সুচরিতা সেন চৌধুরী
পাহাড়ের রেখাটা দেখতে পেলেই মনটা ভালো হতে থাকে সুচেতার। ওর ওই একটাই ওষুধ। জীবনের সব ওঠাপড়া, খারাপ সময়, কষ্ট ভুলে যেতে পারে পাহাড়ের কাছে গিয়ে। এ বারও সেই লক্ষ্যেই ছুটেছে। লকডাউনের বাজারে চাকরীটা হঠাৎই চলে গেল। নতুন চাকরী পেতে অপেক্ষা করতে হবে। অফিস আর বাড়িই তো ছিল বেঁচে থাকার রসদ। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল একলা জীবন। এখন চাকরীহীন জীবন যে কী ভাবে কাটবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছিল না। মন, মাথাকে ঠান্ডা করতে তাই দার্জিলিং মেলের টিকিটটা কেটেই ফেলল সুচেতা।
সবে ট্রেন খুলেছে, তাই ভিড় নেই বললেই চলে। যা জমা টাকা আছে কয়েকটা মাস চলে যাবে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ঠিক করল পাকিয়ং যাবে। সিকিমের সেই খুব প্রিয় গ্রামটাকে কতদিন দেখেনি। সরাসরি গাড়ি নেই তাই পুরো গাড়ি ভাড়া করে নিতে হল। দুপুরের মধ্যে পৌঁছে গেল সেই গ্রামের একমাত্র হোটেলের সামনে। ঘর পেতেও সমস্যা হল না।
একটা সময় সুচেতা স্বপ্ন দেখত এই গ্রামেই ঘর বাঁধবে। সঙ্গীও পেয়ে গিয়েছিল। দীপেন ভাঙা হিন্দিতে বলত, ‘‘আমি তোমার জন্য পড়াশোনা করব, না হলে তোমার পাশে দাঁড়াব কী করে?’’ সুচেতাও ওকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাত সঙ্গে ঘর বাঁধারও।
বিকেল হচ্ছে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে কাতোর্ক গুম্ফার দিকে হাঁটতে শুরু করে সুচেতা। আগে এখানে যতদিন থাকত, লুকিয়ে চুরিয়ে এই গুম্ফা ও তার পিছনের জঙ্গলেই ওরা দেখা করত। একদিন ধরাও পড়ে গেল মা-র হাতে। গোটা পরিবার এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সেই যে পাকিয়ং ছেড়েছিল সুচেতা আর যাওয়া হয়নি। শেষ বেলায় যতদূর দেখা যায় পিছন ঘুরে দীপেনকে দেখেছিল সুচেতা। দীপেনও দাঁড়িয়েছিল পাথরের মতো।
আরও পড়ুনঃ দলাই লামার গুম্ফায়
কার্তোক গুম্ফার সামনেটা একটুও বদলায়নি। বিকেলের পড়ন্ত রোদে ভালবাসার জায়গাটা আরও একবার দেখে সুচেতা। দীপেনের কথা মনে পড়ে। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। সেই ঝাপসা চোখেই সুচেতা দেখতে পায় তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন একজন লামা।
সুচেতার গাল বেয়ে নেমে আসছে জল। লামা গায়ের খয়েরি কাপড়টা দিয়ে সুচেতার গাল মুছিয়ে দেয়। ‘‘তুমি?’’ প্রশ্ন করে সুচেতা। ‘‘এখানেই তো থাকার কথা ছিল আমাদের,’’ বলে গুম্ফার অন্ধকারে হারিয়ে যায় লামা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584