শ্যামল রায়,নদিয়াঃ
নিঃসন্তানদের সন্তান আসবেই এই রকম গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করানোর নামে রোগীদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নবদ্বীপ শহরের এক মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
কিন্তু মাসের পর মাস বছরের পর বছর সন্তান আসবে চিকিৎসার নামে টাকা খরচ হয়ে গেলেও নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান আসেনি উল্টে নানান রোগের শিকার হয়েছেন ওই সব নিঃসন্তান দম্পতিরা।তাই টাকা ফেরত ও চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির দাবিতে ধর্নায় বসেছেন নিঃসন্তান দম্পতিরা।
নবদ্বীপ রেল স্টেশন সংলগ্ন মিত্র পারা ঘাটে বসবাস করেন মহিলা চিকিৎসক বানি মন্ডল।এই মহিলা চিকিৎসক বাণী মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন নিঃসন্তান দম্পতিরা। রবিবার রাত থেকে নিঃসন্তান দম্পতিরা ধর্ণায় বসেছেন তার বাড়ির সামনে।
সোমবার সকাল দেখেই দেখা গেল ওই মহিলা চিকিৎসকের বাড়ির প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।জমায়েত রাখা হয়েছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী অর্থাৎ র্যাফ।ঘটনাস্থলে দেখা গেল নবদ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সুবীর কুমার পাল ও এসডিপিও সামাদ হোসেনকেও।
যদিও পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এই ধরনের ঘটনার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে আইএমএ সহ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং আরো নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্যে গেলে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে।প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আমরা চেষ্টা করছি যারা ধর্ণায় বসেছেন তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তবে নিঃসন্তান দম্পতিদের তরফ থেকে নবদ্বীপ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ওই মহিলা চিকিৎসক বাণী মন্ডলের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুনঃ বর্হিঃবিভাগ বনধ,ধর্ণায় বালুরঘাট হাসপাতালের চিকিৎসকরা
সোমবার দেখা গেল ওই মহিলা চিকিৎসকের বাড়ির সামনে ৭ জন প্রতারিত মহিলা ধর্ণায় রয়েছেন এবং মহিলাদের সাথে বিশিষ্ট সমাজসেবী বাবলি মুখোপাধ্যায় রয়েছেন।
বাবলি মুখোপাধ্যায় ধর্ণায় বসে জানিয়ে দিয়েছেন যে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে না নেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ধর্ণা চালিয়ে যাব এবং যে সমস্ত নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রচুর অর্থ খরচ করেছেন এক কথায় প্রতারিত হয়েছেন অথচ চিকিৎসকের প্রতিশ্রুতি মতো কোনো কাজ হয়নি সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতারিত মহিলা গৌরী সাহা,কনিকা অধিকারী, শিখা বৈরাগ্য,রেখা হালদার, নমিতা সরকার, প্রমূখ অভিযোগ করেছেন যে, ‘আমরা নিঃসন্তান দম্পতি,এই চিকিৎসক বানি মন্ডল আমাদের বারবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে যে সন্তান হবেই।সন্তান আসবে এই কথা বারবার জানিয়ে দিয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ নিয়েছেন ওই চিকিৎসক।
অথচ মাসের পর মাস বছরের পর বছর আমাদের কোনো সন্তান-সন্ততির সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।উল্টে চিকিৎসা যা হয়েছে তাতে আমরা নানা বিধ অন্য রোগের শিকার হয়েছি।অভিযোগ ধর্নায় বসা নিঃসন্তান দম্পতিদের।
আরো নিঃসন্তান দম্পতিরা জানিয়েছেন কেউ ৪২ হাজার টাকা কেউ আট হাজার টাকা কেউ ৪৫ হাজার টাকা কেউ তিন হাজার টাকা দিয়েছেন ওই চিকিৎসককে।টাকা ফেরত চেয়ে বারবার চিকিৎসকের কাছে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা চিকিৎসক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল টাকা ফেরত দেবে কিন্তু আজও টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাঁরা অসহায় এবং গরিব মানুষ টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে এবং ওই জালিয়াতি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ধর্ণা দিচ্ছেন।
ওই চিকিৎসক বাণী মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি কিন্তু তার ভাই অ্যাডভোকেট বিকাশ মণ্ডল জানিয়েছেন যে, “আমার দিদি বানি মন্ডল একজন এমবিবিএস ডাক্তার।যেভাবে একজন চিকিৎসক চিকিৎসা করে থাকেন সেই ভাবেই ঐ সমস্ত রোগের চিকিৎসা করেছেন দিদি কিন্তু টাকা পয়সার বিষয় এনে নিঃসন্তান দম্পতিরা যে আন্দোলন সংঘটিত করেছে এর পিছনে অন্য কোন কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
দিদি জানিয়েছেন অতিরিক্ত কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি চিকিৎসার জন্য যা খরচ তাই তারা খরচ করেছে আলাদা কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি বলে দাবি চিকিৎসক পরিবারের।
তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন ধর্নায় বসা নিঃসন্তান দম্পতিরা। ধর্নায় বসা মহিলাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে পুলিশ আমাদের সাথে ভালো সহযোগিতা করলেও এখনো পর্যন্ত কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এ কথা পুলিশ কেউ বারবার বলছেন।
তবে পুলিশ সূত্রে খবর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং চিকিৎসা করানোর নামে টাকা পয়সা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন চিকিৎসা করতে আসা অনেক রোগীর পরিবারের লোক জনেরা।তবে এলাকার শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য নবদ্বীপ থানার পুলিশ আধিকারিক প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রেখেছেন এলাকায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584