মোহাম্মদ পলাশ উদ্দিন সেখ
(সহকারী অধ্যাপক,আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়)
বিগত চৌদ্দ বছর আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত থাকলেও কখনো জানতাম না যে ছাত্রসংসদের (union) রুমে একটা জিন্নার ছবি আছে।কয়েকবার ছাত্র সংসদের কার্যালয়ে গিয়েছি কিন্তু কখনো ওই ছবিটা লক্ষ্য করিনি।আর ওই ছবিটা রাখার কারণ ১৯৩৮ সালে জিন্না কে আজীবন ছাত্র সংসদের মেম্বারশিপ দেওয়া।সেটা ইতিহাস।আর ইতিহাস কখনো বদলানো যায়না।
গত কিছুদিনের ঘটনার মাধ্যমে ব্যাপারটা জানতে পারলাম। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে এখানকার বর্তমান সংসদ(MP) একটি চিঠি লিখে আপত্তি জানায় উপাচার্যকে।
তার পর কিছু উগ্র সমাজ বিভাজনকারীরা,কটূক্তি ও অশালীন স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাসে বলপূর্বক প্রবেশ করার চেষ্টা করতে থাকে।
তবে কাকতলীয় বিষয়টি হল সেদিনই প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জনাব হামিদ আনসারীকে আজীবনকাল ছাত্র সংসদের সদস্যতা দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল।
আর উনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরেই,উগ্র সমাজ বিভাজনকারীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে।
আর যেখানে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষীরা ধরে ফেলে সেটা পঞ্চাশ মিটারের কম দূরত্ব; যেখানে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি অথিতিশালায় বিশ্রামরত ছিলেন।
তখন তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে পুলিশ এফ আই আর দায়ের না করেই ওদের ছেড়ে দেয়।
তখন ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে ছাত্ররা এফ আই আর করতে গেলে পুলিশ তাদের উপর অমানবিকভাবে হামলা চালায় এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে এফ আই আর করে।যেটা অকল্পনীয় এবং সমাজের চোখে নিন্দনীয়। তার ফলস্বরূপ ছাত্ররা কিছু ন্যায্য দাবী নিয়ে অনশনে বসে এবং ক্যাম্পাসের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। সেই দাবি গুলো হলো
১)সমস্ত ঘটনার জাজের পর্যবেক্ষণে জুডিসিয়াল এনকোয়ারি(judicial enquiry)।
২)এএমইউ ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা এফ আই আর প্রত্যাহার(Re-vocation of FIR against AMU Students)
৩)চিহ্নিত সমাজবিরোধীদের গ্ৰেফতার (identified culprits should be arrested)
৪) গুন্ডা বাহিনীর বিরুদ্ধে এফ আই আর (lodge fir against culprits)।
৫)কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই যে পুলিশ অফিসারগণ লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন ও সমাজবিরোধীদের সহায়তা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ (action against police official involved in supporting the goons and orderd ‘lathicharge’ without warning)
৬) ইউনিভার্সিটিকে টার্গেট করা ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার অভিসন্ধি বন্ধ করা হোক (stop targeting university and trying to silence student politics)
ছাত্রদের এই অনশনকে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অ্যাশোসিয়েশনও সমর্থন জানিয়েছে এবং প্রতিবাদ মিছিলও বের করেছে।
তাদের এই আন্দোলনকে জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল উনিভার্সিটি,এলাহাবাদ উনিভার্সিটি -এর ছাত্র সংসদ সমর্থন জানিয়েছে।
সমস্ত অ্যালুমনিরাও( allumni) সমর্থন জানিয়েছে এবং প্রবাসী অ্যালুমনিরাও প্রতিটি দেশের ইন্ডিয়ান এম্বেসিতে( Indian Emmbassy ) গিয়ে স্মারকলিপি (memorendum) জমা দিয়েছে।
কিন্ত এখনো সমাজ বিভাজনকারীরা প্ররোচনা দিয়ে চলেছে,যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত থাকে।
দুঃখের বিষয় হলো সংবাদমাধ্যম শুধু জিন্নার বিষয়টি নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে যাচ্ছে। অথচ ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় জিন্নার ছবি রাখা আছে শুধু ঐতিহাসিক কারণে ।সংবাদমাধ্যম অনশনের কারণগুলোকে লঘু করে দেখাচ্ছে।
অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কেন এএমইউকে (AMU) টার্গেট করা হচ্ছে।তাদের অভিসন্ধি কি তাহলে অন্যকিছু ছিল? তাদের প্রকৃত টার্গেট কি অন্য কেউ ছিলো? প্রশাসন হামিদ আনসারীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কেন? এই সমাজ বিভাজন করে কাদেরই বা লাভ?
ইতিহাস ইতিহাস হয়েই থাকুক,মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করুক।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584