নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
খেলাও আসলে বিনোদনের একটি রসদ। আর সিনেমা এমন এক মাধ্যম যেখানে নানা ধরনের বিষয় ভাবনাকে তুলে ধরা হয় ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে। কখনও তা প্রেম, কখনও আবার ভৌতিক রহস্য, কখনও গোয়েন্দা, আবার কখনও সাহিত্য সহ আরও কত কিছু। এই সব বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্য খেলাও। খেলাকে কেন্দ্র করে ছবির সংখ্যা কম নয় বাংলা ও হিন্দিতে। হলিউডের দিকে তাকালেও খুঁজে পাওয়া যাবে অনেক নাম।
বড় ও ছোট পরদায় বারবারই ঘুরে ফিরে এসেছে কখনও ক্রিকেট, কখনও ফুটবল, কখনও ব্যাডমিন্টন, কখনও বা সাঁতার। মোদ্দাকথা, সিনেমায় খেলাধুলোর একটা জায়গা আছে বরাবরই। কারণ খেলা ভালবাসেন না এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। তাই সেই সব মানুষদের মন ছুঁতে অনেক পরিচালকই তাঁদের নানা কাজের ভিতরে খেলাকেও জায়গা দেন।
এক লহমায় যে সব ছবিগুলির নাম মনে পড়ে সেগুলির মধ্যে—বাংলাতে রয়েছে মোহনবাগানের মেয়ে, ভোলা, ধন্যি মেয়ে, প্রথম প্রেম, স্ট্রাইকার, কোনি, সপ্তপদী, সাহেব। ‘প্রথম প্রেম’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবলার চূণী গোস্বামী। ‘সপ্তপদী’ আর ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবি দুটিতে দর্শক মহানায়ককে দেখেছেন খাঁটি ফুটবলপ্রেমী হিসেবে। ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিতে তিনি স্বপ্নেও দেখেছেন যে স্বয়ং মহাদেবের সঙ্গে তিনি ফুটবল খেলছেন।
আর তারপর যা ঘটেছিল তা বলাই বাহুল্য। স্ত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে তিনি লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন খাট থেকে। সেই ছবি তারিয়ে তারিয়ে এক বার নয় বারবার উপভোগ করেছেন দর্শক। দেব অভিনীত ‘লে ছক্কা’ ছবিতেও ছিল খেলার রসদ। ‘এগারো’ও সেই খেলাকে কেন্দ্রে রেখে। ওয়েব সিরিজ ‘কৃশানু কৃশানু’ও মাঠকাঁপানো ফুটবলার কৃশানুকে কেন্দ্রে রেখেই। আসছে আরও একটি ফুটবলকেন্দ্রিক ছবি ‘গোলন্দাজ’।
হিন্দি ছবির সংখ্যাও কম নয় খেলাকে কেন্দ্র করে। বেশ কয়েক বছর আগে জয়সীমাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ইশারা’। এ ছাড়াও মেরি কম, সচিন তেন্দুলকর, এম এস ধোনি, ভাগ মিলখা ভাগ, আজহার, চক দে ইন্ডিয়া। এমনকী লগান ছবিতেও ছিল ইংরেজ বনাম ভারতীয়দের মধ্যে টানটান উত্তেজনার ক্রিকেট ম্যাচ।
‘কভি খুশি কভি গম’ ছবির শুরুয়াতে হৃত্বিক রোশনকে ক্রিকেট খেলতে দেখেছেন দর্শক। যেখানে ভুবন অর্থাৎ আমির খান নজর কেড়েছেন তাঁর ব্যাটিং ও বোলিং-এ। তৈরি হচ্ছে আরও দুটি হিন্দি ছবি। বাঙালি পরিচালক সুশান্ত দাস ক্যুইন অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক বানাচ্ছেন। ছবির নাম ‘চাকদা এক্সপ্রেস’।
আরও পড়ুনঃ মিলন হবে কতদিনে আর্য-চারুর সনে?
ঝুলনের ছোটবেলা থেকে বড় বেলা, আজকের ক্যুইন অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট হয়ে ওঠার গল্প বলা হবে এই ছবিতে। আবার সৈয়দ আব্দুল করিমের বায়োপিকে সৈয়দ আব্দুল করিমের চরিত্রে অভিনয় করছেন অজয় দেবগন।
বাংলাতেও ফুটবল নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন পরিচালক- অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। নাম ‘খেলেছি আজগুবি’। ইতিমধ্যেই শুটিঙের কাজ অনেক খানি এগিয়ে ফেলেছেন তিনি। এই ছবিতে ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে দেখা যাবে রিয়েল লাইফ ক্রীড়া ভাষ্যকার বিপ্লব দাশগুপ্ত এবং মিহির দাসকে।
আনাচা কানাচে লুকিয়ে রয়েছে খেলাকে কেন্দ্র করে আরও কত ছবি। শুধু কি ছবি? ধারাবাহিকেও খেলার ভূমিকা কম নয়। ‘এই ঘর এই সংসার’ ধারাবাহিকে খেলোয়াড় হতে চেয়েছিল মারাদোনা। একইভাবে ধারাবাহিক ‘জয়ী’ এবং ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’তেও সেই খেলারই জয়জয়কার দেখেছেন দর্শক। এভাবেই বড় ও ছোট পরদায় বারবার উঠে এসেছে খেলাধুলো, যা প্রতিবারই নজর কেড়েছে দর্শকের।
আরও পড়ুনঃ বাংলা ছবিতে ফের মিমি-নুসরত জুটি! থাকছেন যশ-ও
শোনা কথা, মহানায়ক উত্তমকুমার একটা কথা বলতেন—“আমরা আসলে সকলেই খেলোয়াড়। যে যার নিজের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত খেলি। কেউ মাঠে, কেউ ক্যামেরার সামনে কেউ বা সংসারে। আসলে আমরা প্রত্যেকেই স্পোর্টস ম্যান। আর স্পোর্টস ম্যান মানেই জেন্টলম্যান”।
খাঁটি মোহনবাগানি ছিলেন তিনি। নিয়মিত মাঠে গিয়ে খেলা দেখতেন। অভিনেতাদের মধ্যে খেলাধুলো ঘিরে উন্মাদনা কম নয়। ভানু বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, জয়জিত বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়রাও আপাদমস্তক ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ।
আরও পড়ুনঃ নেপথ্য নায়ক জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্যামেরার সামনে পিতৃদেব
তাই মহানায়কের বক্তব্যের রেশ টেনেই বলতে হয় আমরা আসলে সকলেই খেলোয়াড়। যে যার নিজের ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই সেরা। খেলা ছাড়া কি জীবন চলে? আট থেকে আশির মনে খেলা যে জায়গায় আগে ছিল, আজও তাই আছে, থাকবে আগামী দিনেও। আর তাই এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আগামী দিনেও বানানো হবে ছবি এবং ধারাবাহিক দুটিই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584