পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রথম নিউজ ফ্রন্টের মুখোমুখি তৃণমুল নেতা সৌমিক হোসেন
নিউজ ফ্রন্টঃ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কি ভাবছেন? মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমুল কংগ্রেস কতটা এগিয়ে?
সৌমিকঃ দেখুন আমাদের মুল যে জায়গাটা সেটা হলো ডোমকল পৌরসভার ভোট, সেখানে আমরা প্রমাণ করেছি। মুর্শিদাবাদ জেলায় আমরা যেমন জেলা পরিষদ দখল করেছি, পৌরসভা দখল করেছি তখন বিরোধীরা বলতো, নেতারা এসেছে ভোটাররা আসে নি। কিন্তু মানুষ প্রমাণ করেছে ভোটাররাও আমাদের সঙ্গে এসেছে। সেই দেখে বোঝা যায় যে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ বুঝতে পেরেছে যে উন্নয়ন করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দরকার।মানে তৃণমুল কংগ্রেসকে ভোট দিতে হবে। এটাকে দেখে আমার ধারণা যে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রত্যেকটা সিট তৃণমুল কংগ্রেস জিতবে, এবং মানুষও সেটাই চাইছে।
নিউজ ফ্রন্টঃ পঞ্চায়েত ভোটের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় তিন তারিখ শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ এবং বীরভুমে ভোট। কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?
সৌমিকঃ দেখুন এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার।আমরা এক একজন কর্মী। আমাদের কাজ হচ্ছে ভোটটা করতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।বাকি কি ডেট দিয়েছে না দিয়েছে সেটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমরা বারোমাস মানুষের সঙ্গে থাকি।মানুষের ওপর আমাদের আস্থা আছে।মানুষ সেইভাবে ভোট দেবে। ওসব নিয়ে আমরা ভাবি না। যেদিন ভোটের দিন হয়েছে নেত্রীর উন্নয়ন এত হয়েছে যে সেটা সামনে রেখে আমাদের বিশ্বাস মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েতের সব ভোট আমরা পাবো।
নিউজ ফ্রন্টঃ কিন্তু কংগ্রেস বলছে ভোট লুঠ হবে বলেই এই জেলার ক্ষেত্রে স্পেশালভাবে দিন ঠিক করেছে তৃণমুলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন।
সৌমিকঃ দেখুন কংগ্রেস কি বলছে এটা ওদের পার্টির ব্যাপার,ব্যাক্তিগত ব্যাপার।লোক না থাকলে কি বলবে? দেখুন আমি একটা জায়গায় গেলাম সেখানে কিছু পারলাম না। একটা কিছু তো বলতে হবে।না হলে লোকে বলবে এখানকার কংগ্রেস, সিপি(আই)এম উঠে গিয়েছে। আসলে ঐ নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।
নিউজ ফ্রন্টঃ কিন্তু তাঁরা বলছেন ডোমকল মডেলে ভোট হবে।ডোমকল মডেল কি?
সৌমিকঃ ডোমকল মডেল ডোমকলের মানুষই জানে।(হাসি)
নিউজ ফ্রন্টঃ সৌমিক হোসেন জানে না? যেখানে ডোমকল মানে সৌমিক হোসেন সৌমিক হোসেন মানে ডোমকল।
সৌমিকঃডোমকল মডেলটা বলতে গেলে ডোমকলের কর্মীরাই জানে।
নিউজ ফ্রন্টঃ আর সাধারণ মানুষ?
সৌমিকঃ সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে বলেই তো ডোমকল মডেল হয়েছে।মানুষ যদি না মানত তাহলে মডেলটা তৈরী হতো না।এত উন্নয়ন চলছে। আজকে ডোমকলে প্রায় দুশো কোটি টাকার কাছাকাছি কাজ চলছে।উন্নয়ন হচ্ছে।মানুষ তো মেনে নিয়েছে। মানুষ তো হাসি মুখে বলছে ডোমকলে উন্নয়ন হচ্ছে।আমরা এটাই চেয়েছিলাম। এই মডেলটা যদি পছন্দ না হতো তাহলে, মানুষ নিশ্চয় রাগ বিক্ষোভ দেখাতো।
নিউজ ফ্রন্টঃ কংগ্রেস, সিপিএমের ওপর মহল সরাসরি না বললেও বলছে নিচের তলার মানুষের অঘোষিত জোট হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটে। সেক্ষেত্রে কি বলবেন?
সৌমিকঃ জোটটা ঘোট হয়ে গিয়েছে।দেখুন ৯ তারিখে নমিনেশন জমা দেওয়ার শেষদিন। ওদের জোট হলে আমাদের ভালো। দুজনেই প্রার্থী দিয়ে দেবে তারপর জানবে জোট হয়েছে তাতে আমাদের লাভ হবে। এসব নিয়ে আমরা ভাবি না।মুর্শিদাবাদ জেলায় আমরা আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের নেত্রী, তাঁর উন্নয়নকে সামনে রেখেই এই জেলায় দলটা আমরা করছি। শুধু করেছি নয়, তারপর থেকে কিন্তু জেলায় দলটা একের পর এক শক্তিশালী হয়েছে।
নিউজ ফ্রন্টঃ বিজেপির গুরুত্ব কতখানি এই জেলায়?
