নিউজফ্রন্ট সম্পাদকীয় বিভাগঃ
গণতন্ত্রের উৎসব ভোট।দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আর ফেরা হয়নি রাজকুমার রায়ের। করণদিঘির রহটপুর হাইমাদ্রাসার শিক্ষকের ভোটের ডিউটি ছিল ইটাহারের বানবোল হাইস্কুলের ৪৮ নং বুথে। সোমবার রাত আটটার পর থেকেই ছিলেন নিখোঁজ। যখন সন্ধান মিলল তখন তার দেহ নিস্পন্দ। বিভিন্ন মহল থেকেই প্রশ্ন উঠেছে একজন প্রিসাইডিং অফিসার ভোট কেন্দ্র থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেও কেন নীরব থাকলো প্রশাসন? সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রশ্নের ভিড়।ভোট পরবর্তীতে প্রশাসন জানিয়েছে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ‘শান্তিপূর্ণ ভোট’।
সমাজের কিছু বিশিষ্ট মানুষজন তাঁরা কি ভাবছেন বিতর্কিত এই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে? আমরা নিউজফ্রন্টের সম্পাদকীয় বিভাগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেছি তাই তুলে ধরলাম আমাদের পাঠকদের দরবারে…
ডঃনজরুল ইসলাম(প্রাক্তন পুলিশকর্তা)
প্রিসাইডিং অফিসার শাসকদলের হয়ে কাজ করলে হয়ত তার বিপদ হত না। তবে শুধু প্রিসাইডিং অফিসারই আক্রান্ত নন, বহু মানুষই আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন। ভোটের দিন সারা দিন জুড়েই প্রচুর মানুষের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, ব্যালট পেপার জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ভোট দিতে গেলে মারধোর করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলেন তবে তার শান্তির সংজ্ঞা আলাদা। এ অবস্থাকে শান্তিপূর্ণ বলে উপস্থাপনা কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
সমীর আইচ(বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী)
ভোট নিয়ে আমার কোনো মন্তব্যের অপেক্ষা রাখেনা। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এই দাবী করবেন না ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কারণ ভোট পরবর্ত্তীতে প্রায় সব পত্র পত্রিকারই হেডলাইনটি ছিল যথার্থ -‘ভোট মোটামুটি অশান্তিপূর্ণ’। সুতরাং শান্তিপূর্ণ ছিলোইনা বরং ছিল সন্ত্রাসপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যেভাবে তিনি বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছেন, তাতে সন্ত্রাস হয়েছে তো বটেই, এও প্রমাণিত হচ্ছে উনি মিথ্যাবাদী।
কৌশিক সেন(প্রখ্যাত অভিনেতা)
প্রথম থেকেই আমরা দেখছি শুধু মার্ডার যে হয়েছে শুধু তাই নয়, একজন প্রিসাইডিং অফিসার, নানা ভোটকর্মী একদম প্রাণপণ পালাচ্ছেন কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে। সবার সামনে দিয়েই ভোট লুঠ হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তো মারা যাচ্ছেনই এমনকি তৃণমুলের নিজের দলের লোকজনও মারা যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে ভোট শান্তিপূর্ণ দূরের কথা ভোট যে প্রশ্ন তুলে দিল, কবে পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে! আগামী দিনের নির্বাচনগুলিতেও হয় মানুষ ভোট দিতে যাবেনা, সংখ্যা কমে যাবে, নয়তো প্রবলভাবে কোর্টের মনিটরিং এ ভোট হওয়া উচিত। প্রশাসন, মিলিটারি লাগিয়ে কোর্টের মনিটরিং এ ভোট হতে হবে।
অসীম গিরি(সংগীত শিল্পী)
ভোটকর্মী বা প্রিসাইডিং অফিসারদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরাপত্তা কিচ্ছু ছিলনা। পুলিশ রীতিমত তৃনমূলের ক্যাডারবাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। সরকারী কর্মী হিসাবে সরকারের দায় ছিল সকল ভোটকর্মীর নিরাপত্তা দেওয়া। স্বরাষ্ট্রসচিব বা মুখ্যমন্ত্রী যে বিবৃতি দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি কোনো দলীয় সমর্থকের পক্ষে কথা বলছেন।
রতন বসু মজুমদার(সমাজকর্মী)
ঘটনাটি তীব্র নিন্দা করার বিষয় এবং পুরোপুরি গোটা নির্বাচনটা ফ্যাসিবাদী কায়দাতে করা হয়েছে। আমি তীব্র নিন্দা করছি। ঘৃণা প্রকাশ করছি।
রাজর্ষি চক্রবর্ত্তী(বিশিষ্ট অধ্যাপক,বর্ধমান বিশ্ব বিদ্যালয়)
ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। গণতন্ত্রের পক্ষেও এটা একটা লজ্জা। যে কোনো হত্যাই দুঃখজনক, কিন্তু ভোটকর্মীর মৃত্যুর বিষয়টি যথেষ্ট আশঙ্কার। এরপর যদি কেউ ভোট করতে না যেতে চায় তবে গণতন্ত্র টিকবে কি করে? ইলেকশনও কি অনলাইনে হবে?
ড: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়(লেখক ও অধ্যাপক)
গণতন্ত্র আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার রাষ্ট্রনেতা নির্বাচনের একটি উন্নত পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মধ্যে নির্বাচন একটি ধাপ। এই ধাপটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে দক্ষ কর্মচারী প্রয়োজন। এটাই হয়ে আসছে আধুনিক পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে। আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক কর্মী, সাধারণ মানুষ যেমন খুন হয়েছে, তেমনি একজন প্রিসাইডিং অফিসার নির্মম ভাবে খুন হয়েছেন। শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক নির্বাচন কর্মীও অল্প বিস্তর আহত হয়েছেন। প্রথমেই এই নৃশংস কাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। একদিকে এই নির্বাচনকর্মী খুন ও আহত হয়েছেন, এর মানে সমগ্র নির্বাচন কমিশনের ওপর চূড়ান্ত আঘাত করা হয়েছে, অন্যদিকে সমাজের অপগণ্ডরা যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে আমাদের দেশের উন্নত নির্বাচন কমিশনকে। তবে সমাজে এই অপগণ্ডরা বেশি দিন টেকে না। অপশক্তি কখনও কোনো দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমি আশা করবো আমাদের রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্রে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
ফিচার ছবি সংগৃহীত
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584