কন্যাশ্রী যোদ্ধার সহায়তায় নিজের বিয়ের ‘পাকাদেখা’ রুখে দিল সায়রা

0
54

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ

নাবালিকার বিয়ে আটকাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ল স্কুলের কন্যাশ্রী সংঘ ও শিক্ষকেরা। তবে যুদ্ধ যাত্রায় গিয়ে অবশ্য জয়ী হয়েই ফিরল বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রীরা।

saira with kanyashree girl | newsfront.co
কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের সাথে সায়রা।নিজস্ব চিত্র

কোচবিহার জেলার দিনহাটার পুঁটিমারী হাইস্কুলের ছাত্রী সায়রার পাকা দেখার কথা ছিল আজ। সেই মত বাড়িতে আয়োজনও হয়। অতিথি আপ্যায়নে ভুঁড়ি ভোজের ব্যবস্থাও ছিল, কিন্তু শেষটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। যার জন্য এই আয়োজন সেই কিনা বেঁকে বসলো! পুটিমারী হাই স্কুলের কন্যাশ্রী সংঘ’ অভয়া ‘ কন্যাশ্রী, দশমের ছাত্রী সায়রা বানু নিজের বিয়ের আয়োজনকে ভেস্তে দিল নিজেই।

শুক্রবারের এই ঘটনায় শুধু উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাই নয় রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি হয় দিনহাটা ১ নং ব্লকের কারিশাল এলাকায়।
পুঁটিমারী হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর কন্যাশ্রী সায়রা পাকা দেখা রুখতে পুলিশ, প্রশাসন ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দারস্থ হয়।

শেষপর্যন্ত প্রশাসনিক তৎপরতায় কন্যাশ্রী সংঘের ছয় পড়ুয়া ও আট জন শিক্ষক ওই বাড়িতে যান। কিন্তু একি কাণ্ড! মানুষকে সচেতন করতে তৎপর হয়েও গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পরতে হল ওই প্রতিনিধি দলকে। ভয় এবং শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করে গ্রামবাসীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে পড়ুয়ারা।

প্রসঙ্গত, এই বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রী সংঘ ‘অভয়া’র পক্ষ থেকে একটি সেমিনারের আয়োজন হয়েছিল বৃহস্পতিবার। সেখানে ‘নারীর সেকাল ও একাল’ নিয়ে আলোচনা হয়, তাতে অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরা। এই আলোচনা সভায় নাবালিকাদের বিয়ে রোধে নিজেদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন দিনহাটা থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত। ঠিক তার পরের দিনই নিজের বিয়ের আয়োজনকে ভেস্তে দিয়ে নজির গড়লেন সায়রা বানু।

এ ঘটনায় রীতিমতো আপ্লুত সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘এ ধরনের একটি আলোচনার পরের দিনই এরকম একটি ঘটনাকে আমি কুর্নিশ জানাই।’

এ বিষয়ে দিনহাটা-১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শৌভিক চন্দ বলেন, ‘একটি নাবালিকার বিয়ে রুখতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ভূমিকা প্রশংসনীয়। নাবালিকা বিয়ে আইনত অপরাধ। এরকম কোনও ঘটনা শুনলে আমরা প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘সায়রা তার অমতে বিয়ের আয়োজন হচ্ছে বলে আমাদের জানায়। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতেও অনুরোধ করে। পরে আমাদের কন্যাশ্রী মেয়েদের সাথে শিক্ষকদের একটি টিম ওই বাড়িতে যাই। প্রথমে আমাদের কথা সেভাবে গুরুত্ব না দিলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের বোঝানোতে কাজ হয়, বাতিল হয় ‘পাকা দেখা’ পরব।

আরও পড়ুনঃ ভারতীয় নারীর একাল-সেকাল বিষয়ে আলোচনা সভা

তবে প্রথমটায় আমাদের কথা কোনভাবেই মেনেনিতে চাইছিলনা গ্রামবাসীরা। আমাদের ঘিরে ধরে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন তারা।’ যাকে ঘিরে এত কাণ্ড সেই সায়রা বানু বলেন, ‘এখনই আমি বিয়ে করে সংসারী হতে চাই না। আরও পড়াশুনা করে বড় হতে চাই এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here