নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
সারা বাংলার বিভিন্ন জেলার সাথে তাল মিলিয়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে বর্ণময় সংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হলো একতাই সম্প্রীতি উৎসব। রাজ্য তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন দিনের এই অনুষ্ঠান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ চত্বর ও প্রদ্যুৎ স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, সাংসদ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া,জেলা শাসক পি মোহন গান্ধী, জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিং হাজরা,সহ-সভাপতি সভাধিপতি অজিত মাইতি, বিধায়ক দীনেন রায়, মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি,আশীষ চক্রবর্ত্তী, শ্রীকান্ত মাহাত,গীতা ভূঞ্যা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। সবাইকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক অন্যন্যা মজুমদার।
উপস্থিত অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রক্ষার বার্তা দেন। প্রথম দিনে জেলার তিনটি মহকুমার সেরা পুজো কমিটি গুলোকে সেরা প্রতিমা, সেরা মন্ডপ,সেরা পুজো এই তিনটি বিভাগে বিশ্ববাংলা শারদ সম্মানে পুরস্কৃত করা হয়। বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার লাভ করে যথাক্রমে রবীন্দ্রনগর সর্বজনীন,আমলাশুলী সর্বজনীন,সঙ্ঘশ্রী সর্বজনীন, বিধাননগর সর্বজনীন, রাঙ্গামাটি সর্বজনীন,সোনাখালী স্কুলপাড়া সর্বজনীন,নেতাজী ব্যয়ামাগার, ছোটবাজার সর্বজনীন,সৃজনী সোসিও কালচার এসোসিয়েশন প্রভৃতি দুর্গাপূজা কমিটিগুলি। তিন দিনের অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা অংশ নেন। প্রথম দিন সঙ্গীতে অংশ নেন পারিজাত বাংলা ব্যান্ডের শিল্পীরা এবং সুদক্ষিণা চক্রবর্তী।
নৃত্যে অংশ নেন সৃজনী ভূমি ও নটরাজ ড্যান্স একাডেমীর শিল্পীরা।এদিনই সঙ্গীতে আসর মাতালেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও এরিনা মুখার্জি।অসাধারন শারীরিক কলাকৌশলের মাধ্যমে “রায়বেঁশে” নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের হৃদয় জিতলেন পূর্ব বর্ধমান থেকে আগত সহদেব মাঝি ও তাঁর সম্প্রদায়।দ্বিতীয় দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বরলিপি’র শিল্পীরা। আবৃত্তি ও শ্রুতি নাটকে অংশ নেন কাব্য ও কল্যার শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন কল্লোল সংস্থার শিল্পীরা। এদিনই জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত,নাটক সহযোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়। দ্বিতীয়দিনে মনজুড়ানো সঙ্গীতে আসর মাতিয়ে গেলেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী স্বাক্ষর বসু ও পারভীন সুলতানা। বিশেষ করে পারভীন সুলতানার গলায় ভক্তিমূলক কীর্তন গান ছিল অসাধারণ। শেষ বেলায় ঢাল, তলোয়ার ,লাঠি সহযোগে অসাধারণ “রাভা”নৃত্য উপহার দিয়ে হলের দর্শকদের প্রশংসা কুড়ালেন জলপাইগুড়ি থেকে আগত তাপসী রাভা ও তাঁর সম্প্রদায়। তৃতীয় দিনে সঙ্গীতে অংশ নেন মেদিনীপুরের জনপ্রিয় বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আলোক বরণ মাইতি ও তাঁর সম্প্রদায় এবং সঙ্গীত শিল্পী উজ্জ্বয়িনী দাশগুপ্ত। শ্রুতি নাটক পরিবেশন করা হয় মেদিনীপুর কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সম্মিলনীর পক্ষ থেকে। আবৃত্তি পরিবেশন করেলেন স্বর-আবৃত্তির ‘কবিতাস্কোপ’ এর শিল্পীরা। নৃত্যে অংশ নিলেন “আঙ্গিকম্” ও “তালম্” সংস্থার শিল্পীরা। এদিন দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত “মারুণি” নৃত্য উপহার দেন দুর্গা লামা ও সম্প্রদায়। শেষ লগ্নে মনভোলানো জমাটি গানে আসর মাতালেন উদীয়মান সঙ্গীত শিল্পী অরিত্র দাশগুপ্ত ও শিল্পী গার্গী ঘোষ। বিশেষ করে অরিত্র দাশগুপ্ত’র উপস্থাপনা ছিল অনবদ্য। দর্শকদের অনুরোধে একের পর এক কালজয়ী গান গেয়ে অরিত্র উপস্থিত দর্শকদের হৃদয় জিতলেন।
তিন দিনের এই অনুষ্ঠানকে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে সর্বক্ষণ সশরীরে উপস্থিত থেকে সামনের সারি থেকে পরিচালনা করলেন জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক অন্যন্যা মজুমদার।মনোজ্ঞ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যান মেদিনীপুরের বিশিষ্ট সঞ্চালক রঞ্জন দাস।জেলা পরিষদ চত্বরে ছিল একতাই সম্প্রীতি ও উন্নয়ন মূলক কাজের উপর তৈরি প্রদর্শনী। এরই পাশাপাশি ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র। তিন দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সহ উপস্থিত দর্শকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানান জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584