শাস্ত্র মেনে মন্ত্রোচ্চারণ হয় না এই দুর্গা পুজোয়

0
54

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ

বালিপাল গ্রামেই রয়েছে কেঁদুয়াবুড়ির থান। প্রাচীন এক নিমগাছতলায় ভূগর্ভস্থ এক প্রাকৃতিক কুণ্ডে দুর্গারূপে পূজিতা হয়ে আসছেন কেঁদুয়াবুড়ি। সারা বছরের মতাে অব্রাহ্মণ বাগদি সম্প্রদায়ের দেহুরী দেবীর পুজো করে আসছেন। স্থানীয় বালিপাল, বাঘাঘেড়্যা, রামচন্দ্রপুর সহ আশপাশের ৩৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে কেঁদুয়াবুড়িই দেবী দুর্গা ।

নিজস্ব চিত্র

এমনকী সেই নিয়ম মেনে এখনও কেন্দুয়াবুড়ির থানে হাত চিরে রক্ত দিয়ে পূজোর পরই এলাকায় গৃহস্থের বাড়িতে ও সর্বজনীন মণ্ডপে পুজো শুরু হয়। এই দেবীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ও নানা জনশ্রুতি। ষােড়শ শতকে বেলিয়াবেড়া এলাকাটি চিয়ারা পরগনা অধীনে ছিল।

মুঘল সম্রাট আকবরের রাজস্বমন্ত্রী টোডরমল এই পরগনা গঠন করেন। এখনও অনেকের কাছে এই অঞ্চলটি উপজাতি অধ্যষিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুমানিক পাঁচশাে বছর আগে পুরীর ক্ষত্রিয় রাজকুমার বলিপালদেব রাজ্যচ্যুত হয়ে এই এলাকায় এ পৌছান।

নিজস্ব চিত্র

চারিদিকে তখন ছিল কেঁদ গাছের জঙ্গল। মাঝে একটি নিমগাছ। ক্ষুদার্ত কাতর হয়ে রাজকুমার বলিপালদেব নিমগাছের তলায় বসে পড়েন। সেই সময় এক উপজাতি কিশোরীর রূপ ধরে দেবী তাকে কেদফল খেতে দেন। বলিপালদেবকে দেবী স্বপ্নাদেশ জানান।

নিজস্ব চিত্র

নিমগাছের তলায় দেবী কুণ্ডের ভিতরে তিনি অধিষ্ঠিতা। উন্মুক্ত আকাশ প্রাঙ্গণে দেবী পুজো চান। তবে দেবী শর্তও দেন যে, কোনও মন্দির প্রতিষ্ঠা করা চলবে না। নিম্নবর্ণের বাগদিরাই পুজো করবেন। এরপর দেবীর কৃপায় পরাক্রমী রাজা হন বলিপালদেব। রাজার নাম অনুসারে গ্রামের নাম হয় বালিপাল। আর কেদল থেকে দেবীর নাম হয় কেন্দুয়াবুড়ি।

আরও পড়ুনঃ গোকুলপুরে দুর্গোৎসবের উদ্বোধনে শুভেন্দু

জনশ্রুতি, বলিপালদেবের পরে এলাকাটি ভুঁইয়া রাজাদের অধীনে যায়। সেই সময় বগিহানায় সুবর্ণরেখার নদীপাড়ের মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ভুঁইয়া রাজার অধীন বাগী সম্প্রদায়ের লেঠেলরা লড়াই শেষে মারাঠা বর্গিদের প্রতিহত করেছিলেন ।

এমনকী লাহোর ধারালো ‘রামদা দিয়ে একশো বগির মাথা কেটেছিলেন রাজার বাগদি পাইকা।’ বগি দমনের পর দুটি প্রাচীন রামদ্য নিরাকার দেবীর সামনে রেখে অপুজোর প্রচলন করেন বাগদির। এই থানে এখন হাতি ঘোড়ার মুর্তি রাখা রয়েছে।

আবার এ পুজোয় দেবীকে স্পর্শের বা মন্ত্রোচ্চারণের অধিকার নেই পৈতাধারী ব্রাহ্মণের। পুজো করেন নিম্নবর্ণের দেহুরিরা। দেহুরির হাত চিরে দেওয়া রক্তই দেবীর পাদর্ঘ্য।

এ পুজোয় আবার শাস্ত্র মেনে মন্ত্রোচ্চারণ হয় না। ওই এলাকায় আজও পুজো হয় সেই পুরোনো রীতি মেনেই। ভক্তের সমাগম ও ব্যাপক পরিমানে। ওই স্থায়ী মন্ডপের পাশেই গ্রামবাসীদের উদ্যোগে হয় একটি সর্বজনীন দুর্গাপুজোও।

এবছর ৬৫বছরে পা দিল এই সর্বজনীন পুজো। কোনো থিম ভাবনা ছাড়াই সাবেকি মন্ডপে পূজিতা হন মা দুর্গা। ওই কেন্দুয়া মাতার স্থায়ী মন্ডপের পুজোর পরেই পুজো হয় সর্বজনীন মন্ডপে।

স্থানীয় বাসিন্দা বৃহস্পতি নায়েক, অর্জিত সাঁতরা, চিত্তরঞ্জন দণ্ডপাঠ, রাহুল বাগ, আকুল কুইলা’রা বলেম, ‘এই কেন্দুয়া মাতার থানে এখনো পুরোনো রীতি মেনেই পুজো হয়। এখনও এই পুজোতে রামচন্দ্রপুর, বড় আসনবনী, কাজলা, চৈনিশোল, বাঘাগৈড়া এলাকা থেকে ভক্তদের সমাগম হয় চোখে পড়ার মতো।’

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here