সৌমিকঃ বিজেপি এই জেলায় নেই।
নিউজ ফ্রন্টঃ কিন্তু তাঁরা বলছেন জেলার সব আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন।
সৌমিকঃ সে কোথাও কংগ্রেস সি পি এম এর লোকেরা বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবে। এরা তো সামনা সামনি আসে না কোথাও। আসলে এ জেলায় কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি এক। আমরা ডোমকল পৌরসভায় দেখেছি কংগ্রেস,সিপিএম -এর লোকেরা বিজেপির প্রার্থী হয়।
নিউজ ফ্রন্টঃ ২০১৩ তে পঞ্চায়েতে ভোটের ফলাফলে তৃণমূলের যা অবস্থা ছিল তার থেকে গত পাঁচ বছরে বিরোধী দলের নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে এসে তৃণমুল শক্তিশালী (মাঝপথে)।
সৌমিকঃ নেতাদের কাছে টানার মুল কারণ হচ্ছে নেতাদের পায়ের তলায় মাটি না থাকলে নেতাদের অবশ্যই এখানে আসতে হবে।কর্মীরা নেতাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে। একসময় অধীরের লোকেরা বহরমপুর শহরে তৃণমুলের লোকেদের পেটাতো।প্রতিবাদ করবার লোক ছিল না। আমরা আসার পর পাল্টা দিয়েছি।লোকেরা সাহস পেয়েছে। কর্মীরা যখন চলে আসলো তখন নেতারা দেখলো আমার এর সাথে থাকব কি? নেতারা তৃণমুলে না আসলে আর নেতা থাকবে না, তাই আসছে,আরও আসবে।
নিউজ ফ্রন্টঃ বাবাকে ছাড়া (মান্নান হোসেন)এই প্রথম ভোটে লড়তে যাচ্ছেন। কতটা মিস করছেন বাবাকে?
সৌমিকঃ অবশ্যই মিস করছি। কারণ ছোট থেকে তাঁর পাশে থেকে সঙ্গে থেকে সবসময় লড়াই করেছি। এমন ভাবেই বাবা আমাদের তৈরী করছিল যে মান্নান হোসেনের ছেলে বলেই যে আমরা, বিশেষ করে আমি নেতা হয়েছি এটা কিন্তু ভুল। বাবা শেখাতো নিজে বড় হও।সেটা শেখাতো বলেই আমি নিজে দলের যুব রাজ্য সভাপতি ছিলাম।এই দলেই আমি প্রথম এসেছি।যেহেতু কংগ্রেস দলের যে অত্যাচার দেখেছি বাবার প্রতি সবসময়, মান্নান হোসেনকে কোন সভায় ডাকা হবে না। ব্লক সভাপতিকে নিষেধ করে দেওয়া। এসব অন্যায় দেখে আমি প্রথম তৃণমুলে এসেছি।চারমাস পর বাবাকে বুঝিয়ে এই দলে আমি নিয়ে এসেছিলাম।কাজেই বাবা আমাকে সেইভাবেই তৈরী করেছিল যে পলিটিক্সটা নিজের দমেই সব সময় করতে হবে। একটা জিনিস তো বাবা ঠিক সব সময় মাথার ওপর ছাতার মতো ছিল।এটা সবসময় মনে করি।
নিউজ ফ্রন্টঃ কিন্তু সেই বর্ষীয়ান নেতার অভাবে দলের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দ কিভাবে সামলাবেন?
সৌমিকঃ দেখুন আপনাকে একটা কথা বলি মান্নান হোসেন কংগ্রেসে ছিল বলে একসময় কংগ্রেস দলটা ছিল।এখানে আমাকে আমার দল যতটুকু দায়িত্ব দেবে আমি ততটাই করবো। গোষ্ঠীদ্বন্দ ডোমকলেও ছিল। এটা নেতৃত্বকে ঠিক করতে হবে ,গোষ্ঠীদ্বন্দ কিভাবে সামলানো যাবে। আমি দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি। রাজ্য যুব -র সাধারণ সম্পাদক।এবার আমি নিয়ম মেনেই দলটা করি। তাই আমাকে এখানকার প্রেসিডেন্ট যতটা কাজে লাগাবে আমি ততটাই করবো।
নিউজ ফ্রন্টঃ মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে কি বলবেন?
সৌমিকঃ দেখুন এগুলো নিয়ে আমি কিছু ভাবি না।বহরমপুর শহরে আমি একশোর ওপর ঠাকুর উদ্বোধন করি।কাজেই আমি এসব নিয়ে ভাবি না। মাথাতেও আনি না।আমার কাছে সবাই সমান। মানুষ সব এক। আমি বড় দিনেও চার্চে যাই, দুর্গা পুজায় মন্ডপে যাই, ঈদের সময় সব অনুষ্ঠানে অংশ নিই। আমরা বাংলায় বাস করি। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে আমরা লক্ষ্য করে চলি। দেখুন কোথাও কোনো যদি অশান্তি হয় তাতে ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। যারা দাঙ্গা বাঁধায় তাঁদের কোন ক্ষতি হয় না। যারা শীর্ষে বসে থাকে তাঁদের কিছু হয় না। এগুলো ফালতু। আমরা মুর্শিদাবাদ জেলায় বাস করি। এখানকার মানুষ খুব ভালো।আমাদেরকে খুব ভালোবাসে।আমরা একসঙ্গে থাকি। আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মীর রাকেশ রৌশন এবং বিদ্যুৎ মৈত্র
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584