সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ
পোস্ট অফিসের সঞ্চয় নিয়ে আস্থা হারাচ্ছে একাধিক সুন্দরবনবাসী। সরকারি প্রকল্পের বেনিফিসারদের পাশাপাশি পোষ্ট অফিসে থাকা গ্রাহকদের টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে পাথরপ্রতিমার বরদাপুর ব্রাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার গৌরহরি জানার বিরুদ্ধে।
একাধিকবার গিয়ে আজও মেলেনি কোনও সমাধান। পোস্টমাস্টার নিজের দোষ ঢাকতে উপর মহলের দোষারোপ করছেন। অভাব অনটন ভরা খেটে খাওয়া মানুষের তিলতিল করে গড়ে তোলা সামান্য সঞ্চয় পাওয়া নিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত পাথর প্রতিমার দুই গ্রাম পশ্চিম দারগাপুর আদিবাসীপল্লি ও বরদাপুর। এই দুই গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকা বলতে কাঁকড়া ধরা, মধু সংগ্রহ। সঙ্গে রয়েছে চাষ আবাদ । প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গলে বাঘ আর জলে কুমির নিয়ে জীবন চলে গ্রামবাসীদের।
আরও পড়ুনঃ গবেষণা বলে দূষণের সাথে আয়ু হ্রাসের কোনও সম্পর্ক নেই, দাবি জাভাদেকরের
নব্বই এর দশকে পশ্চিম দারগাপুর আদিবাসী পাড়ায় স্থাপিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের পোষ্ট অফিস, যেখানে সরকারি সুবিধা পাওয়া প্রকল্পের টাকা থেকে সাধারণ মানুষদের টাকা সঞ্চয় করত পোষ্ট মাস্টার গৌরহরি জানা।
দীর্ঘদিনের সাজানো সংসারে ইতি পড়ে ২০১৫ সালে, এলাকারই গৃহশিক্ষক মহিতোষ দাসের মায়ের জমানো টাকা না পাওয়া ঘিরে। এরপর ঝামেলা শুরু হয় আদিবাসী পাড়ার অনিল ভক্তার ৫০০০ টাকা পোষ্ট অফিসে জমা করা ঘিরে।
উক্ত ব্যক্তি ৫০০০ টাকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও সেখানে পোস্টমাস্টার ৫০০ টাকা লিখে রেখেছেন। এভাবে দশ গুণ টাকা নিজের পকেটে ঢোকাতেন গৌরহরি জানা। এ দিকে চৌর্যবৃত্তি নিখুঁত রাখতে নীল কালি দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা বসিয়ে দিয়েছেন তিনি। এভাবেই একের পর এক গ্রাহকের টাকা নয়ছয় করেছেন ভদ্রলোক।
আরও পড়ুনঃ হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীদের পথ অবরোধ
পুষ্পা পাত্র থেকে অঞ্জলি ভক্তা সবার বার্ধক্য ভাতা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাঁর নামে ।অনেকে এও দাবি করেছেন যে একাধিক গ্রাহকের জমানো টাকায় দশ বারো বছর পর সুদ নিজেই হাতে লিখে দিতেন তিনি।
আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করেছেন অনেকেই। প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক না থাকায় পোষ্ট অফিসের প্রতি ভরসা হয়ে দাঁড়ায় অধিকাংশ গ্রাহক। এলাকার মানুষ শিক্ষিত না হওয়ার সুযোগ নিতেন পোস্টমাস্টার । দুই গ্রামে কয়েক হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে বলে দাবি গ্রাহকদের।
পাথরপ্রতিমা থেকে কাকদ্বীপ, এমনকি ডায়মন্ড হারবার হেড পোস্ট অফিস থেকে বারুইপুর জোনাল অফিসে জানানো সত্ত্বেও এখনও মেলেনি কোনও সমাধান। জানানো হয় কলকাতার হেড পোস্ট অফিসেও। এরপর ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে দারস্থ হন কাকদ্বীপ এসডিও, পাথরপ্রতিমা বিডিও, পাথরপ্রতিমা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। সেখানেও মেলেনি সমাধান।
তবে পোস্টমাস্টারের নামে আনা এরকম অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তিনি, যদিও ৫০০ টাকার জায়গায় ৫০০০ টাকা লেখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584