নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
বেশ কিছুদিন হল দর্শক দরবারে আসছেন না টেলিভিশনের ব্যস্ত অভিনেতা রাজ ভট্টাচার্য। ‘সর্বমঙ্গলা’ এবং ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকে চলছিল তাঁর ট্র্যাক। দুই জায়গা থেকেই তিনি নিয়েছেন ছুটি। তা হলে কোথায় গেলেন রাজ?
খোঁজ নিতে ফোন ঘোরালে রাজ জানালেন যে তিনি এই মুহূর্তে ব্যস্ত তাঁর বারাসাতের ‘কামাখ্যা বালক আশ্রম’ নিয়ে। রাজের বাবা মাধব ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য বর্ষীয়ান সদস্যদের হাত ধরে গড়ে ওঠে এই অনাথ আশ্রম। সেখানে অনেকটা সময় কাটান রাজ। ছেলেবেলাটাও অনেকটা ওখানে কেটেছে আশ্রমের ছেলেদের সঙ্গে হেসে, খেলে। এখনও শুটিঙের ফাঁকে সেখানেই যান রাজ। ছুটি থাকলে ওখানেই কাটান বাচ্চাদের সঙ্গে।..
রাজের পূর্ব পুরুষ পূর্ববঙ্গীয়। ওপার বাংলা থেকে এখানে চলে আসার পর পুনর্বাসন নিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাঁদের৷ ফলে, তাঁরা জানেন বাসস্থান না থাকার যন্ত্রণা। বারাসাতে গড়ে তোলেন এই আশ্রম।
রাজের কাছ থেকে জানতে চাইলাম তাঁর আদরমাখা কামাখ্যা বালক আশ্রমের কথা। রাজের কথায়- “বাবা, জেঠুদের ইচ্ছে ছিল মানুষের জন্য কিছু করব। গরিবদের শিক্ষা আর পুষ্টি দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই গড়ে তোলেন ‘কামাখ্যা বালক আশ্রম’।
কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এই বালকাশ্রম যাত্রা শুরু করে ৬ জন বাচ্চাকে নিয়ে। এখন এখানে ৬৪ জন থাকে। আগে ছেলেরাই থাকত। এখন মেয়েরাও থাকে এখানে। ১৬ বিঘা জমির উপর এই আশ্রম৷ বাবা নানা সময়ে একটু একটু করে জমি কেনেন। আর সেই জমিই কাজে লাগান এই আশ্রম গড়ে তোলার কাজে।
আরও পড়ুনঃ বাবার পথে দুই রাঘবকন্যা, ‘পরম্পরা’ নিয়ে এল আশা অডিও
আমাদের একটা ইটভাটা ছিল। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ বাবা ব্যয় করতেন এই আশ্রমে। এখন অবশ্য সেই ইটভাটাটি নেই আমাদের। আমরা কোনও সরকারি সাহায্য পাই না এই আশ্রমের জন্য। সহৃদয় ব্যক্তিদের সহায়তাতেই চলে এই আশ্রম। অনেকে অনেক বাচ্চার সব খরচ জোগায়। কেউ কোনও দুপুরের খাবারের দায়িত্ব নেয়। কেউ কারো জন্মদিন এখানে এসে কাটায় ওদের সঙ্গে। ওদের খাওয়াদাওয়া করায়। এভাবেই চলে ‘কামাখ্যা বালক আশ্রম’।
কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেককে নিজেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাদের হয়ত বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে কেউ একজন আছে। অনেকের নিজেদের কোনও আস্তানা নেই থাকার। তারা আশ্রমেই ছিল লকডাউনে। যারা নিজেদের বাড়িতে গেছিল তারা অনেকেই পেট চালাতে কেউ টোটো চালাচ্ছিল কেউ বা অন্যান্য কাজ করছিল। কারণ তাদের সংসার অচল। বাবা হয়ত রিকশা চালক, মা হয়ত নেই। আবার কারো মা লোকের বাড়িতে কাজ করে তার বাবা হয়ত পাগল কিংবা নেই।
এই সব কারণেই তাদের বাচ্চারা থাকে আমাদের আশ্রমে। ওই সব বাচ্চাদের আবার ফিরিয়ে এনেছি আশ্রমে৷ যারা বাচ্চাদের দায়িত্ব নিত তারাও এই লকডাউনে দায়িত্ব নিতে পারেনি। অনেকে নিজেই পড়েছেন সমস্যায়। ফলে, অন্যদের দায়িত্ব নেবে কী ভাবে। সেই কারণে আশ্রমও খানিকটা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন। ডি এম থেকে রেশনের ব্যবস্থা করেছে। তাই দিয়েই চলছে আপাতত। আমাদের একটা ডি.এড কলেজ আছে।
সেখান থেকেও খানিকটা খরচ উঠে আসত। এখন এই পরিস্থিতিতে সেটাও বন্ধ। বাচ্চারা এখানকার অবৈতনিক স্কুলে পড়াশুনা করে। শিক্ষকদের টাকা দেয় আশ্রম। বাইরে থেকে যারা এই স্কুলে পড়েতে আসে তাদের কাছ থেকেও মাইনে নেওয়া হয় না স্কুলের। ক্লাস এইট অবধি এখানে লেখাপড়া করার সুযোগ আছে। এরপর মাধ্যমিক স্তরে অন্য একটি স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের আশ্রমের একজন এখন বি.কম পড়ছে। সে মাত্র ১০ মাস বয়সে এসেছিল এখানে। সে আশ্রমেই থাকে। আমাদের আশ্রমে ৭-১৮ বছর বয়স অবধি ছেলেমেয়েদের রাখার অনুমতি আছে। কিন্তু ওই ছেলেটি এখনও আছে এখানেই। সে আশ্রম ছেড়ে যায়নি।”
কামাখ্যা বালকাশ্রমের সাংস্কৃতিক দিকটিও বেশ শক্তপোক্ত। নাচ, গান, আঁকা, নাটক সবই পারে তাঁরা। রাজ নিজেও নাটকের তালিম দেন ওদের৷
রাজ জানান- “এখানে অনেকেই অনেক হাতের কাজ জানে। কেউ খুব ভাল আঁকে, কেউ মূর্তি বানাতে পারে আবার পুজোও করতে পারে। আমাদের পরিকল্পনা আছে অর্গ্যানিক কিছু জিনিস বানিয়ে আশ্রমটিকে স্বাবলম্বী করে তোলার। হাতের কাজও হতে পারে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ।”
আরও পড়ুনঃ হলকর্মীদের তহবিল দিতে উদ্যোগী ‘ইম্পা’
জানতে চাই ট্রাফিক হতে যাওয়া বাচ্চাদের কি রাখা হয় এখানে? জানা যায়, একবার কুড়ি জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাদেরকে রাখা হয়েছিল কিশলয় আবাসনে। রাজের আবেদন সেই সব মানুষদের কাছে যাঁরা সাহায্য করতে সক্ষম তাঁরা যেন এগিয়ে আসে এই আশ্রমের পাশে।…
একটু সামলে নিয়েই কাজে ফিরবেন রাজ, জানালেন নিউজ ফ্রন্ট-কে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584