রিংকি মজুমদার
মেয়েটা বড্ড শীতকাতুরে তাই বাবা প্রতি বছর নতুন তুলো দিয়ে লেপ তৈরি করে দিত। মাটির দাওয়ায় নতুন তুলোর রাশি। লাল কাপড়রের বুনট আর তাতে রঙ বেরঙের বাহারি কভার। শীতের রাতে নতুন লেপের ওমে গুটিসুটি মেরে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েকে দেখে বাপের প্রাণটা জুড়িয়ে যেত ।
স্বামীর এমন স্নেহ দেখে আদিখ্যেতা বলে সুর চড়াত পরমা । গরিবের মেয়ে। এত আদিখ্যেতা কেন ! নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে এত বাহুল্য। রতন পরমাকে বোঝাত মেয়ে অতিথি। তাই ভাল করে যত্ন করো। পরের ঘর যাবেই।
মনমত ছেলে দেখেই বিয়ে দেয় রতন। বছর ঘরেনি তখন। শীতের সকালে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য খেজুর রস নিয়ে রতন তখন রাস্তায়। খবর এল মেয়েটা মরে গেছে। কেন মরল উত্তর নেই। জামাই বলে, হার্টের অসুখ। নাহ, কোনদিন তো রতন শোনেনি। সকলে বলে, অসুখ ছিল। মানেনি রতন। জামাই বাড়ির উঠোনে মেয়েটির নিথর শরীর। যন্ত্রণার ছাপ শরীর জুড়ে।
কিন্তু কোনও প্রমান নাই। সৎকারে না করে দেয় রতন। মরা মেয়েকে নিয়ে সোজা থানায়। মেয়ে মরার কারন জানতে চাই । কিন্তু হায়রে লাল সুতোর ফাঁস । কাগজ আর কাগজের ফাঁসে সময় পেরোয়। বড্ড শীতকাতুরে মেয়েটির ঠাই হয় মর্গের ঠাণ্ডা ঘরে। সারা রাত বাইরে বসে থাকে রতন। মেয়েটার যে বড্ড শীত করবে।
আরও পড়ুনঃ রবিবারের গল্পঃ বখাটে
রেহাই মেলেনি পরের দিনও। মেয়েটা পড়ে থাকে লাশকাটা ঠাণ্ডা ঘরে। দুদিন পর মরা শরীরটার কাঁটা ছেড়ার পর অবশেষে মুক্তি। নাহ, মৃত্যুর কারন প্রকাশ্যে আসেনি ঠিক। লোকমুখে শোনে রতনের জামাইয়ের অনেক টাকা।
আরও শোনে জামাইয়ের অন্য ঘর বাঁধা । সমাজকে ঠেকাতে এই নামের বিয়ে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে অশান্তি। পরিণামে সারা শরীরে কালশিটের দাগ। বাপ কষ্ট পাবে বলে শেষ অব্দি লড়াই করে মেয়েটি। আর পারেনি। কে বা কারা গলা টিপে ধরেছিল শেষ রাতে।
জামাই আসেনি শেষবারে। না আসুক গে। খুশি হয় রতন। মেয়েটাকে প্রাণ ভরে আগুন দেয় বাবা। এ যেন স্নেহের উত্তাপ, আগুন নয়। শীতের রাতে গা থেকে লেপ খুলে গেলে যেমন করে আবার গায়ে দিয়ে দিত, ঠিক তেমনি বাড়িতে রাখা নতুন তুলোর লেপ চুল্লিতে দিল রতন। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া মেয়েটা লেলিহান শিখায় ঘুমিয়ে পরল পরম শান্তিতে, দেখতে পেল রতন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584