ্য হারাচ্ছে শোলা।
এই অবস্থায় শোলার জন্য পাড়ি দিতে হয় বিহারের ভাগলপুরে , কিষাণগঞ্জে।অনেকে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে শোলা সংগ্রহ করেন।অসম্ভব খাটুনি এই কাজে।ঝুঁকি নিয়ে শোলা সংগ্রহ করেও লাভ হচ্ছে না চাষীদের।কমছে চাষী ও বিক্রেতার সংখ্যা।এই অবস্থায় শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য চায় সাহায্যের হাত ।
সমীর সাহা বলেন “শোলার তৈরি দ্রব্য প্রতিদিন কেনার জিনিস নয় তাই ব্যাবসা বা মার্কেটিং করা
একটু টাফ।” এই জেলায় রয়েছেন আরো কিছু শোলা শিল্পী আশিস দাস, সন্দীপ দাস আছেন ধূলিয়ানের আর এক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী পার্থ মালাকার।শোলার শিল্পী,ক্রেতা বিক্রেতা সকলেরই আবেদন, বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুক সরকার।অন্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।তবেই বেঁচে থাকবে বাঙালির বহু পুরোনো এই ঐতিহ্য।
আরও পড়ুনঃ রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় দিল্লি সরকারে ধোকড়ার চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584