ব্যক্তি মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় এবং বিশ্বাসের স্থান বলেই স্বীকৃত পরিবার।কিন্তু, পরিবারই মহিলাদের নিকট হয়ে উঠছে বিপদজনক।পরিচিত আত্মীয়দের নিকটই নারী অনিরাপদ।গতকাল মহিলাদের উপর হিংসা প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক দিবসে রাষ্ট্রপুঞ্জ,’অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম’ নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।রিপোর্টের প্রকাশিত তথ্যে প্রকাশ যে, বিশ্বজুড়ে মহিলাদের উপর হিংসার প্রধান উৎসই পরিজন।রিপোর্টের পরিসংখ্যানে প্রকাশ পেয়েছে ২০১৭ সালে সাতাশি(৮৭) হাজার মহিলাকে নানা কারণে হত্যা করা হয়েছে,যার মধ্যে পঞ্চাশ হাজার মহিলা নিহত হয়েছেন স্বামী বা প্রেমিকের অথবা নিকটাত্মীয়ের দ্বারা।এর মধ্যে আবার ত্রিশ হাজার খুন হয়েছেন স্বামী বা প্রেমিকের দ্বারা এবং কুড়ি হাজার মহিলার প্রাণ নিয়েছে নিকট আত্মীয়রা।সরকারি সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রকাশিত এই তথ্য থেকে প্রকাশিত যে,প্রতিঘন্টায় অন্তত ছয় জন মহিলা অত্যন্ত নিকট কারও হাতে খুন হচ্ছে।
এই তথ্যে এও প্রকাশিত যে,এই হত্যা শুধু কোন দেশ ধর্মের সীমারেখায় আবদ্ধ নয়।নিকটজনের হাতে খুন হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশী আমেরিকা ও আফ্রিকার মত দেশে।তবে ২০১৭ সালে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে খুন হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশী ঘটেছে এশিয়ায়।এই পরিসংখ্যান হিমশৈলের চূড়ামাত্র,সম্মান রক্ষার্থে যে হত্যাকান্ডগুলি ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নথিভুক্তই হয় না।ইরান ব্রাজিল ফ্রান্স সর্বত্রই চলছে এই হত্যালীলা।কিন্তু কেন?
নারীকে আজও মানুষের সম্মানে উন্নীত করতে পারেনি এই পৃথিবী।নারী হয় ‘দেবী’ নয় ‘নরকের দ্বার’।তাই হয় দেবী বলে পূজা করে নয় নরকের দ্বার বলে হত্যা করে।আর এই দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই কোথাও।আমাদের দেশের গার্হস্থ্য হিংসায় সবচেয়ে বেশী সাহায্যকারী যারা হন তারা,মহিলা।আবার এই হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সবচেয়ে বেশী দমিত করেন যারা তারাও মহিলা।কন্যা হয়ত শ্বশুর বাড়িতে শ্বাশুড়ি স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে তখন কন্যার মা বলেন,’মেয়েদের জীবন মা,মেনে নিতে হয়।’এই মেনে নেওয়ার শিক্ষার ফলশ্রুতিতেই আজ ভয়াবহ প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেই চলেছে।
বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা চলছে।কিন্তু নারীত্বের এই নিধন শুধু নারীর জীবন কেন্দ্রিক সমস্যা নয়।এ সমস্যা সমাজের অনেক গভীরে গ্রথিত।নারী যদি পুরুষের কল্পিত রূপের অনুসারী না হয় তবে তাকে হত্যা করা যায়,আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করায় কোন অপরাধ নেই যেন।মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা এ বোধ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই।ফলে নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন,এই আদিম বোধ থেকে মননকে মুক্ত করা।নারীকে নারীত্ব নয় মনুষ্যত্বে উন্নীত করা।আর মনুষ্যত্বে উন্নীত করার এই পক্রিয়ায় শুধু নারী নয় পুরুষকেও সামিল করতে হবে।আর সে প্রচেষ্টা শুরু হওয়া প্রয়োজন নিজেরদের পরিবার থেকেই।লিঙ্গ সাম্যের শিক্ষা পরিবারের নারী পুরুষ নির্বিশেষে চর্চাই এই ধ্বংসাত্মক প্রবনতার রক্ষাকবচ।
©Newsfront
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584