আজব কান্ড! মোদী সরকারের প্রকল্পে নাকি ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠেছেন লক্ষ্মীদেবী

0
101

শুভশ্রী মৈত্র, ওয়েব ডেস্কঃ

আজব কান্ড! মোদির পাশে নিজের ছবি, ছবিতে থাকা পাকা বাড়িটাও নাকি তাঁর এমনকি মোদি সরকারের প্রকল্পে নাকি ‘আত্মনির্ভর’ও হয়ে উঠেছেন। না! এসব কিছুই ঘটেনি, ঝুপড়িবাসী লক্ষ্মী দেবীর জীবনে। বিজেপি শুধু তাঁর মত ছাড়াই তাঁর ছবি ব্যবহার করে নিয়েছে নিজেদের প্রচারে। উল্টে এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে চূড়ান্ত হাসি তামাশার শিকার তিনি।

Housind ad | newsfront.co
ছবি সৌজন্যেঃ ইন্ডিয়া টুডে

বছর পঞ্চাশের লক্ষ্মী দেবী, থাকেন কলকাতার বউবাজারে, মলঙ্গা লেনের এক ঝুপড়িতে। ৭০-৮০ বর্গফুটের একচিলতে ভাড়া ঘরে আট জনের বাস। তাঁদেরই একজন বছর পঞ্চাশের লক্ষ্মীদেবী। দীর্ঘদিন যাবৎ মলঙ্গা লেনের ঝুপড়িতেই বাস তাঁর। তিনিই হঠাৎ একদিন দেখলেন, নরেন্দ্র মোদির পাশে তাঁর ছবি! জানতে পারলেন ওই ছবিতে তাঁর পিছনে থাকা পাকা বাড়িটাও নাকি তাঁর! হঠাৎ শুনলেন, মোদী সরকারের প্রকল্পে ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠেছেন তিনি!

কিন্তু বাস্তব একেবারেই তা নয়। একচিলতে ওই ঘরে থেকেই লক্ষ্মীদেবী বহু বছর ধরেই ‘আত্মনির্ভর।’ কোন প্রকল্প ছাড়াই। স্বামীর মৃত্যুর পর ঠিকে শ্রমিকের কাজ করে তিন ছেলেকে মানুষ করেছেন একাই। ঝুপড়ির ঘর ছাড়া মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। রাতে ঘরে কেবল মেয়েরা থাকেন। ছেলেরা খোলা আকাশের নীচে কেউ ফুটপাথে, কেউ ভ্যানের উপর মশারি টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

কিন্তু এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে তাদের সাফল্যের অন্যতম ‘মুখ’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হলো লক্ষ্মী দেবীকেই! দরিদ্র পরিবারের দাবি, এর পর থেকেই চুড়ান্ত ঠাট্টাতামাশার শিকার তিনি। এবার তাঁর দাবি, মানহানি যখন হয়েছেই, এবার বিজ্ঞাপনের ‘মিথ্যে’ ছবিকে এবার ‘সত্যি’ করুক নরেন্দ্র মোদীর সরকারই।

লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর পরিবারের দাবি, তাঁর মত না নিয়েই তাঁর ছবি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়ে আত্মনির্ভর হয়েছেন। গত ১৪ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছবি ব্যবহার করে আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে।

আরও পড়ুনঃ প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং- এই কার্যকর হবে সিএএ

যেখানে এক দিকে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীদেবী, পিছনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া বাড়ি, পাশেই হাসিমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু লক্ষ্মীদেবীর বক্তব্য, ‘পুরো মিথ্যে কথা। আমার ছবি ব্যবহার করে একটা ভুল প্রচার করা হচ্ছে।’ ছবিটি আদৌ লক্ষ্মীদেবীর কি না, তা নিয়ে সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছেন না সরকারি আধিকারিকরা।

তবে লক্ষ্মীদেবীর দাবি, মাস কয়েক আগে গঙ্গাসাগরের মেলায় তিনি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছিলেন। সে সময় একদল ফটোগ্রাফার তাঁর ছবি তোলেন। পরে তিনি দেখেন, সেই ছবি ব্যবহার করে একাধিকবার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছ। হোর্ডিং-ফ্লেক্সও কলকাতার পথে ঘাটে দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ ১৫০টি মন্দিরে অ-হিন্দুদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

লক্ষ্মী দেবী বলেন, ‘এই ক’দিন আমি হাসাহাসির পাত্র হয়ে উঠেছি। লোকে আমাদের নিয়ে নানা ঠাট্টা-মস্করা করছে।’ সৈকত রায় নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘এই পরিবারটিকে আমরা বহু বছর ধরে চিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন ছেলেকে এই লক্ষ্মীই বড় করে তুলেছেন। আজও ঠিক করে মাথা গোঁজার জায়গাটুকু নেই।’

লক্ষ্মী দেবীকে নিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনে ফেক নিউজ ছড়ানো নিয়ে সরব তৃণমূলও। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব লক্ষ্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে এসেছেন। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, ‘এ ভাবেই ফেক নিউজ ছড়িয়ে ওঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এবার তো সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যানার দিয়ে ফেক নিউজ ছড়ানো হয়েছে।’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে সব জানানো হলে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখে তারপর মন্তব্য করব।’

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here