লকডাউনে মনমরা কুমোরটুলি

0
317

মোহনা বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিবেদনঃ

না। আজ আর লেখার শুরুতে করোনাকে টেনে আনবো না। শুরুটা না হয় এবার একটু অন্যরকমভাবে হোক। আজকের বিষয় কুমোরটুলি। সারাদিন করোনার নাম শুনতে শুনতে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি আমরা। সংক্রমণের কারণে বেড়েই চলেছে লকডাউনের সময়সীমা। এর শেষ কোথায়, তা কেউই জানিনা।

Maa durga | newsfront.co
ছবিঃ সায়ন্তন সাহা

এই একঘেয়েমিতে মোড়া জীবনে মানুষ যে মোটেই ভালো নেই, সেটা এতদিনে সকলেরই বোধগম্য হয়েছে। এই বিষয়গুলো বরং এখন থাক। এবার আসি আজকের মূল বিষয় ‘কুমোরটুলি’র কথায়। কেমন আছে কলকাতার মৃৎ শিল্প? প্রতিমা শিল্পীরা কি করছেন এখন?

Makers | newsfront.co
ছবিঃ সায়ন্তন সাহা

কুমোর কথার অর্থ হল পটুয়া বা মৃৎশিল্পী। আর টুলি হল বসতি। অর্থাৎ, কুমোরটুলির অর্থ হল কুমোরদের বসতি। উত্তর কলকাতার শুরু গলিতে পা রাখলেই অদ্ভূত এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কুমোরটুলির মৃৎশিল্প কলকাতার ঐতিহ্য। যাকে এক ডাকে সবাই চেনে। আর চিনবে নাই বা কেন বলুন? কলকাতার বুকে এটাই সবচেয়ে বড় জায়গা যেখানে সমস্ত প্রতিমা যত্নের সঙ্গে গড়ে ওঠে।

Kumortuli | newsfront.co
ছবিঃ সায়ন্তন সাহা

বহু শতক ধরে কুমোরটুলির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে সেখানকার মৃৎশিল্পীরা। এখন এই কঠিন অসুখের সময় কেমন আছে সেই কুমোরটুলি? করোনার প্রভাব কি সেখানেও পড়েছে? হ্যাঁ, শেষপর্যন্ত এই মারণ ভাইরাসের করাল ছায়া ঢেকে ফেলেছে কুমোরটুলিকেও। হতাশায় দিনযাপন করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

Durga maa | newsfront.co
ছবিঃ সায়ন্তন সাহা

আরও পড়ুনঃ ভিনরাজ্যে আটক বাংলার পড়ুয়া-শ্রমিক-পর্যটকদের ফেরানোর উদ্যোগ রাজ্যের

করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। বাড়ি থেকে বেরোলেই বিপদ বাইরে অপেক্ষা করছে। এক জায়গায় বেশি জনের জমায়েতেও ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। তাই অগত্যা ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে মানুষকে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত মন্দির, মসজিদ, গির্জাও। এদিকে নিঃসঙ্গে, নিরবতায় বিদায় নিচ্ছে একের পর এক উৎসব। কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এবছর বাংলার পার্বণ শুরুই হল একলা নির্জনতায়। পুজো বন্ধ। তাই মাটির প্রতিমা তৈরির কাজও বন্ধ। কাঠামোটা সবে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতে আর মাটি দেওয়া হল না। কারণ, তার আগেই কোভিড-১৯-এর কালো ছায়া এসে পড়েছে কুমোরের দ্বোরগোড়ায়।

Kumartuli | newsfront.co
ছবিঃ সায়ন্তন সাহা

করোনার জেরে সমস্ত কাজ বন্ধ থাকায় মানুষের আয় কমে গেছে অনেকটাই। তাই এবছর দুর্গা প্রতিমার বরাতও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন প্রতিমা শিল্পীরা। বছরের শুরু থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দিতেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। হাতে আর মাত্র কয়েকটা মাস। তারপরই শুরু হয়ে যাবে দুর্গাপুজোর তোড়জোড়। এর আগেই কুমোরটুলি থেকে বহু প্রতিমা বিদেশে পাড়ি দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের কারণে বন্ধ প্রতিমা তৈরির কাজ।

এবছর দুর্গাপুজোও হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগেই পয়লা বৈশাখ গেল। তবে সেদিন আর মাটির তৈরি গণেশ, লক্ষ্মীর দেখা মিলল না। কুমোরটুলির শিল্পীদের একমাত্র রোজগারের পথ আজ প্রায় দেড় মাস হল বন্ধ হয়ে গেছে। যার জেরে প্রতিমা শিল্পীদের পেটে পড়ছে টান। এই লকাডাউনের কারণে ক্ষতি তো হলোই, আর তার সঙ্গে ক্রমশ নিঃস্ব হতে বসেছে কুমোরটুলি। শুকনো মুখ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী কুমোরটুলির মৃৎ শিল্পীরা।

এক কথায় বলা যায়, করোনার মতো মারণ অসুখ ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে কুমোরটুলিকে। এই ক্ষতের দাগ হয়ত আজীবন রয়ে যাবে কুমোরটুলির শিল্পীদের মনে। কবে আবার সব ঠিক হবে? কবে কাঠামোয় মাটি দিতে পারবেন কুমোরটুলির শিল্পীরা? কপাল থেকে দুশ্চিন্তার ভাঁজটা আর দেখা যাবে না কবে থেকে? প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই কারোর কাছে। এখন শুধু ঘরে থাকতে হবে। করোনার সঙ্গে লড়াই করার এটাই একমাত্র অস্ত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ মেনে মাস্ক পড়ে রাস্তায় বেরোনোই শ্রেয়। এই যুদ্ধ কারোর একার নয়। এই যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে গোটা বিশ্ব। আমরা জয়ী হবোই। সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পৃথিবী শান্ত হবেই। আর তাই ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here