নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ঘোষণা করেছে যে তারা প্রথমবারের মতো বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করবে, বিশেষ করে যারা উপসাগরীয় অঞ্চলের মান উন্নয়নে কাজ করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেন, যোগ্যদের মধ্যে বিনিয়োগকারী, মেধাবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং শিল্পীরা অন্তর্ভুক্ত হবেন।
তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখতে পারবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। শেখ মোহাম্মদ জানান, তাঁদের লক্ষ্য হল সেইসব মানুষকে আকর্ষণ করা যারা তার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।
তবে, এক্ষেত্রে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার নিয়ম নেই বলেই তিনি জানিয়েছেন। বরং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাজ পরিবার বা কর্মকর্তারাই মনোনীত করবেন যে তাঁরা কাদের নাগরিকত্ব দেবেন।
এরপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে যে এই মনোনীত ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হবে কি না।
করোনা ভাইরাস মহামারি এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় আরব আমিরশাহীর পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি কয়েক হাজার বিদেশি এই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সাধারণত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয় না। তবে,আবুধাবি ভিত্তিক পত্রিকা দ্যা ন্যাশনাল-এর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দেওয়া হবে যাতে তাঁরা দেশটির গভীর ভিত তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন।
মূলত আর্থিক ও পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর এই উত্থান বেশীরভাগটাই নির্ভর করে প্রবাসীদের ওপর। সেদেশে প্রবাসীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা যাদের ৯০% এর বেশি কর্মক্ষেত্রে যুক্ত।
বিদেশি কর্মীদের সাধারণত নবায়নযোগ্য ভিসা দেওয়া হয় যা বেশ কয়েক বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং সেই ভিসা মূলত চাকরির সাথে যুক্ত থাকে।
স্বল্প আয়ের শ্রমিকরা দেশটির অর্থনীতি গড়ে তুলতে, নির্মাণ ক্ষেত্রে, হোটেল ব্যবসা এবং ভ্রমণ খাতে জনবল সরবরাহে মূল ভূমিকা রেখেছে।
এই শ্রমিকরা তাদের উপার্জনের বড় অংশ প্রায়শই নিজ দেশে থাকা পরিবারকে পাঠিয়ে দেয়।
তাদের মধ্যে অনেকে দেশটিতে কয়েক বছর থাকলেও তাদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনও আনুষ্ঠানিক সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং তাদের জন্য কল্যাণমূলক কোন সুবিধারও ব্যবস্থা নেই।
স্বল্প-আয়ের শ্রমিকদের যেখানে অবহেলিত রাখা হয়েছে সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বিনিয়োগকারী, শিক্ষার্থী এবং পেশাদার কর্মীসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির মানুষদের জন্য দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে।
২০১৯ সালে শেখ মোহাম্মদ একটি গোল্ডেন কার্ড ভিসা পদ্ধতি চালু করেছিলেন যার আওতায় চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, এবং স্কুলে বেশ ভালো ফল করা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাদারদের পরিবারসহ ১০ বছর থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ পুতিন নন বিলাসবহুল অট্টালিকার মালিক বলে দাবি করলেন কোটিপতি, তোলপাড় রাশিয়া
গত বছর আরও বেশি সংখ্যক লোকদের এই সুযোগ দেওয়া হয়। ওয়াম নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, নতুন নাগরিকত্ব প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগকারীদের সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে সম্পত্তির মালিক হতে হবে, চিকিৎসকদের এমন কোন একটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে হবে যার বিশেষ চাহিদা রয়েছে, উদ্ভাবকদের সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে অনুমোদিত পেটেন্ট গ্রহণ করতে হবে এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে হবে।
নতুন পাসপোর্টধারীরা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এই জনকল্যাণ ব্যবস্থার আওতায় যোগ্য বিবেচিত হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। দেশটি আনুমানিক ১৪ লাখ নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ঋণ এবং অনুদানের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ দেশজুড়ে সতর্কতা জারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আশঙ্কা আভ্যন্তরীণ হামলার
নাগরিকত্ব সাধারণত উপসাগরীয় দেশগুলোর বাসিন্দাদের দেওয়া হয় না। এটি কেবলমাত্র আমিরশাহির পুরুষদের স্ত্রী এবং সেদেশের বাবার সন্তানদের দেওয়া হয়।
বিদেশিদের বিয়ে করা আমিরাতি মায়ের সন্তানরা নাগরিকত্ব পায় না তবে পরিবর্তে তাদের আবেদন করতে হয়, এই প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584