রাজ্যে বিজেপি ঢোকার পিছনে মমতাই দায়ী, মুখ খুললেন ত্বহা সিদ্দিকি

0
879

নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাকি নরেন্দ্র মোদীর যোগসাজশ রয়েছে। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ১৮টি আসন পাওয়ার পিছনে নাকি হাত আছে তৃণমূলের। এমনই মন্তব্য করলেন ফুরফুরা শরিফের ত্বহা সিদ্দিকি। সাধনা নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ত্বহা সিদ্দিকির বিবৃতি থেকে অন্তত এমনটাই জানা গিয়েছে।

taha siddiqui says mamata is responsible for influence to bjp | newsfront.co
ত্বহা সিদ্দিকি। চিত্র সৌজন্যঃ টাফ টক উইথ ঋতব্রত ইউটিউব চ্যানেল

পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি বলেছেন, ‘‘শুধু আমরাই নই, বাংলার মানুষ বিজেপি সরকারকে বিশ্বাস করতে পারেন না। এবার প্রশ্ন উঠবে, বিশ্বাস না হলে বিজেপি ক্ষমতায় এল কী করে? ১৮টি আসন পেল কী করে? কীভাবে আসন পেল? কোনও গট-আপ হয়েছে কিনা জানতে হবে। ইভিএম মেশিনের কারসাজি রয়েছে কিনা জানতে হবে। মনে প্রাণে এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না’’।

বাম সরকারের পতন এবং তার পরবর্তী রাজ্যের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক অসাংবিধানিক সিএএ পাশ হওয়া নিয়ে দেশ জুড়ে যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ মাথাচাড়া দিয়েছে সেই প্রসঙ্গে পীরজাদা বলেন, ‘‘বাংলার হিন্দু-মুসলিম সকলে বলছেন, সিপিএম চলে গিয়েছে।

সিপিএমের একশটার মধ্যে নিরানব্বইটা দিকই খারাপ। কিন্তু, একটা গুণ ছিল। সিপিএম কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জায়গা দেয়নি। কিন্তু, আজ পশ্চিমবাংলায় যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। এই সরকারের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দমন করার ক্ষমতা কম।”

আরও পড়ুনঃ ‘মৌনিবাবা’ বনাম ’৫৬ ইঞ্চি’, সিমলার জনসমাবেশে কংগ্রেসকে কটাক্ষ শাহের

কিছুদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতার দিল্লি যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলেছিলেন, হয় তিনি রাজীব কুমারকে বাঁচাতে যাচ্ছেন, না হয় মোদী সরকারের সাথে কোনও রফাদফায় যাচ্ছেন।

সিদ্দিকি বলেন, ‘তিন তালাকের’ সময়, ‘সিএএ’ পাশ হওয়ার সময় সংসদে বেশ কিছু তৃণমূল সাংসদকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এই বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখে তিনি জানান তৃণমূল-বিজেপি-র কোনও আঁতাত নিশ্চয় কাজ করছে, নাহলে এমনটা দেখা যেত না।

তবে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন, তাতে খুশি সিদ্দিকি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ওঁর আরেকটা দিক রয়েছে। ভারতবর্ষের কোনও মুখ্যমন্ত্রী সিএএ নিয়ে পথে নামেননি।

আরও পড়ুনঃ ফালাকাটায় জুয়ার আসরে হানা, গ্রেফতার ৩

এটা কিন্তু স্বীকার করতে হবে যে উনি পথে নেমেছেন। এতে খুব খুশি। মমতার পথে নামার পরও মানুষ প্রতিবাদ বন্ধ করেননি, তবে উগ্র প্রতিবাদ কমেছে। অবশ্য এ জন্য মমতার একার কৃতিত্ব নেই। বাংলার হিন্দু-মুসলিম ধর্মগুরুদের বিবৃতিও কাজে লেগেছ।”

সিদ্দিকি মনে করছেন, যতদিন আইন সংশোধন না হচ্ছে, ততদিন এভাবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করে যেতে হবে।

তৃণমূল সুপ্রিমো সম্পর্কে নানা মন্তব্য করার পর তিনি বিজেপি-র স্বায়ত্ত্বশাসন নিয়েও মন্তব্য করেছেন। সাম্প্রতিক ভারতে, দেশ জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে, তাঁর পিছনে তিনি বিজেপিকেই দায়ী করেছেন। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে ফুরফুরা প্রধান বলেন, ‘‘অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলছি, ভারতের আজ যা পরিস্থিতি তা আমরা কখনও আশা করিনি।

আরও পড়ুনঃ এনআরসি-সিএএ বাতিলের দাবিতে সরব জেলার শিক্ষক সংগঠন

বিজেপি সরকার আসার আগে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে শান্তিতে ছিলাম। সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস রাজনীতি করে। কিন্তু এরা ধর্মকে নিয়ে খেলে না। ভারতের মধ্যে একমাত্র রাজ্য, যেখানে সম্প্রীতি, একতা, ভ্রাতৃত্ব আছে, তা হল পশ্চিমবঙ্গ।

রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এঁদের অবদানে সম্প্রীতির রাজ্য হয়েছে বাংলা। দেশে এমন একটা দল (বিজেপি) এসেছে যে দল দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে না, দেশে বেকারত্ব কীভাবে দূর হবে তা নিয়ে চিন্তা নেই। সরকারের একটাই লক্ষ্য, একটাই উদ্দেশ্য, হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করে ভোটব্যাঙ্ক ভাগ’’।

তবে সিদ্দিকি একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, মুসলিম বলে তিনি যতটা না চিন্তিত, একজন ভারতীয় হয়ে, দেশের নাগরিক হয়ে তাঁর চিন্তা বেশি।

তিনি এও বলেন, অন্যান্য বাঙালি মুসলিম নাগরিক যাঁরা আছেন, তাঁরাও একই বিষয় নিয়ে চিন্তিত। একটা জায়গায় ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে, একটি জায়গার জল-মাটি-বাতাসে খেলে বেরিয়ে হঠাৎ করে যদি শুনতে হয়, একটি সম্প্রদায়কে বিতাড়িত করে দেওয়া হবে, তাও ধর্মের ভিত্তিতে, তাহলে ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসে না।

আরও পড়ুনঃ উপজাতি অনুষ্ঠানে ফাটিয়ে নাচ রাহুলের, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও

সিদ্দিকি জানান, ‘‘আমি বাংলায় শান্তিতে আছি। আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে যে বাংলাদেশে যাব? এখানকার মুসলিমরা কেন যাবেন বাংলাদেশে? তাঁরা তো এখানকারই বাসিন্দা। কেন আমার সুন্দর বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাব? আমার ভারতবর্ষ তো শান্তির জায়গা।

সত্যিকারের যাঁরা ভারতবাসী, যাঁরা বাংলাবাসী, তাঁরা এখানে বঞ্চিত। ওপার বাংলা থেকে সকলে আসেননি, একটা পরিবারের দু’জন আসেন। দু’জনকে সরকার তাঁদের সুবিধা দিয়েছে। ওখানেও দিয়েছে। বাংলাদেশের (সংখ্যালঘু) মানুষকে সে দেশের সরকার কেমন নিরাপত্তা দিয়েছে, দেখবেন।

আবার এদিকে এসেও সুবিধা নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, যাঁরা ভারতীয় মুসলিম, বাঙালি মুসলিম, বাঙালি হিন্দু, যাঁরা এদেশের, তাঁরাই কিন্তু বঞ্চিত। এই বিল (ক্যাব) পাস করা হল বলে মুসলিমরা চিন্তিত নন।

আরও পড়ুনঃ সিএএ-র প্রতিবাদ করায় আবারও দেশছাড়া এক বিদেশি পর্যটক

আমরা এই যে হিন্দু-মুসলমান বিক্ষোভ করছি তা কিন্তু মুসলমানরা ভয় পাচ্ছে বলে করছে, এমনটা নয়। যাতে এপার বাংলায় যাঁরা আছেন (হিন্দু-মুসলিম উভয়কেই), তাঁদের তকমা মেরে বাংলাদেশে না পাঠানো হয়, সে জন্যই এই প্রতিবাদ। এখানে যাঁরা হিন্দু-মুসলিম আছি, আমরা বাঙালি ভারতীয়। কেন হইহই করব? এই সরকারকে বিশ্বাস নেই। পাসপোর্ট থাকলেও ছিঁড়ে দিয়ে কোনও স্ট্যাম্প মেরে দেবে’’।

বিজেপি-র স্লোগান ‘জয় শ্রী রাম’ সম্পর্কে তহ্বা সিদ্দিকি জানান, কিছুদিন আগে মুসলিম ধর্মাবলম্বী কোনও মানুষ দেখলেই বিজেপি-র সদস্যরা ‘জয় শ্রী রাম’ বলে চেঁচিয়ে উঠত। যেখানে হিন্দু-মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক বিভেদ ভুলে ‘দুগগা মাই কি জয়!’ বলেন, ‘কালী মাই কি জয়!’ বলতেন, সেখানে এখন সবাই ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি আওড়াচ্ছেন।

তবে বাঙালিদের যে ব্রেন-ওয়াশ বিজেপি করাতে পারেনি, তাঁর প্রশংসা করে সিদ্দিকি জানান, “বাঙালিদের সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে ব্রেনওয়াশ করতে পারেনি। এখন নতুন চাল চেলেছে এনআরসি।”

আরও পড়ুনঃ বিশ্ব ডুয়ার্স উৎসবের প্রস্তুতি ঘিরে উদ্দীপনা

প্রধানমন্ত্রীর পোশাক সম্পর্কে একপেশে মন্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করেন সিদ্দিকি। উনি বলেন, শুধু যে মুসলিমরাই ফেজ টুপি এবং লুঙ্গি পরেন তা নয়।

সিএএ নিয়ে প্রতিবাদের সময় অনেক অমুসলিমরাও ফেজটুপি পরে প্রতিবাদ করেছেন। এদের একাংশ আবার শুধুমাত্রই মুসলিমদের নামে কুৎসা রটানর জন্যও করেছেন।

টুপি বিক্রেতাদের এই জন্য এবার ভাল লাভ হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সিদ্দিকি প্রশ্ন তোলেন, “প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুঙ্গি পরেন না? আমরা দিনরাত পরি। যাঁরা এ ধরনের কাজ করে, তাঁরা রাতে পরেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত’’।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here