নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
মেদিনীপুর শহরের দুই নামজাদা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ডিগ্রি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের আরটিআই রিপোর্টেও। জল গড়িয়েছে নবান্ন পর্যন্ত। যা নিয়ে রীতিমতো সরগরম জেলার চিকিৎসক মহল।
ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডল ধাড়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ‘কনসালটেন্ট নিওনেটলজিস্ট ও পেডিট্রিসিয়ান’। প্রেসক্রিপশানে নামের পাশে জ্বল জ্বল করছে এমডি, ডিএনবিটির মতো ডিগ্রি। শহরের রবীন্দ্রনগরে ঝাঁ চকচকে চেম্বার। ২০০৩ সাল থেকে মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্র নগরে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসাবে প্র্যাকটিস করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৩ টি কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা প্রশাসনের
অপরজন, ডাঃ শশীভূষণ পাণ্ডে। শহরের নামজাদা রেডিওলজিস্ট নামেই পরিচিত। প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী তার নামের পাশে রয়েছে ডিএমআরডি, এমডি ডিগ্রি। একটি নাসিংহোমে ২০১৭ সালে রেডিওলজি বিভাগের ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত তিনি। এক বেসরকারি হাসপাতালের মালিক ও চিকিৎসকদের অভিযোগ, এমডি ডিগ্রি না থাকা সত্বেও দুই চিকিৎসক প্র্যাকটিস করছে এমডি ডিগ্রি লিখে ।
ইতিমধ্যেই সমর দাস, ডাঃ সৌমেন সিনহা রায় ও ডাঃ রমেন সিনহা রায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল, মুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভান্স সেল থেকে শুরু করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে। অভিযোগ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ‘দিদিকে বলো’ ও সিআইডির কাছেও।
আরও পড়ুনঃ সম্পত্তি বিক্রির কাজ শুরু করল বিএসএনএল
অভিযোগকারীদের সপক্ষেই তথ্য দিয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। তথ্য জানার অধিকার আইনে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডল ধারা। এবাদে তার আর কোনো ডিগ্রি নেই।
আরও পড়ুনঃ মোবাইলের আবদার না মেটানোয় আত্মঘাতী যুবক
অপর দিকে একই ভাবে তথ্য জানার অধিকার আইনে জানানো হয়েছে, ডাঃ শশীভূষন পাণ্ডে ১৯৯৭ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। ২০০১ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এম আর ডি পাশ করেন। তবে তারও এমডি ডিগ্রি নেই।
ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডল ধারার দাবি, তিনি সেন্ট পিটারসবার্গ থেকে এমডি পাশ করেছেন। যদিও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন তার ডিগ্রীর মান্যতা দেয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইণ্ডিয়া।
প্রশ্ন এড়িয়ে একই দাবি করেছেন ডাঃ শশীভূষণ পাণ্ডেও। এমনকি সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারান তিনি।
আরও পড়ুনঃ গাড়ির অভাবে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়ে আছে করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মী
যদিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পৌঁছানোর পরেই বদলে গিয়েছে শহরের নামজাদা শিশু চিকিৎসক ডাঃ সন্ধ্যা মণ্ডল ধারার প্রেসক্রিপশান। প্রেসক্রিপশান থেকে বাদ গিয়েছে ডিএনবিটি ডিগ্রি।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মেদিনীপুর শাখাও। আইএমএ-এর জেলা সম্পাদক ডাঃ কৃপাষিন্ধু গাঁথইতের দাবি, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের মান্যতা প্রাপ্ত ডিগ্রি ছাড়া এভাবে প্র্যাকটিস বেআইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আইএমএ-এর সম্পাদক।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাই চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে।
তবে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে শহরের বুকে কীভাবে এই দুই চিকিৎসক এভাবে প্র্যাকটিস চালাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে চিকিৎসক মহল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584