মনের অসুখ দূর করার টিপস দিলেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পূজা সরফ

0
113

নবনীতা দত্তগুপ্ত , বিনোদন ডেস্কঃ

করোনার জেরে লকডাউন আর তার জেরে শয়ে শয়ে মানুষের বেকারত্ব আজ এক বড় আর্থ-সামাজিক অবস্থায় সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে মানবজীবনকে। বাড়ছে অনিশ্চয়তা। তার ফলে ডিপ্রেশনে ডুবছে মন। মনের অসুখ বাড়ছে নানা বয়সের মানুষের মধ্যে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই বিষয় থুড়ি সমস্যাকে মাথায় রেখে নিউজ ফ্রন্টের সঙ্গে কিছু কথা ভাগ করে নিয়েছেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পূজা সরফ। সুদূর আমেরিকা থেকে লিখে পাঠিয়েছেন খসড়া। রইল এই কলমে।

Puja Saraf | newsfront.co
পূজা সরফ

অস্থায়ী চাকরিজীবিগণ, শিল্পী, বা যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের উদ্বিগ্নতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অবসাদ এবং কোনও আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে কীভাবে বিরত রাখবেন সেই ব্যাপারে তিনি জানান- “অস্থায়ী বা অনিয়মিত কর্মরত কর্মীদের জন্য, কখন পরবর্তী বেতনের চেকটি আসবে বা আদৌ আসবে কি না, এই সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা অনেক উদ্বিগ্নতা ও অবসাদ নিয়ে আসতে পারে। যার ফলে আপনার জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপন সমস্যাবহুল করে তুলতে পারে।

উদ্বিগ্নতা “যদি এমন হয়”-মূলক প্রশ্নে পরিণত হয়ে যায়। যদি আমি কাজ খুঁজে না পাই, আর কোনও টাকা না থাকে, দেউলিয়া হয়ে যাই, আমাকে বাড়ি বিক্রি করতে হয়, এবং গৃহহীন হয়ে যাই? নেতিবাচক চিন্তাসমূহ আমাদের মধ্যে উঁকি মারে এবং এই সময়গুলিতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জট পাকিয়ে ওঠে। কাজ ও আর্থিক অবস্থা সম্পর্কিত চিন্তাসমূহ নিজের প্রতি সন্দেহে পরিণত হয়, যেটি আপনাকে আপনার নিজের যোগ্যতা ও আপনার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তোলায়।

আরও পড়ুনঃ দশ মিনিটে ডিটক্সিফিকেশন- প্রাচীন এই আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি আপনাকে করবে রোগমুক্ত

আপনি যখন এই চিন্তাগুলি করবেন, তখন আপনার যা আছে সেটি নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার উৎসাহ হারিয়ে যাবে বা যেতে পারে। আপনার উদ্বিগ্ন মন থেকেই এইসব বিকৃত চিন্তাভাবনা উদ্ভব ঘটে। আপনি হয়ত নিথর, অবসন্ন ও নিরাশ অনুভব করতে পারেন। আপনাকেই এই চিন্তাগুলিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য সচেতন ও প্রস্তুত হতে হবে।

একেকবারে একটি করে মুহূর্ত ও একদিন করে সময় নিন, এবং ভবিষ্যতের প্রতি অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা না করার চেষ্টা করুন। কিছু উদ্বিগ্নতা অবশ্য উপকারী, কারণ এটি আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। যাইহোক, যদি একই চিন্তাভাবনা আপনার মাথায় কোনও নতুন সমাধান/ বুদ্ধি ছাড়াই চলতেই থাকে , তবে আপনি সম্ভবত অতিরিক্ত ও নিষ্ফল দুশ্চিন্তা করছেন।”

তিনি আরও জানান, আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন ও নিয়ন্ত্রণহীন জিনিসগুলির মধ্যে পার্থক্য বের করার চেষ্টা করতে থাকুন। উদাহরণস্বরূপ, সম্ভবত সামনের সপ্তাহে আপনি কাজ পাবেন কি না তার উপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ নাও থাকতে পারে, তবে আপনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যা আছে তা হল এর খোঁজ করতে থাকা।

আরও পড়ুনঃ একা থাকা মানেই নিঃসঙ্গ নন, এঁদের নিজস্ব কল্পনার জগৎ থাকে

আপনার মনের কথা শুনবেন না যখন এটি নেতিবাচকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী দিতে থাকবে, যে এটি হতাশামূলক তাই চেষ্টা করার কোনও অর্থ হয় না। যখন আপনার ১০ রকমের দুশ্চিন্তা হয়, তখন একেকবারে একটি করে নিয়ে ভাবুন। যখন আপনি একটি চাকরির জন্য আবেদন করছেন, তখন সেই মুহূর্তে শুধু সেটিই একমাত্র জিনিস যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাই ওটার উপরেই আপনার সকল উর্জা কেন্দ্রীভূত করুন।

আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়াবলীর জন্য, গতানুগতিক পন্থার বাইরে চিন্তা করার চেষ্টা করুন—উদাহরণস্বরূপ, যদি টাকার ঘাটতি দেখা দেয়, তবে সেই সময়টুকু আপনি কারো কাছ থেকে টাকা ধার করতে পারবেন কিনা, বা খরচপাতি কমানো, কিছু বিক্রয় করা বা কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য অন্য কোনও দক্ষতা ব্যবহার করতে পারেন কি না? আপনার মনকে প্রাথমিকভাবে সবধরনের বুদ্ধি নিয়ে আসতে দিন, এরপর কোন কাজটি আপনার জন্য ভালো হবে সেই সম্পর্কে অন্তিম সিদ্ধান্ত নিতে সচেতনভাবে এদের প্রত্যেকটির সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনা করুন। যখন আপনি বিশেষভাবে আটকে গেছেন বলে মনে করেন, তখন আপনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারবেন এমন কারো সঙ্গে পরামর্শ করুন।

অবশেষে, আপনাকে এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য- ভালো ঘুম, নিয়মিত খাবার ও জল, কিছু শারীরিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক যোগাযোগের মতো মৌলিক কাজে নিজেকে নিযুক্ত রাখতে হবে।

যদি আপনি একা কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন বা আপনি এমনিতেই একজন অন্তর্মুখী মানুষ হয়ে থাকেন এবং কারো সামনে নিজেকে উপস্থাপনা করতে কাঠিন্য বোধ করেন, তবে থেরাপিস্টের মতো কোনও পেশাদারের সঙ্গে প্রথমে কাজ করতে শুরু করুন। আপনার জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এবং যার কাছে আপনার তথ্যাবলী ব্যক্তিগত ও গোপন থাকতে পারে এমন একজন অচেনা ব্যক্তির নিকট নিজের মনের কথা বলা মাঝেমাঝে সহজতর হয়ে থাকে।

কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যার প্রবণতা অনুভব করলে তা বোঝার উপায় প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ

১)নিরাশ অনুভব করা
২) নিজেকে অপছন্দ করা বা ঘৃণা করতে শুরু করা
৩)আপনার কোনও মূল্য নেই বা অন্যের উপরে আপনি বোঝাস্বরূপ এমন অনুভব করা
৪) কাজেকর্মে উৎসাহ হারানো
৫)অনেকদিন ধরে অনবরত দুঃখী অনুভব করা যেখানে কোন কিছুই আপনাকে আনন্দিত করে না

৬) কারণে অকারণে কান্নাকাটি করা
খিটখিটে মেজাজের হয়ে ওঠা
৭) অন্যদের থেকে নিজেকে পৃথক করে নেওয়া
৮) ঘুম বা খাওয়ার রুচি হারানো, অথবা অতিরিক্ত ঘুমানো ও স্বাভাবিকের থেকে বেশি খাওয়া
৯) বিরক্ত ও বিশ্রান্ত অনুভব করা
১০) আপনি করেন না এমন আচরণ করা, যেমন কয়েকদিন ধরে স্নান না করা বা নিজেকে পরিষ্কার না করা।
১১) নিজেকে আঘাত করা, অতিরিক্ত মদ্যপান, বা অন্যকোনও মাদক গ্রহণের মতো আত্ম-ধ্বংসী আচরণ বৃদ্ধি পাওয়া
১২) ভবিষ্যত সম্পর্কিত দীর্ঘকালীন কল্পনা করতে না পারা, এবং
১৩) অন্যেরা দেখতে পাচ্ছেনা এমন জিনিস শুনতে বা দেখতে পাওয়া, বিশেষ করে যদি সেই সকল চিন্তাসমূহ যা আপনার নিজেকে আঘাত করতে বলে।
১৪) “জীবনে বেঁচে থাকার কোনও মূল্য নেই; কোনদিন কোনকিছুই পরিবর্তন হবে না; আমি এর থেকে নিস্তার পেতে চাই; মৃত্যু আরো সহজ হবে” এমন ধরনের মৃত্যু সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা হওয়া
১৫) সময়, স্থান, ও কৌশলের মত নিজের মৃত্যু সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করা
১৬) আপনার কাজকর্মের সুরাহা করা, বিদায় জানানো, আত্মহত্যার জন্য অনুশীলন করার মত চিন্তাভাবনাসমূহ

যদি আত্মহত্যার প্রবণতা অনুভব করেন, তবে একজন পেশাদারের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি হেল্পলাইনে আপনার কল করা উচিত। শহর অনুযায়ী হেল্পলাইনসমূহ এখানে তালিকাভূক্ত আছে: http://www.suicide.org/hotlines/international/india-suicide-hotlines.html
আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধ গ্রহণ শুরু করার কথা বিবেচনা করা উচিত। অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার মতই, মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলিরও ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন, বিশেষ করে যদি আপনি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যান যেখানে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here