খালিদ মুজতবা,মুর্শিদাবাদঃ
ধূ ধু রোদের মধ্যে নদীর কূল তখন কাঁচা আলকাতরার গন্ধে ম ম করছে। সদ্য তৈরি হওয়া কুশা নৌকাটি শুকাতে দেওয়া রয়েছে রোদে। বেশ কিছু দিন আগেই শুরু হয়েছিল নৌকাটি তৈরির কাজ। সকাল, দুপুর ঘাম ঝরিয়ে তৈরি হয়েছে আস্ত নৌকাটি। তবে কাজ সেখানেই থেমে নেই। হাতুড়ি,পেরেক নিয়ে তখনও নৌকা সারাই এ ব্যাস্ত জলঙ্গির সাগরপাড়ার গৌতম মন্ডল।
পদ্মার দেখা দিয়েছে জল। গলা ডুব জলে তাই সহজেই পারাপার হওয়া যায়না। দরকার পড়ে নৌকার। আর তাই বর্ষা এলেই নদীতে জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে সীমান্ত এলাকার নৌকা তৈরির শিল্পীদের কদর।তবে শুধু স্থানীয়রাই নয়,আশেপাশের অনেক জায়গা থেকেই অনেক কাঠের শিল্পীরা ছুটে আসে নৌকার কাজে।
পদ্মা নদীর বুকে এখন এক বুক ঘোলা জল। দিন বিশেক আগেই লম্বা লম্বা যে ঘাস গাছ গুলি সবুজ চাদরের সৃষ্টি করেছিল, আজ জলের তলা থেকে আলতো করে উঁকি মারে তারা। কাঁদা মাখা পাড়ের পাশে রশি দিয়ে ইতিউতি ভাবে লাগানো রয়েছে ঢেড় খানেক নৌকা,আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট ডুঙ্গা নৌকাও- বর্ষা কালে এ চিত্র যেন চেনা চেনা।
তবে এই দিন গুলোর জন্যেই হা পিত্যেশ করে বসে সীমান্ত এলাকার অনেকেই।
শিবপুরের নিতাই মন্ডল। প্রায় তিরিশ বছর ধরে নৌকা তৈরির সঙ্গেই যুক্ত সে। বছরের এই কয়েকমাস নৌকা তৈরি ও মেরামত করেই দিন গুজরান হয় তার।
তার কথায়,” এ সময় নৌকার কদরটা বাড়ে সেটা সবার জানা। আর বছর ভোর আমরাও এসময়টার জন্যেই মুখিয়ে বসে থাকি। সারা বছর নদী পারে বসে, মাঠে কাজ করে দিন কাটে। তবে পদ্মায় জল এলেই বাড়ে ব্যস্ততা। নদীর ওপারে চরে যাতায়াত,ফসল পারাপার ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন পড়ে নৌকার। আর তা কেন্দ্র করেই নৌকা গড়ার জোর শুরু হয় এসময়।”
শুধু কাঠের বড় নৌকা না, এসময় টিনের তৈরি ছোট্ট ডুঙ্গা নৌকারও প্রচলন বাড়ে খুব। আর তাই ডুঙ্গা নৌকা তৈরির বহর বিশেষ ভাবে চোখে পড়ে সীমান্তে। স্থানীয় কৃষ্ণ মন্ডলের কথায়,” শুধু পারাপার নয়,এসময় হরেক কিসমের মাছ পাওয়া যায় নদীতে। আর স্থানিয়ের অনেকেই মাছ ধরতে ডুঙ্গা নৌকা ব্যাবহার করে। একা একাই না চালিয়ে ফাঁস,বিত্তি দেওয়া যায় নদীতে। হাজার,বারোশ টাকা খরচ করলেই ওই নৌকা তৈরি করে নেওয়া যায় সহজেই।”
আরও পড়ুনঃ ছোট গাড়ি-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন শিশু-সহ মৃত ৪
তবে শুধু স্থানীয় নয়,এসময় কাজের জন্য ছুটে আসে আশেপাশের কাঠের শিল্পীরাও যারা এসময়টা নৌকার কাছ করতে ছুটে আসে নদী প্রান্তে। কেওবা দিনে ছয়শো কিংবা আটশো-এভাবেই কাজ করেন তারা। সাগরপাড়ার মঙ্গল শর্মা বলছেন,”অন্নান্য সময় কাঠের কাজ করি কিন্তু বর্ষা নামলেই সব কিছু ছেড়েছুড়ে নৌকার কাজে হাত দিই। প্রায় দশ বছরের বেশি সময় থেকে এই কাজে যুক্ত। এসময় অনেক অনেক লোক দরকার হয়। একাকটা নৌকা তৈরিতে কুড়ি,পঁচিশও লোক কাজ করে প্রয়োজনে। এগুলো সিজিনের কাজ আর সিজিন পড়লেই আমাদের মত অনেককেই ছুটে আসতে হয় পদ্মা পাড়ে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584