বিশ্বায়নে বলি হাজার বছর পুরোনো বাংলার পুতুল নাচ

0
423

পল্লব দাস,বিশেষ প্রতিবেদনঃ

পুতুলের সাথে মানুষের সখ্যতা অনেক দিনের।
ছোটো বেলা পুতুল নিয়ে খেলেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বোধহয় একটু কঠিন। প্রাণহীন পুতুলকে সচলতা প্রদান করা সেই বহুকাল থেকেই মানুষের ইচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা উঠে এসেছিল এক লোকনাট্য ধারা হিসেবে ‘পুতুল নাচ’।বিদেশে একে বলে ‘পাপেট ‘, এর সৃষ্টি সম্পর্কে সঠিক করে বলা যায় না।

ছবিঃপ্রতিবেদক

এক সময় গ্রাম বাংলা তোলপাড় করে ছিল পুতুল নাচ দল গুলি। শুধু কচিকাঁচা নয় সব বয়সের মানুষের কাছেই এটি ছিল সমান জনপ্রিয়।
বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক মনরঞ্জনের পন্থা আর উপকরণ এসে যাওয়ায় আমাদের লোক সংস্কৃতির অনেক গুলি ধারা হারিয়ে যাচ্ছে।একসময় গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে পুতুল নাচ ,বায়েস্কোপ,পালাগান প্রভৃতি ছিল মনরঞ্জন এর প্রধান উপকরণ।পুতুল নাচের দল গ্রামের মেলা উৎসব গুলিতে অনুষ্ঠান করতে আসত,দশ থেকে পনেরো দিন এরা পুতুল নাচ পালা চালাতো।কখনো ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ কখনো ‘মোল্লা নাসিরউদ্দিন’ এর গল্প আবার কখনো নেহাত সামাজিক পালা ও হাস্যরস দিয়ে দর্শক দের সমাদর পেয়েছে দলগুলি নদীয়া মুর্শিদাবাদ অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ষাট খানা পুতুল নাচ এর দল ছিল ।আজকে সেই সংখ্যা কমতে কমতে পনেরো কুড়িটিতে পৌঁছেছে। ডায়মন্ড হারবার থেকে কিছুটা দূরে ফলতা এই জায়গার বেশ পুরোনো একটি পুতুল নাচের দল ‘যদুনাথ হালদার পুতুল নাচের দল।’এই দলটির প্রধান অসীম কুমার হালদার প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সাথে যুক্ত বলে জানান, বাপ ঠাকুর্দার পারম্পরিক এই পুতুল নাচের দলের বিষয়ে তিনি জানান,’ প্রায় তিনশ বছর পুরোনো এই দল,বর্তমানে বায়না কম হচ্ছে আগের মতো বুকিং আর হয়না তবে চলছে কোনো রকমে পুজো পার্বন মেলা অনুষ্ঠানে এখনও ডাক পাই।’যদিও কিছু মানুষ এখন ও পুতুল নাচ কে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাদের জন্য কাজ করছেন বলে জানান অসীম হালদার।
সাধারণত বাংলায় চার ধরনের পুতুল দেখা যায়
সুতা বা তার পুতুল , লাঠি পুতুল ,বেণী পুতুল ও ছায়া পুতুল।ছায়া পুতুল এদেশে তেমন লক্ষ্য করা না গেলেও ‘ হাত পুতুল ‘ ব্যাবহার প্রায় দেখা যায়।নেপথ্যে যারা পুতুল নাচান তারাই পরিচালক।এছাড়া থাকে যন্ত্র শিল্পী আলোক শিল্পী যারা গোটা মঞ্চ সাজিয়ে উপস্থাপনা করেন সমস্ত পালাটা।
পুতুল তৈরিতে কাঠ কেই এগিয়ে রাখছেন পুতুল নাচ শিল্পীরা। শিমুল ও জগডুমুর কাঠের তৈরি পুতুল হয় মজবুত,তবে থার্মোকল এর পুতুল ও টেকসই হয় আর এখন নানা আধুনিক জিনিস দিয়ে বানানো হচ্ছে পুতুল।

ছবিঃপ্রতিবেদক

বর্তমানে যাঁরা এই পুতুল নাচের সাথে জড়িত আছেন তাঁরা জানাচ্ছেন,নতুন করে এই পেশায় নতুন করে কেউ আর আসতে চায়ছেন না;মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পরিবারের লোকও।পেট চালানোর জন্য অন্য পেশায় যুক্ত হতে হচ্ছে।আজ এই দুর্দশার দিনে সরকার থেকে সাহায্য পেলেও আগের মতো দিন এ ফেরত যাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানান পুতুল নাচের শিল্পীরা।কিছু সাধুপ্রয়াসে এখনো আধুনিকতার মিশ্রনে দাঁড়াচ্ছে এই প্রাচীন ঐতিহ্যবহ শিল্প।

আরও পড়ুনঃ আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here