নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
আজ ২৪ জুলাই। ১৯৮০-র এই দিনেই বাঙালিকে কাঁদিয়ে চিরতরে বিদায় নেন মহানায়ক উত্তমকুমার। আজ তাঁকে স্মরণের জন্য একটা বিশেষ দিন বলে মনে করি আমরা এক শ্রেণীর হুজুগে বাঙালি। কত না লেখা লিখি, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভিডিও বানাই। সত্যি করে বলুন তো, তাঁকে স্মরণ করতে কি কোনও নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন পড়ে? তাঁকে নিয়ে লিখতে কি নির্দিষ্ট দিনের দরকার হয়? হয় না। তবু এই দিনে তাঁকে লেখায়, বলায় স্মরণ না করাকে নিজেদের অপরাধ বলে মনে করি আমরা লিখিয়ে-বলিয়েরা।
অমন একজন মানুষের পাশে বসে ইন্টারভিউ নেওয়ার ভাগ্য হয়নি। এই সাংবাদিকের পৃথিবীর আলো দেখার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। তবে, সাংবাদিকতার পেশায় আসার সুবাদে মহানায়কের ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জানার সুযোগ হয়েছে নানা সময়ে বিভিন্ন প্রবীণ সাংবাদিক এবং অভিনেতাদের কাছ থেকে। তারই কয়েকটি তুলে ধরতে এই কলম।
বিশিষ্ট বিনোদন সাংবাদিক চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শোনা- “যে কোনও আলাপকে উত্তমকুমার স্মরণীয় করে রাখতে জানতেন। এটাও ছিল তাঁর একটা আর্ট। তিনি জাদু জানতেন। আর সেই জাদু দিয়ে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারতেন।” আর তাই সেই সাক্ষাত স্মরণীয় হয়ে আছে সেই প্রবীণ সাংবাদিকের কাছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সেই প্রবীণ সাংবাদিককে মহানায়ক তাঁর ময়রা স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে বসে বলেছিলেন– “আর পারছি না। খুব ক্লান্ত লাগছে। ইন্ডাস্ট্রির চেহারাটা যেন কীরকম হঠাত বদলে যাচ্ছে। এখন স্টুডিওয় গেলে সবই অচেনা লাগে। আমার ভাল লাগছে না। এখন মনে হয় রমা (সুচিত্রা সেন) বোধহয় ঠিকই করেছে। খুব ঠিক সময়েই ও ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে গেছে। আমারও এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।…”
অভিনেতা চিন্ময় রায় বহু ছবিতে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন মহানায়কের সঙ্গে। তাঁরও বহু স্মৃতি রয়েছে মহানায়ককে ঘিরে৷ তাঁর কাছ থেকে শোনা, উত্তমকুমারের জন্য গুছিয়ে লাঞ্চ পাঠাতেন সুপ্রিয়া দেবী। নিজেই নিয়ে আসতেন বেশিরভাগ সময়ে। সেই খাবার একা একা খেতেন না মহানায়ক। সেটে যারা থাকত তাদেরও ডেকে নিয়ে খাওয়াতেন। একবার ডাক পড়েছিল চিন্ময় রায়েরও।
সেদিন সুপ্রিয়া দেবী উত্তম কুমারের জন্য চিংড়ি মাছের মালাইকারি রান্না করে এনেছিলেন। সেদিন চিন্ময়কে সবথেকে বড় সাইজের মাছটা দিয়েছিলেন। আর তা দেখে মহানায়ক সুপ্রিয়া দেবীকে বলেন- “ওকে অত বড় পিসটা দিয়ে দিলে? আমি ওই পিস টা তাক করেছিলাম। এত বড় মাছটা ও পারবে খেতে? ওই তো চেহারা! প্রথমটায় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, বেণু দি’ও আমার কাছে লজ্জিত অনুভব করছিলেন। মিনিট দুয়েক পর দাদা হা হা হা করে হেসে ফেললেন। বললেন-“ তোরা কি ঠাট্টাও বুঝিস না রে? নে খা খা।”… আমরাও বুঝলাম ওটা ঠাট্টা ছিল। নিজে যেমন খেতে ভালবাসতেন তেমনই অন্যকে খাইয়ে আনন্দ পেতেন। অন্যজন খেয়ে মজা পাচ্ছে এটা দেখে বেশি খুশি হতেন। ওঁর সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়ার সুযোগ আমি একবার নয়, অনেকবার পেয়েছি। শুনেছি ওঁর বাড়িতেও নাকি খাওয়াদাওয়ায় নবাবিয়ানা ছিল। সেটা উপভোগ করার সুযোগ আমার হয়নি। আসলে আমি নিজেও হুটহাট কারোর বাড়িতে গিয়ে পাত পাড়তে পারি না। তার উপরে আবার উত্তমকুমার। একটু তো আপ অ্যান্ড ডাউন ডিসট্যান্স ছিলই। আর আমি সেটা মেনটেন করতাম।”
অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল একবার উত্তমকুমার প্রসঙ্গে স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে বলেন– “অত বড় মাপের শিল্পী ফ্লোরে সহ অভিনেতাদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করতেন মনে হত যেন কত দিনের চেনা কিংবা পরম আত্মীয়। একবার তো আমার শাড়িও ঠিক করে দিয়েছিলেন দাদা।”
খ্যাতনামা ফুটবলার পি কে ব্যানার্জির সঙ্গে মহানায়কের বেশ দোস্তি ছিল। উত্তমকুমার যখন বেজায় অসুস্থ এবং সুপ্রিয়া দেবীর তত্ত্বাবধানে তখন পি কে ব্যানার্জি দেখতে গিয়েছিলেন মহানায়ককে। মহানায়কের তখন খাওয়া দাওয়া নিয়ে দারুণ রেস্ট্রিকশন। অনেক প্রিয় খাবার খেতে পারেন না তিনি। ওদিকে বেজায় খাদ্যরসিক মানুষ। খেতে আর খাওয়াতে দুইই ভালোবাসেন। পি কে- কে বলেছিলেন – “বলুন তো পি কে, না খেয়ে কি মানুষ বাঁচতে পারে?”— এ কথা পি কে-র কাছ থেকেই শোনা এই সাংবাদিকের। ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ ছিলেন মহানায়ক। বলতেন –” স্পোর্টসম্যান মানেই জেন্টলম্যান।”
মহানায়ক প্রসঙ্গে এই ক্ষুদ্র খসড়া এক বিনোদন সাংবাদিকের একটা প্রচেষ্টামাত্র। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জ্ঞানী গুণী মানুষদের কাছ থেকে তাঁকে নিয়ে শোনা কথার একটা খসড়া বলা যেতে পারে। আজ ২৪ জুলাই তাঁর প্রতি এই সাংবাদিক তথা নিউজ ফ্রন্টের তরফ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584