বেআইনিভাবে হকার উচ্ছেদ ও ঝুপড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শিয়ালদহে
– মূর্ছনা পান্ডা (People’s Brigade – এর সদস্য)
রবিবার, ৮ই অক্টোবর শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে জড়ো হল সল্টলেক থেকে সদ্য উচ্ছেদ হওয়া হকার ও ঝুপড়িবাসীরা। যুব বিশ্বকাপের নাম করে পুজোর আগে থেকেই গোটা সল্টলেক জুড়ে ঝুপড়ি ও হকার উচ্ছেদ শুরু হয়েছে, বেশ কতগুলি বস্তি উচ্ছেদ হয়ে গেছে এবং আরও অনেকগুলি বস্তি উচ্ছেদের পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের।
এই ন্যাক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে হকার সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে রবিবার শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে বিক্ষোভ ও মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। অন্যান্য আরও সংগঠনের পাশাপাশি People’s Brigade -কেও তারা ডাকে ও আমরা সেই কর্মসূচীতে সম্পূর্ণ সক্রিয় ভাবে অংশ নিই। বিরাট পুলিশবাহিনী ব্যারিকেড করে বিক্ষোভকারী দের শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর ছাড়তে না দেওয়ায় ব্যারিকেডের সামনেই স্লোগান দিতে থাকেন হকাররা। ক্ষোভ উগরে দেন সরকারের পুলিশ বাহিনীর ওপর, বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
যুব বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগে তৃণমূল সরকারের ক্যরিশ্মা দেখাতে সল্টলেক সহ কলকাতার লাগোয়া এলাকা জুড়ে পুজোর আগে থেকেই ঝুপড়ি ও হকার উচ্ছেদ করে চলেছে সল্টলেক ও বিধাননগর পৌরোসভা। একদিকে দারিদ্র ঢাকতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হোর্ডিংয়ে ব্যানারে দেওয়া হবে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী থেকে শুরু করে নানান উন্নয়নের ধাপ্পাবাজির ফিরিস্তি। অপরদিকে গরিবী হঠাতে সম্পূর্ণ অপারগ এই রাজ্য প্রশাসন গরিবদের কেই হঠিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এটা জানা কথা যে, যে দেশই অলিম্পিক, বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতা গুলির আয়োজন করে তারা সকলেই দারিদ্র আড়াল করবার এহেন কুৎসিত পন্থা অবলম্বন করে, কিন্তু যুব বিশ্বকাপ তো মোটে এক মাস ধরে চলবে তার কয়েকটি মাত্র ম্যাচ হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে, তার জন্য গোটা সল্টলেক জুড়ে সব হকার আর বস্তি উচ্ছেদ কেন?
এ জল্পনার জট কাটিয়ে খোদ বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, শহর সৌন্দর্যায়নের জন্যই হকার ও ঝুপড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফলত বিশ্বকাপের পরও তাদের সেখানে আর থাকতে দেওয়া হবে না।
একাজ আদৌ কোনো সরকার আইনত করতে পারে কিনা সেদিকে দেখা যাক,
FIFA-র মানবাধিকার সংক্রান্ত দলিলে এ কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা রয়েছে যে তাদের কোনো প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে কোনো বেআইনি উচ্ছেদ করা যাবে না। তাহলে বিশ্বকাপের আছিলায় তৃণমূল সরকার এই তান্ডব কি করে করতে পারে?
হকার সুরক্ষা আইন, ২০১৪ অনুযায়ী টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি করে তা দিয়ে সমীক্ষার পর প্রতিটি হকারকে পরিচয় পত্র প্রদান করার আগে কোনো হকারকে তার জায়গা থেকে সরানো একেবারেই বেআইনি। অথচ একাজ না করেই দমদম বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গোটা সল্টলেক, ইস্টার্ন বাইপাস, বেলেঘাটা জুড়ে হকার উচ্ছেদ চলছে পুরোদমে।
গরীব ঝুপড়ি বাসীদের ক্ষেত্রে প্রশাসনের যুক্তি, তারা নাকি সরকারী জমি জবরদখল করে থাকছেন, তাই তাদের পুনর্বাসনের কোনো প্রশ্নই নেই। অথচ এই ঝুপড়িবাসীদের বেশিরভাগই সল্টলেকের আদি বাসিন্দা, যাদেরকে উচ্ছেদ করেই তৈরি হয়েছে আজকের হাই ফাই সল্টলেক সিটি। এছাড়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা (ECOSEC) এবং বিবিধ মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বলা হয়েছে, কোনো রকম বলপূর্বক উচ্ছেদ তো করা যাবেই না বরং প্রতিটি মানুষের আস্তানার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।
‘পূনর্বাসন ছাড়া জীবন-জীবিকা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না’- এরকম মানবদরদী বুলির ঝুলি নিয়ে যারা সরকারে এসেছিল এখন সেই তৃণমূল সরকারের জমানায় গরীব মানুষের জীবন জীবিকার উচ্ছেদ রোজকার ঘটনা হয়ে উঠেছে। ফুটবলের নামে গরিবের পেটে লাথি মারার বিরুদ্ধে প্রায় হাজারে হাজারে মানুষ প্রতিবাদ করছেন।
(বক্তার বক্তব্য একান্তই নিজের-এর জন্য নিউজফ্রন্ট কতৃপক্ষ দায় নেবে না।)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584