ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতাঃ ড: কুণাল সরকার

    0
    158
    ড: কুণাল সরকার

    ধর্মকে সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত করা সহজ নয়। আক্ষরিক অর্থে বলা হয় ধারণ থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি। ধর্ম সৃষ্টিকে ধারণ করে রয়েছে। কথাটি সত্যি ও বটে। যদি এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি লোক নিজ নিজ ধর্ম পালন করে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সৃষ্টি রক্ষিত হয়। যেমন শিক্ষক তার শিক্ষাদানের ধর্ম, চিকিৎসক তার চিকিৎসার ধর্ম, কৃষকের ও ফসল উৎপাদন, শ্রমিকের উৎপাদনের ধর্ম ইত্যাদি। যদিও উপরের উদাহরণ গুলো পেশার সাথে যুক্ত। কিন্তু মানুষের ধর্ম তো কাজের সাথেই যুক্ত। স্বয়ং ভগবান তো বলেছেন মনুষ্যের মনোযোগ কেবলমাত্র কাজেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। ফল যা দেবার তিনি দেবেন, কাজের অনুপাতে ঠিকই দেবেন কেননা কথায় আছে What God does He does for the Best. সব কিছু এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন God does not make man but Man makes God. ভগবান আমরা তৈরী করলাম। কেননা মানুষ কে পাপ পুণ্যের ভয় দেখিয়ে, পর জন্মের ভয় দেখিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শোষণ করবার জন্য একটা মিথ এর প্রয়োজন ছিল। আর এই মিথই হল আজকের ভগবান। দুর্বল আর্থ সামাজিক পরিকাঠামো, সমাজের বৃহৎ অংশের মানুষের চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের অসমর্থতা ঢাকতে ঈশ্বর ইউটোপিয়ার কাজ করতে শুরু করলেন। আদিম যুগে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের হাত থেকে রক্ষা পেতে যেভাবে অসহায় মানুষ নিজেকে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। আর এই মানুষের তৈরি ঈশ্বর কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ধর্ম হয়ে গেল নিছকই ধর্ম যেখানে আমরা আর মানুষ থাকলাম না, হয়ে গেলাম নিছকই হিন্দু, মুসলমান,, খ্রিস্টান, জৈন, বুদ্ধ ইত্যাদি। যদি এখানেও ধরে নেওয়া যায় মানুষের এই আলাদা ধর্ম গুলি দরকার তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কাজ, শক্তি এবং খাদ্যের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজন। এই প্রয়োজন গুলো কি একজন বিচ্ছিন্ন হিন্দু বা বিচ্ছিন্ন মুসলমান হিসেবে পূর্ণ করা সম্ভব? আমি আমার উদাহরণ দিয়েই বলি আমি একজন ঐ হিসেবে হিন্দু পরিবারের সন্তান, কিন্তু ছোটবেলায় যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সেখানে অধিকাংশ সহপাঠীই ছিল মুসলিম। আবার পরবর্তীতে পড়াশোনা করেছি এবং প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছি রেশম চাষ নিয়ে পড়াশোনা করে, কিন্তু আমাদের রাজ্যে যারা রেশম চাষ করে তার শতকরা আশি ভাগই মুসলিম।

    সংগৃহীত ছবি

    এখন আমি যে বিদ্যালয়ে পড়িয়ে আমার সংসার চালায় সেখানে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম ছাত্র। অর্থাৎ নিছক হিন্দু হিসেবে আমি বিচ্ছিন্নই। আবার একথা বিপরীত ভাবে একজন মুসলিম বা একজন খৃস্টান প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছে ও প্রযোজ্য। তাই কাজের জন্য, টিকে থাকার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য সবাইকে ধর্ম নিরপেক্ষ হতেই হয়।এই সরল সত্য অনুধাবন করার জন্য এই একবিংশ শতাব্দী, এই শক্তিশালী বিজ্ঞানের জয় যাত্রা যথেষ্ট নয় তা চারপাশ দেখলেই বোঝা যায়।

    ফিচার ছবি সংগৃহীত 

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here