মনিরুল হক,দিনহাটাঃফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল দিনহাটা ২নং ব্লক। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের জেরে একটি বোলেরো গাড়ি,আঠারোটি বাইক সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে দিনহাটা ২ ব্লকের বড়শাকদল কুচনী এলাকায়।ওই ঘটনার জেরে এক তৃণমূল যুব কংগ্রেস কর্মী আহত আহত হয়েছে। আহত ওই যুব কর্মীর নাম রুহুল আমিন।সে চিকিৎসাধীন রয়েছে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে।
ওই ঘটনার জেরে ওই এলাকার ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ১৮ টি ভাঙ্গা বাইক, ১টি বোলের গাড়ি,বেশ কয়েকটা বোম উদ্ধার করেছে। ওই এলাকায় প্রচন্ড উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, এদিন দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসে বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস দাস তাঁর অনুগামীদের নিয়ে প্রায় ১০০টি বাইক ও একটি বোলেরো গাড়ি করে প্রায় শ’দেড়েকের একটি দল কুচনী গ্রামের দিকে যায়।
সেই সময় তারা ওই গ্রামের রসিদুল মিঞা(ডাবলু মিয়া) নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ফেলতে শুরু করে।সেই সময় বাড়ির লোকজনদের চিৎকারে গ্রামের আশপাশের মানুষ ছুটে আসতে থাকে।তা দেখে বোলেরো গাড়ি ও ২০টি বাইক ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বাকি সব পালিয়ে যায়। ক্ষুব্ধ জনতা একটি বাইকে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ১৯টি বাইক ও বোলেরো গাড়িটি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তাদের যৌথ উদ্যোগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ প্রচুর বোম উদ্ধার করে বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরজাহান বিবি, জমিলা বিবি,পারভিন বিবি প্রমুখরা বলেন,অষ্টমীর দিন রাতে রসিদুল মিয়া ওরফে ডাবলু মিয়ার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে কোন এক পূজা মণ্ডপে যায়। তারপর নবমীর দিন দুপুর সাড়ে ১২টা ১টা নাগাদ বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস দাসের নেতৃত্বে প্রায় ১৫০-২০০ লোকজন প্রায় ১০০টি বাইক ও একটি বোলেরো গাড়ি নিয়ে এসে কুচনী গ্রামের রসিদুল মিঞার (ডাবলু মিয়া)বাড়িতে ভাঙচুর,বোম ছুঁড়ে মেরে ও বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেন। তাঁরপর ওই বাড়ির মহিলারা চিকার চেঁচামেচি করতে থাকে। চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন ছুটে আসে। তারপর ওই উত্তেজিত জনতা ওই বাইক ও বোলেরো গাড়িটিকে আটক করে ভাঙচুর করে। তাদের অভিযোগ,এলাকার প্রধান হয়ে কি করে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাধারন মানুষের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে। তাই এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাঁর গাড়িটি ও বাইক গুলিকে ভাঙচুর করে। আর বাকি বাইক সহ সকলেই পালিয়ে যায়। এমনকি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ প্রধানের গাড়ি থেকে বোম গুলি উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে রসিদুল মিঞার (ডাবলু মিয়া) বলেন, “আমি কোচবিহার জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক নিশীথ প্রামাণিকের সাথে বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েতের হেদার হাট গ্রামের একটি পূজাতে গিয়েছিলাম।এটা আমার বড় অপরাধ। আমি কেন নিশীথের সাথে গেলাম।এটা নিয়ে আমাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারপর বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস দাসের নেতৃত্বে ১০০ বেশী বাইক নিয়ে নবমীর দিনে দুপুরে আমার বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে বোম ফেলে,আগুন লাগিয়ে দেয়।ওই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। হয়ত বাড়িতে থাকলে আমাকে ওরা মেরে ফেলত।তারপর এলাকার কিছু মহিলা প্রথমে বাধা দেয়। তারপর তারা সেখানে বোম মারতে থাকে। পরে তাদের চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে।তাদেরকে ঘিরে ধরে ২০-২১ টার মত বাইক সহ একটি বোলেরো গাড়ি উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করে।
এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বড়শাকদল অঞ্চল সভাপতি মানিক বর্মন বলেন, “বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস দাসের নেতৃত্বে এদিন কুচনী গ্রামের রসিদুল মিঞার (ডাবলু মিয়া) বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান তাপস দাস বলেন, “আমরা গ্রামের পূজোর প্যান্ডেল গুলিতে চাঁদা দিয়ে ফিরছিলাম।সেই সময় কুচনী গ্রামে একদল দুষ্কৃতি অতর্কিত ভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়।আমাদের গাড়ি গুলি ভেঙে দেয়।প্রানে বাঁচার তাগিতে আমরা সেখান থেকে পালিয়ে আসি।আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন। আমি একজন এলাকার প্রধান হয়ে এধরনের ঘটনা করতে পারি না।”
সাহেবগঞ্জ থানার আই সি হেমন্ত কুমার শর্মা বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ঘটনাস্থল থেকে কিছু বোমা, ১টি বোলেরো গাড়ি, ১৮টি বাইক আমরা সেখান থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। ওই ঘটনায় এখন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584