আনিসুর রহমান, কোলকাতাঃ-
০৯/১২/২০১৫ঃ রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে এক আতঙ্কের দিন। ঐ দিন হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের পর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে অবৈধ ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সঙ্গে ঐ একই রায়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা-অশিক্ষক কর্মচারীদের; তাদের বৈধতা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ম্যানজিং কমিটির কাছ থেকে। হঠাৎ যেন মাথায় বজ্রপাত! যখন তারা পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক বা শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন তখন এই আইনি জটিলতা ছিলনা। তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে তাদের অবৈধ বলা হবে। তাদের বক্তব্য যে তারা সরকারের তৈরি করা কমিশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চাকরি পেয়েছেন; তারা আবার কখনো অবৈধ হতে পারেন? তবে তারা বিশ্বাস করতেন যে যদি কোন আইনি জটিলতা থাকে তবে সরকার সেটা সামলাবে। কিন্তু তাদের অভিযোগ, সরকার তো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেইনি,বরঞ্চ ২০১৬ সালের ৩রা মার্চ এক আদেশনামা বের করে সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। সেই আদেশনামায় সরকার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে মান্যতা দিয়ে নিয়োগ ক্ষমতা তুলে দেয় ম্যানেজিং কমিটির হাতে। কিন্তু সেই আদেশনামায় শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তার ব্যাপারে একটি বাক্যও খরচ করেনি সরকার।ফলে পরে এক শিক্ষক সংগঠন সুপ্রীমকোর্টে কেস করে সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ আনলেও শিক্ষকদের এখনও অবৈধ তকমা গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। এখানেই তাদের ক্ষোভ।
দ্বিতীয়ত, প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ট্রান্সফারের আবেদন করেছিলেন তাদের বৃহদাংশ। হাইকোর্টের একাধিক রায় থাকা সত্ত্বেও কমিশন ট্রান্সফার দিতে নারাজ; বদলি প্রসঙ্গে কমিশনে প্রশ্ন করলেই কমিশন সুপ্রীমকোর্টের অজুহাত দেখায়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান ও আইনজীবী শিক্ষক-শিক্ষিকাদর সঙ্গে দূর্ব্যবহার করেন। স্কুলে বদলি প্রক্রিয়া চালু থাকলেও মাদ্রাসার শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিতে নারাজ এমএসসি। বদলির আবেদনকারীদের দেওয়া ফি এর টাকাও ফেরত দেয়নি কমিশন।
অপরদিকে, সম্প্রতি নিয়োগে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কমিশনের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে একাধিক কেসও হয়েছে কমিশনের বিরুদ্ধে। কোর্ট চরমভাবে ভর্ৎসনা ও করেছে কমিশনের অস্থায়ী সেক্রেটারিকে। তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দুরে থাক সুপ্রীমকোর্টে বিচারপতিগণের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ কমিশন এবং সরকারের আইনজীবীগণ।
কিন্তু কমিটি না কমিশন- নিয়োগ করার দায়িত্ব পাবে কে? এই প্রশ্নে বহু ছাত্র ছাত্রী থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভবিষ্যত ওষ্ঠাগত। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ভোট রাজনীতির ভয়ে সরকার বিষয়টিতে উদাসীন বলে মনে করেন অনেক মাদ্রাসা দরদী বুদ্ধিজীবী মহল। কারণ হিসেবে তাদের অভিমত, পূর্বতন সরকার মাদ্রাসা নিয়োগ নিয়ে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ২০০৭ সালে এক ভিত্তিহীন সরকারি আদেশনামা প্রকাশের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাতে এক প্রকার ফাটল ধরিয়ে গেছেন। তাই ছাত্র ছাত্রী থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা ও মাদ্রাসা প্রেমীরা উক্ত সরকারি আদেশনামাকে সংশোধনের দাবী তুলে কমিশনকে ফিরিয়ে আনতে সোস্যাল মিডিয়া ছয়লাপ করে চলেছেন।
উল্লেখ্য, সেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষকগণ আগামী ২৪শে আগস্ট কালীঘাট অভিযানের ডাক দিয়েছেন বদলি সহ এক গুচ্ছ দাবি নিয়ে। বৈশালী, আমানুল্লা, টুম্পা, মিজানুর, দীপঙ্কর,সামিম প্রভৃতি শিক্ষকদের দাবি- ‘আর কোনো কথা নয়, অবিলম্বে বদলি চাই!’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক মহাশয় নিউজফ্রন্টকে ফোনে জানান, ” আমার ব্যক্তিগত মতামত, মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী কোনও ভাবেই পূর্বতন সরকারের গাফিলতি স্বরূপ ১২/১০/২০০৭ এর GO এর সঙ্গে আপোষ করবেন না। আমরা বিষয়টি মূখ্যমন্ত্রীর নজরে আনার জন্যই আগামী ২৪ তারিখ হাজরা মোড়ে জমায়েত করছি। আশাকরি দিদি এমএসসি ফিরিয়ে এনে সমস্ত বকেয়া কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্হা করবেন।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584