শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
নদীমাতৃক বাংলায় নদীকে নিয়ে নানা প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, “নদী এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে।” বাস্তবিক অর্থে নদী সেই কাজটা দারুণ ভাবে করে। গঙ্গা নদীর অন্যতম শাখা নদী পদ্মা ভাঙনের কাজটি দারুণভাবে করে প্রতিবছর। পদ্মা ভাঙনে প্রতিবছর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন। গৃহহীন হয়ে পড়ে বহু মানুষ, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ক্ষেতের পর ক্ষেত। যে পদ্মা গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে শীর্ণকায়, মৃতপ্রায়। সেই পদ্মা বর্ষা এলে হয়ে উঠে ভরা যৌবনা প্রাপ্ত আঠারো বছরের রমণী। যার যৌবনভরা উচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় দুকূল। নদীর পাড়ে নামে ধস। শান্ত, স্নিগ্ধ পদ্মা কাম পিপাসু রাক্ষসীর মতো গিলে খায় একের পর এক জনপদ।
আজ যে এলাকার কথা উল্লেখ করছি, সেই এলাকার গা ঘেঁষে পদ্মা ছুটে চলছে বাংলাদেশ অভিমুখে। আর তাঁর চলার পথে সময়ের তালে তালে বহুবার গিলে খেয়েছে অসংখ্য জনপদ। আবার দুই তিন দিন থেকে ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়ছে সেই এলাকায়। এলাকাটি হল, মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত লালগোলা ব্লকের অধীনে বিলবোরাকোপরা অঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী গ্রাম তারানগর গ্রাম। এই ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা গুলি, তারানগর, বয়রা, ময়া সহ একাধিক জায়গা বারবার ভাঙনের মুখে পড়ছে। আবারও তারানগর এলাকা ব্যাপকভাবে ভাঙছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৫০-৬০ বিঘা ক্ষেতের জমি।
এভাবে প্রতিবছর ভাঙনের ফলে মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও প্রসাশন থেকে শাসকদল কেউ ভাঙন প্রতিরোধে সেভাবে সদিচ্ছা প্রকাশ করেনি। ‘শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার মত’ পরিস্থিতি করে কোনক্রমে কাজ সারেন তারা । কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভয়ংকর হয়ে উঠে পদ্মা, গিলে খেতে শুরু করে চারিদিক। স্থানীয় মানুষদের বয়ান অনুযায়ী, “প্রতিবছর এভাবে পদ্মা ভাঙলেও ভাঙন প্রতিরোধে সেভাবে ব্যবস্থা নেননি সরকারপক্ষ।” বরং তাদের দাবি, পদ্মা ভাঙন প্রতিরোধে যে তহবিল আসে, তাঁর অধিকাংশ টাকা যায় অনেক আমলাতান্ত্রিক ব্যক্তিত্বের পকেটে। ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি।
এছাড়াও অনেকে অভিযোগ করেছেন, প্রতিবছর এসময় পদ্মার জল কমতে থাকে তখন পদ্মার পাড় বেশ ভয়ংকর হয়ে উঠে। এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। সেই মোতাবেক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি সহ অনেকে এলাকাটি পরিদর্শন করেন। কিন্তু সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে এমন ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাটি। এছাড়াও অনেকে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ সরকার অবৈধভাবে নদীর ঐ পাড়ে বালি খনন করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে নদী এই পাড়ে ব্যাপকভাবে চাপ সৃষ্টি করছে, ফলে এমন ভাঙন শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ নদীয়ার কালিগঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ, উত্তেজনা
তবে ইতিমধ্যে লালগোলা ব্লক আধিকারিক সহ, লালগোলার বিধায়ক, মহম্মদ আলি এবং জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ খলিলুর রহমান সহ অনেকে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি ভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখার কবে কাজ শুরু হয়!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584