পদ ছেড়ে গেলেন আবার ফিরেও এলেন সৌমিত্র, কিছুই জানেন না দিলীপ ঘোষ

0
171

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ

যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সকালে অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদল বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-য়ের। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই আবার লিখেছেন কমিটিতে কোন বদল হচ্ছে না, সহকর্মীদের ছেড়ে থাকা সম্ভব নয় অতএব সৌমিত্রবাবুর প্রত্যাবর্তন। টিএমসিকে হারানোর জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি। জয় শ্রী রাম, জয় মা দুর্গা, বিজেপি জিন্দাবাদ, মোদীজি জিন্দাবাদ।

Dilip Ghosh | newsfront.co
ফাইল চিত্র

এই কয়েকঘন্টার ইস্তফা ও ঘর ওয়াপসি নিয়ে সৌমিত্র খাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, সৌমিত্রর যাওয়া-আসার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না, যাকিছু হয়েছে সবই হোয়াটসঅ্যাপে।

এই বিষয়ে যা কিছু আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত সবই পুজোর পরে হবে। দিলীপ ঘোষ মুখ না খুললেও রাজ্য বিজেপির আরেক নেতা তীব্র বিরক্তির সাথে জানান, সবটাই সৌমিত্র বাবুর নাটক। ইস্তফা দিলে ওনার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এমনিতেই দলের মধ্যে সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন তিনি যে কারণে দলের একটা বড় অংশ অত্যন্ত বিরক্ত সৌমিত্র বাবুর ওপর।

আরও পড়ুনঃ সাংবাদিকদের আইনি হেনস্থার প্রতিবাদ করে মোদীকে চিঠি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংগঠনের

জানা যাচ্ছে, সৌমিত্র বাবুর ইস্তফার খবর জানাজানি হতেই কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং শিব প্রকাশ ফোন করেন দিলীপ ঘোষকে। দিলীপ বাবু ও স্পষ্ট জানিয়ে দেন সৌমিত্র দলের মধ্যে সমান্তরাল সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছেন, কোনো নির্দেশই তিনি মানছেন না।

দলে এজিনিস দিলীপ বাবু চলতে দেবেন না, তাই সমস্ত কমিটিগুলি ভেঙে দিয়েছেন তিনি। একথার পর সম্ভবত সৌমিত্র বাবুও বুঝে যান ইস্তফা দিয়ে বিশেষ কিছু সুবিধে হবে না, অগত্যা প্রত্যাবর্তন।

ঘটনার সূত্রপাত আজ সকালে। যুব মোর্চার রাজ্য পদাধিকারিদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বিজেওআইএম ওয়েস্টবেঙ্গল অফিসিয়াল।

আরও পড়ুনঃ সৌমিত্রর অজান্তেই জেলা যুব সভাপতিদের পদ বাতিল করল দিলীপ ঘোষ

শনিবার সকাল ৯টা ৪ মিনিট নাগাদ ওই গ্রুপে সৌমিত্র লেখেন, ‘শুভ মহাষ্টমী। সকলে ভাল থাকবেন। আপনাদের খুবই সহযোগিতা পেয়েছি। আমি চাই বিজেপিকে সরকারে আনতেই হবে। তাই হয়ত আমার অনেক ভুল ছিল যাতে দলের ক্ষতি হচ্ছিল। তাই আমি ইস্তফা দেব আর সকলে ভাল থাকবেন। যুব মোর্চা জিন্দাবাদ, বিজেপি জিন্দাবাদ, মোদীজি জিন্দাবাদ’।

যুব মোর্চার জেলা কমিটিগুলি শুক্রবার দুপুরেই ভেঙে দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জেলা সভাপতিদেরও দিলীপ বরখাস্ত করে দিয়েছিলেন। সেই নিয়েই অসন্তোষের সূত্রপাত। ওই সব জেলা সভাপতি এবং জেলা কমিটিগুলি মনোনীত করেছিলেন সৌমিত্র খাঁ।

যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি হিসেবে জেলা সভাপতিদের বেছে নেওয়ার অধিকার সৌমিত্রের আছে ঠিকই কিন্তু যুব সংগঠনের জেলা সভাপতিদের বেছে নেওয়ার আগে বিজেপির সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতিদের সঙ্গে সৌমিত্র কোনও আলোচনা করেননি বলে দলের একাংশের দাবি। বিভিন্ন জেলা থেকে দিলীপের ঘোষের কাছে অভিযোগ আসছিল।

আরও পড়ুনঃ ‘রাজনীতি মিলে গেল, সুবিচার পেলাম না’, গুরুং-তৃণমূল মেলবন্ধনে ক্ষোভ অমিতাভ মালিকের বাবার

মহাসপ্তমীর দুপুরে এই পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর পদক্ষেপ নেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সৌমিত্রর তৈরি সব জেলা কমিটিগুলি তিনি ভেঙে দেন। দলের রাজ্য সভাপতির এই পদক্ষেপের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই সৌমিত্র ইস্তফা দেবেন বলে ঘোষণা করে সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

এই ঘটনায় দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ যেমন সৌমিত্রের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, তেমন-ই বিজেপিতে দিলীপের উল্টো শিবিরে অবস্থান করছেন, এমন নেতারাও সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দলে রাজ্য কমিটির সদস্য তথা যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এ দিন বলেন, ‘‘সৌমিত্র খাঁ অত্যন্ত অপরিণত রাজনীতি করছেন। সামনেই নির্বাচন। তার আগে গোটা দলকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলাই নেতাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’

আরও পড়ুনঃ বিজেপি আয়োজিত বিতর্কিত পুজোর অনুষ্ঠানে ডোনার নৃত্যানুষ্ঠান, সৌরভকে ঘিরে জল্পনা

শঙ্কুদেবের মতে, জেলা কমিটিগুলি গঠনের ক্ষেত্রে সৌমিত্রের আরও ভাবনাচিন্তা করা উচিত ছিল, পুরনো কর্মীদের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

একা শঙ্কুদেব পাণ্ডা নন, যুব মোর্চার আরও অনেক শীর্ষ নেতা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দাস অন্যতম। দিলীপ ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রকাশ দাস এখনও সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য না করলেও তবে দলের ভেতরে সৌমিত্রের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছেন বলে যুব মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে।

কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই বিজেপিতে পরিচিত সৌমিত্র। এ বারের ঝঞ্ঝাটে সেই কৈলাস-মুকুল গোষ্ঠীও সরাসরি সৌমিত্রের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। তবে দিলীপের পদক্ষেপকেও পুরোপুরি সমর্থন করছেন না সকলে। যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতির কথায়, দলের ভিতরে কথা বলে সমস্যা মেটানো যেত। আচমকা যুব মোর্চার সব জেলা কমিটিকে বরখাস্ত করে দিয়ে সংগঠনের রাজ্য সভাপতিকে দিলীপ যথেষ্ট অস্বস্তির মুখে ফেললেন, সেটা না হলেই ভাল হত।

এখন দেখার পুজোর পরে এই বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হয়! সৌমিত্র খাঁ এর তৈরি করা কমিটিগুলি আবার ফিরে আসে নাকি দিলীপ ঘোষের সিদ্ধান্তই বজায় থাকে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here