শ্যামল রায়,কালনাঃ
প্রচণ্ড গরমে স্বস্তি নেই মানুষের।সেই সাথে গাছপালা সবজি চাষের ও নার্সারি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এই তীব্র দাবদাহে।শুকোচ্ছে ফুল অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে নার্সারির।আবহাওয়ার দাবদাহে খামখেয়ালিপনায় এ বার বিপর্যস্ত চাষিরা।পূর্বস্থলী ২ নম্বর ব্লকের অধীন কৃষি জমিতে ধান চাষের বিকল্প হিসেবে এলাকার চাষিরা ফুল চাষ কেই বেছে নিয়েছেন বেঁচে থাকার উপার্জনশীল ফসল হিসাবে।
পূর্বস্থলী রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলের জমিতে গড়ে উঠেছে একাধিক নার্সারি ফুলের বাগান।এছাড়াও পলাশপুলি,বেলগাছি,শিবতলা,পূর্বস্থলী, কালিকাতলা,পারুলিয়া,নবপল্লী,ফলেয়া প্রভৃতি জায়গায় কয়েক হাজার একর জমিতে ফল ও ফুলের চাষ হয়ে থাকে।এছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন নার্সারির মধ্যে দিয়ে বহু চাষি উপার্জন করে সংসার চালান।
প্রায় কয়েকশো চাষি এই নার্সারি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন।তাই তীব্র গরম হওয়ার কারণে গাছের গোড়ায় জল নেই তাই ফুল চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।পূর্বস্থলী স্টেশন থেকে ট্রেনে করে চারা পৌঁছচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে।বিকল্প চাষ হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুলের চারা তৈরির কাজ।পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পলাশপুলি ও পারুলিয়া এলাকার চাষিরা প্রায় কয়েক হাজার বিঘার ওপর বিশাল এলাকা জুড়ে নিজেদের জমিতে তৈরি করছেন এই চারা।
আরও পড়ুনঃ উৎপাদনে ঘাটতির ফলে ক্ষতির মুখে আম চাষিরা
লাভের নিশ্চয়তা থাকায় প্রতি বছর বাড়ছে চাষের এলাকা।এতে কর্মসংস্থানও হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার যুবকদের।বেশ কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় চাষের ছবি ছিল অন্য রকম। সব্জি বা ধান,পাটেরও চাষ করতেন চাষিরা। ফসল ঘরে আসলেও লাভের নিশ্চয়তা ছিল না।প্রায়ই বিক্রি করে পরের মরসুমের চাষের কাজ করতে গিয়ে দেনায় জড়িয়ে পড়তেন চাষিরা।
কিন্তু বেশ কিছু বছর ধরেই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। পূর্বস্থলী ও পলাশপুলির বেশ কয়েক জন চাষি প্রথমে ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের জমিতে ফুল ও ফলের চারা তৈরি করে। তারপর তাঁদের দেখে উৎসাহিত হন অন্যেরাও।আস্তে আস্তে এখানকার ফুল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও ভিন রাজ্য পাড়ি দেয়।
এই সকল ফুল বিভিন্ন হকার বন্ধুরা রাতের ট্রেনে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান বিক্রি করতে। পাশাপাশি ফুল গাছের চারা নিয়ে তারা জীবন জীবিকা অর্জন করে থাকেন কয়েকশো হকার শ্রমিক। তাই এলাকার বিকল্প চাষ বলতে নার্সারি বাগান এবং ফুল চাষ। ফুল চাষিরা জানান ‘গরম পড়ছে তাতে গাছ শুকিয়ে পড়ছে আর এই কারণে যদি ফুল চাষ নষ্ট হয় তাহলে চরম সংকটের মুখে পড়তে হবে আমাদের।’
ফুলচাষি আরজুল খান জানান, প্রতি বছর মার্চের দিকে চাষের জন্য জমি তৈরি করা হয়। চারার জন্য কিছু বীজ নিজেরাই তৈরি করেন । হাওড়া বা কলকাতার নামী বাজার থেকে কিছু চারা কিনেও আনা হয়।নভেম্বরের শুরু থেকেই বিক্রি হতে শুরু করে চারাগুলি।
ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে শীতের ফুল চারা বিক্রি। মার্চ-এপ্রিলে গরম পড়তেই বেলি, জুঁই, পাতাবাহারের চারা বিক্রি শুরু হয়।বর্ষা নামার আগেই অবশ্য চারা তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।সেই সময়ে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, নারকেল-সহ নানা ফলের চারা বিক্রি করা হয়।
কিন্তু এবছর যা গরম পড়েছে তাতে সব গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং কাস্টমার ও খুব একটা আসছে না।যারা পাইকারি নিয়ে যায় তাঁদের ও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।রীতিমতো গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে।এই গরম বেশি দিন থাকলে আর হয়তো নার্সারি চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে এমনটাই মত নার্সারি চাষিদের।
আরও এক নার্সারির মালিক জানান, যে এখানকার ফুল ফল এর গাছ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় অথচ এবারে যা প্রখর রোদ শুরু হয়েছে তাতে চারা গাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে আমরা পরামর্শ দিয়েছি নিয়মিতভাবে গাছের গোড়ায় যেন জল দেয়া হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কম হবে।
জানা গিয়েছে যে পূর্বস্থলী ১ নম্বর ও ২ নম্বর ব্লকের নানান এলাকায় এই ধরনের ফুল চাষ এবং নার্সারি গড়ে উঠেছে কিন্তু এই ধরনের আবহাওয়ায় মাটি ফেটে যাচ্ছে ফলে জল দিলেও জল দাঁড়াচ্ছে না l গাছগুলো মরে যাচ্ছে তাই প্রখর রোদে গাছের ব্যাপক ক্ষতি অল্প খরচে এই চাষ চাষিরা লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে প্রখর রোদে ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নার্সারি সাথে যুক্ত ব্যবসায়ীরা এবং চাষীরা।
পূর্বস্থলী ২ নম্বর ব্লকের অধিকাংশ চাষিরা এর বিকল্প চাষ হিসাবে নার্সারি ব্যবসাকে প্রধান হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
এই সকল নার্সারি থেকে প্রচুর গাছপালা ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় চোখ রাখলে দেখা যায় পূর্বস্থলী রেল স্টেশন থেকে প্রচুর হকার নার্সারি থেকে প্রচুর গাছপালা নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দিয়ে থাকেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584