বিশ্বপর্যটক রবির বর্ধমান যাত্রা

0
135

সুদীপ পাল,বর্ধমানঃ

the burdwan journey of rabi
ছবিঃপ্রতিবেদক

১৯২১ বঙ্গাব্দে বর্ধমানে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।দুর্ভিক্ষের সেই দুঃখ ছুঁয়ে গিয়েছিল যুবক রবীন্দ্রনাথকে।পরবর্তীকালে সে দুঃখের কথা তিনি লিখেছিলেন তাঁর লেখনীতে।লিখেছিলেন, ‘দিন মাস যায়, বরষ ফুরায় /ফুরাবে না হাহাকার? /ওই কারা চেয়ে শূন্য নয়ানে/ সুখ -আশা-হীন নববর্ষ-পানে।’ বর্ধমান শহর থেকে কবির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতন-এর দূরত্ব খুব বেশি নয়।

তবু বিশ্বপর্যটক রবীন্দ্রনাথের এইটুকু পথ অতিক্রম করতে লেগে গেল অনেক বছর।এর কারণ কি?তৎকালীন বর্ধমানবাসীর কবিগুরুর প্রতি সচেতন না হওয়া? নাকি গভীর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সে কালের বর্ধমানের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে? অথবা অন্য কোনো কারণ ছিল, যে জন্য ট্রেনে কলকাতা গিয়েছেন শান্তিনিকেতন থেকে বর্ধমান স্টেশন অতিক্রম করে অথচ বর্ধমানে নামেননি। এর কারণ কি? সাহিত্যের ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় বর্ধমানে মহারাজ বিজয়চাঁদ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত হয়েছিল অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন।

আরও পড়ুনঃ আলো সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী পালন

রাজকীয় সেই আয়োজনে সভাপতি ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। বর্ধমানের এই রাজা বিজয়চাঁদ শুধু সাহিত্যপ্রেমী নন নিজেও লেখক ছিলেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং বিজয়চাঁদ রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। অথচ কেন রবীন্দ্রনাথ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না সে প্রশ্নের কোন উত্তর মেলে না। বরং সভাস্থল থেকে উঠে এসেছিল রবীন্দ্র বিরোধী কথা।

যেমন বলা হয়েছিল, ‘রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন সত্য কিন্তু যাঁরা সেই পুরস্কার দিয়েছিলেন তাঁরা বাংলা সাহিত্য বোঝেন কতটুকু? রবীন্দ্রনাথ ‘মহাকাব্য’ লিখতে পারেননি। লিখেছেন কতগুলি ছোট ছোট কবিতা, ‘চুটকি’ বই আর কিছু না।

এই টানাপোড়েনের খবর মনে হয় কবির কাছে গিয়েছিল তাই বর্ধমান নিয়ে কবির মনে হয়তো অভিমান থেকে থাকতে পারে। তবে পরবর্তীকালে বর্ধমানের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দেবপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়-এর উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য কবির বয়স তখন পঁচাত্তর।দেবপ্রসন্নবাবুর বাড়ি ছিল বিবি ঘোষ রোডে।

তাঁরই আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ দেবপ্রসন্নবাবুর বাড়িতে আসেন। বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে এই বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। বর্তমানে অবশ্য এই বাড়ির কোন অস্তিত্ব নেই। সুতরাং কবিকে বর্ধমানে সম্মাননা জানানো হয় তাঁর প্রয়াণের মাত্র পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩৬ সালে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সম্মাননার সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ স্বয়ং। তাঁর ভাষণে তিনি ঠাকুর পরিবারের সুখ্যাতির কথা তুলে ধরেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। রুপোর পাতের উপরে সংস্কৃতে লেখা একটি মানপত্র কবিকে দেওয়া হয়।

শরীর বিশেষ ভালো না থাকায় দীর্ঘ বক্তব্য তিনি রাখেননি। তবে বারেবারে সেদিন ফুটে উঠেছিল তাঁর নিজের আনন্দ ও খুশি। অনুষ্ঠান শেষে ফিরে যান তাঁর প্রাণের জায়গা শান্তিনিকেতনে। কবি ট্রেনে ফিরে যান সেদিন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here