পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ
ওদের সমস্যা শোনার কেউ নেই! ভোট এলে একমাত্র তাদের কাছে যায় নেতারা।তাই এবার ভোট না দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কালিয়াগঞ্জের রেল স্টেশনের পাশের ঝুপড়ির বাসিন্দারা। ওদের কারো নিজস্ব ঘর নেই,ওরা থাকে এক চিলতে কোন রকমে ঝুপড়ির ঘরে।অন্যের জায়গায়,কারন তাদের একটাই পরিচয় তারা ঝুপড়ি বাসী।ওদের বলার অনেক আছে কিন্তু তাদের কথা শুনবার কোন লোক নেই ।অথচ তাদের সমস্যার সমাধানে কোন সরকারই।হ্যাঁ,যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা হল উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের রেল স্টেশনের পাশে ঝুপড়ির বাসী।
ভোট আসে আর যায়, কিন্তু তাদের জীবনের মানে কোনো পরিবর্তনের এর ছোঁয়া লাগে নি।তারা আগেও যে অবস্থায় ছিল আজ ও একই অবস্থায় আছে।শুধুমাত্র ভোট আসলেই, সেই সময় তাদের কথা মনে পড়ে গণ দেবতাদের।আর তখন স্বশরীরে হাজির হন সেই সব গনদেবতারা।তখন ঝুপড়ি বাসীদের কেউ কেউ হয়ে যান পিসিমা,কেউবা দিদিমা,কেউ কাকিমা ও কেউ দিদি। গনদেবতারা নানা রকম ছলে বলে তাদের ভুলিয়ে তাদের পক্ষে ভোটও নিয়ে নেন।
আরও পড়ুনঃ বস্তিবাসীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ
আর ওর বিনিময়ে গনদেবতাদের মুখের সেই ফাঁকা প্রতিশ্রুতি- সব হয়ে যাবে !
যেন তারা জয়ী হলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নিমেষের মধ্যে।আর কোন সমস্যা থাকবে না।পেয়ে যাবে তারা তাদের নিজস্ব জায়গা,নিজস্ব ঘর, শৌচাগার থেকে আরো অনেক কিছু।কিন্তু ভোট শেষ হয়ে যাওয়া মাত্রই আস্তে আস্তে সব কিছুই আবার ফিকে হয়ে যায়। কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তারা বসবাস করে আসছে।অথচ কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা তাদের সমস্যার সমাধানে এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে আক্ষেপের সাথে অভিযোগ ঝুপড়ির বাসিন্দাদের।তারা বলেন সব কিছু দিক থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
অথচ ভোটের আর পাঁচজনের মত তারাও ভোট দেন। তারা বলেন রেশন থেকে যে চাল তাদেরকে দেওয়া হয় সেই চাল তারা খেতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ডিলারের কাছে বিক্রি করে দেন। শুধু তাই নয়, সরকারিভাবে বানানো হয়নি কোনো শৌচাগার।তাই বাধ্য হয়ে তাদের রেল লাইনের ধারে প্রাতক্রিয়া করতে হয়। শুধু তাই নয় এলাকায় সব সময় নোংরা পরিবেশ থাকার ফলে এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন রোগের শিকার হতে হয়।মাঝে মাঝে পৌরসভার সাফাই কর্মীরা আসলেও নিয়মিত তাদের দেখা মেলে না।
তাদের নিজস্ব কোনো বাসস্থান নেই, অন্যের জায়গায় বিশেষ করে সরকারি খাস জমিতে অস্থায়ীভাবে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে তারা। রেললাইনের পাশে অস্থায়ী ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অতি কষ্টে তারা জীবনযাপন করে।সারা বছর তাদের কেউ কোনো খোঁজখবর না নিলেও ভোট এলেই তাদের কদর বেড়ে যায়।ভোটের বিনিময়ে তাদের নেতারা অনেক সুখের স্বপ্ন দেখান।
এমনকি অট্টালিকা গড়ে দেয়ার স্বপ্নও দেখান অনেক নেতারা। তবে ভোট চলে গেলে বস্তিবাসীদের কথা সবাই বেমালুম ভুলে যান। তাদের চাওয়া বেশি কিছু না, অযৌক্তিকও না।তারা একটু বসবাস করার জায়গা চান। পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে চান।কিন্তু সরকারের কাছে তাদের এ আওয়াজ পৌঁছায় না। কথায় বলে অভাগা যেখানে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়। বস্তিবাসীরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।যেখানে অসহায়, নিপিড়িত মানুষের সংখ্যা বেশি, সাহায্য-সহযোগিতা সেখানেই বেশি হওয়ার কথা থাকলেও বস্তিবাসীদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো। সেখানে নেই কোনো গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ খাবার পানিয় জলের ব্যবস্থা।
মূলত সারা দেশের ভূমিহারা, বেকার, জলবায়ু দুর্গতরাই বিভিন্ন নগরীর বস্তিগুলোতে জীবিকার তাগিদে আশ্রয় নিয়ে থাকেন।কিন্তু বস্তিতে বসবাস করার কারণে জল, টয়লেট, চিকিৎসা,শিক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের বাইরে পড়ে যায়।
মূলত অবহেলা থেকেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে হতাশার সৃষ্টি হয় এবং হতাশা থেকেই মানুষ বিপথে চলে যায়। পরিণামে সবচেয়ে বেশি ভোগে নারী ও শিশুরা। তাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা নেই বললেই চলে।স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে হয় বলে ভালো আবাসন জোটেনি তাদের।জন্ম থেকেই তারা অবহেলিত।বস্তিতে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ ন্যূনতম জীবনমানও নেই।
সরকারি সেবা কর্মসূচিতে মোটামুটি স্থায়ী নিবাসী ও নির্দিষ্ট শ্রেণিবর্গের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলো সেদিকেই মনোযোগী। হয়তোবা বস্তিবাসীদের জন্যে লক্ষ্য ভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে কৃতিত্বের পরিসংখ্যান জনসমক্ষে হাজির করতে সমস্যা হয়।কিন্তু নিজেদের প্রচার বাদ দিয়ে সেবার দৃষ্টিতে দেখলে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত বস্তিবাসীদের নিয়ে বাস্তব সেবামূলক ও উন্নয়নমূলক কাজের উদ্ভাবন করা।
বস্তিগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে যে তথ্য উঠে আসছে তা বস্তির জীবন মানের মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে গুরুতর সমস্যা রয়েছে এবং তা মেটাতে এগিয়ে আসছে না সরকারি ও বেসরকারি কোনো সংস্থা।তখনই দেখা দিচ্ছে ঠিক যেন প্রদীপের নিচে গাঢ় অন্ধকার।বিপুলসংখ্যক বস্তিবাসীদের এড়িয়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচির সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব।
দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পেট্রল বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর,যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।কিন্তু কথা হচ্ছে, কেন কাজ হচ্ছে না, বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে, অর্থায়ন হচ্ছে। শুধু প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারা লুটেপুটে খাচ্ছে বস্তিবাসীদের টাকা? এর জবাব সংশ্লিষ্টদেরই দিতে হবে বলে তাদের দাবি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584