পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী এবং গায়ক শান্তিদেব ঘোষের বাড়ির সামনে আট ফুটের প্রাচীর তোলাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সঙ্গীত ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সামিল হল বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীরা। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গেয়ে, হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ চললো।
আশ্রমিকরা দাবী করছেন , গত ১০ বছর ধরে প্রাচীর তোলার বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করে আসছে ৷ ২০১১ সালে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন বিশ্বভারতীর আচার্য মনমোহন সিংকে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। আচার্য তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি সুষ্ঠু ভাবে সমাধান করার জন্য। তখন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মাটির উপরে মাত্র চার ফুটের একটি তারের জালি দিয়ে ঘেরা হবে তাহলে বিশ্বভারতীর সৌন্দর্য নষ্ট হবে না। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য উন্মাদের মতো কাজ করছেন। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সমস্ত বিশ্বভারতী কে প্রাচীর দিয়ে ঢেকে দিতে চাইছে।
প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কেন উপাচার্য গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না। একজন উপাচার্য তিনি পাঁচ বছরের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বভারতী তে আসছেন তিনি কি করে বুঝবেন রবীন্দ্র আদর্শের ভাবনা । একটি একটি করে শ্রমিকদের বাড়ির সামনে প্রাচীর তুলে দিয়ে প্রতিবেশীর মধ্যে মনের প্রাচীর তুলে দিচ্ছে উপাচার্য। তিনি আরও অভিযোগ করেন প্রাচীর তৈরীর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিশ্বভারতীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারীরা। আশ্রমিক শর্মিলা রায় পোমো আক্ষেপের সুরে জানান , এ কোন বিশ্বভারতী দেখছি আমরা, এই ধরণের বিশ্বভারতী দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই। আকাশ ও মাটির মিলন ক্ষেত্র গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন।
আরও পড়ুনঃ আত্মরক্ষার্থে কর্মীদের ত্রিশূল বিলি করবে সৌমিত্র
সেই সাধের শান্তিনিকেতন কে নিয়ে সহজভাবে বলতে গেলে ছেলেখেলা করছেন বর্তমান উপাচার্য। গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে নিজেদের আত্মপ্রত্যয় কে জাগিয়ে তুলছি। সবাই এখন তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলছে কিন্তু প্রাচীর তুলে দিলে শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত পরিবেশে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে গুরুদেবের স্বপ্ন। পৃথিবীর বিখ্যাত এবং বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৌভাগ্যক্রমে যেতে পেরেছি, সেখানে তো এধরণের জেলবন্দি করে দেওয়া হয়েছে কোন ছবি চোখে পড়েনি বরং সেই সব বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত পরিবেশ দেওয়া হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের। গুরুদেবের তিরোধানের দিন উপাসনা মন্দিরে যখন গুরুদেব কে স্মরণ করা হবে তখন থাকবে শ্রদ্ধা বিনম্রতা কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের মধ্যে সেই শ্রদ্ধা ও বিনম্রতার অভাব বোধ করছি আমরা।
আরও পড়ুনঃ পুজোতে টানা ১৫ দিন ছুটি পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা, প্রকাশিত ২০২১’র তালিকা
এদিকে পদ্মভূষণ প্রাপ্ত সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি তে কে বা কারা কালি ঢেলে দিয়ে চলে যায়। বীরভূমের জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু অবশ্য জানিয়েছেন বুধবার বিকেল তিনটেই নির্ধারিত সময়ে বোলপুর মহকুমা শাসকের অফিসের কার্যালয় প্রাচীর বিতর্ক থামাতে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হবে। বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় ভবনের সামনে প্রতীকী অনশনে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কিন্তু বুধবার সকালবেলায় বিশ্বভারতী তরফে জানা যায় প্রতীকী অনশনে অংশগ্রহণ করছেন না বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তবে কেন অনশনে বসার পরিকল্পনা বানচাল করলেন তা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দেয়নি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584