আলিগড়ে হিন্দুত্ব ক্যালামিটি-মলয় তিওয়ারি

    0
    152

    আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আমুসু) এর অফিস থেকে মহম্মদ আলি জিন্নার ফটো সরানোর দাবিতে যে তান্ডব চালানো হলো তা আমুসুর স্বায়ত্ততা তথা বিশ্ববিদ্যালয়টির সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের ওপর প্রত্যক্ষ আক্রমণ। আমুসুর নিয়ম অনুযায়ি তারা যে সব প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন সময়ে আজীবন সদস্যপদ দিয়েছে তাদের সকলেরই ছবি ইউনিয়ন হলের দেয়ালে টাঙানো আছে। গান্ধি, আম্বেদকর, রামন, রাজেন্দ্র প্রসাদ সহ আরো অনেকের সাথে জিন্নার ছবিও আছে। জিন্না তাঁর সম্পত্তির এক বৃহৎ অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে দান করেছিলেন। ১৯৩৮ সাল থেকে তাঁর ছবি আমুসু হলে টাঙানো আছে।

    আমুসুতে জিন্নার ছবিকে ইস্যু বানানোর পেছনে যে আরো গভীর অভিসন্ধি আছে তা বলাই বাহুল্য। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনৈতিক অভিসন্ধি। সচেতন প্রগতিশীল জনমত এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তবে উদারনৈতিক ভদ্রবিত্তদের একটি অংশ দেশভাগের জন্য জিন্নাকেই সর্বতভাবে দায়ি করে জিন্নার প্রতি বিভিন্নরূপে ঘৃণা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে ছবি সরিয়ে নিলেই তো আর কোনও ঝামেলা থাকেনা। কেউ বলছেন মুসলিম ধর্মে তো ছবি টাঙানোই নিষেধ। বিভিন্নভাবে তারা জিন্নার ছবি সরানোর কোরাসে গলা মিলিয়েছেন। এইভাবে তারা যে কেবল আমু ও আমুসুর অধিকারকেই অস্বীকার করে বসছেন তাই নয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারের কাছে আত্মসমর্পন করে তাদের সাম্প্রদায়িক দুরভিসন্ধিকেই সফল করতে সহযোগিতা করে ফেলছেন। জিন্নার ছবি সরানোর দাবিকে মেনে নেয়া মানে আসলে দ্বিজাতি তত্ত্বকে মেনে নেওয়া। এই ‘দ্বি-জাতি-তত্ত্ব’ বা টু নেশন থিওরি উদ্ভাবন করেন শ্রীযুক্ত বিনায়ক দামোদর সাভারকর। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘হিন্দুত্ব’ গ্রন্থে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরী করেন। বিভিন্ন ভাষণে সাভারকর ও তার নেতৃত্বাধীন হিন্দু মহাসভা এই তত্ত্ব প্রচার করতে থাকে।ভারতে হিন্দু ও মুসলমানকে দুইটি পরস্পর বিরোধী নেশন বা জাতি হিসেবে প্রচার করা হলে তা দুইটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ভেঙে বিভেদের প্রাচীর খাড়া করে। আরো এক ধাপ এগিয়ে যখন বলা হয় যে এই দুই নেশনের একটিকে অপরের অধীনস্ত থাকতে হবে তখন তা পরস্পরের মধ্যে গভীর বিদ্বেষ-বিষ সঞ্চার করে এক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উর্বর ক্ষেত্র তৈরী করে। ১৯৪০ সালে মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগ এই দ্বিজাতি তত্ত্ব বিবেচনায় আনে। তাঁরা বেশ কিছুদিন যাবৎ সাভারকারের ওইসব খুল্লামখুল্লা ভাষণ খুব সিরিয়াস ভাবে লক্ষ্য করছিলেন। হিন্দুত্বের বিষাক্ত আগ্রাসী প্রচার ঔপনিবেশিক শাসকের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিশির সাফল্য সূচীত করে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম দ্বিখন্ডিত হয়।


    ১৯৪০-এ ‘পাকিস্তান, অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’ ও তার পরের বছর ‘থটস অন পাকিস্তান’ গ্রন্থে ডক্টর ভীম রাও আম্বেদকর দ্বিজাতি তত্ত্ব বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি লিখছেন, “শুনতে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু মিস্টার সাভারকার ও মিস্টার জিন্না দুই-নেশনের ইস্যুতে একে অন্যের বিরোধী হওয়ার বদলে বরং পরস্পর সম্পূর্ণ সহমত”। সেই সাথে ক্রুশিয়াল ফারাকটাও উল্লেখ করতে ভুলছেননা ডক্টর আম্বেদকর। সাভারকারের সংজ্ঞায় ‘হিন্দু’ তারাই যারা ইন্ডিয়াকে কেবল ‘পিতৃভূমি’ হিসেবে নয়, ‘পুণ্যভূমি’ হিসেবেও মেনে নেবে। আম্বেদকর সাভারকারের এই সংজ্ঞার অন্তর্নিহিত অভিসন্ধি উন্মোচিত করে লিখেছেন যে এই ছকের পেছনে সাভারকরের দুইটি উদ্দেশ্য কাজ করছে। প্রথমত, ভারতকে ‘পুণ্যভূমি’ হিসেবে মানতে হবে বলে মুসলিম, খ্রিষ্টান, পার্সি ও ইহুদিদের এই সংজ্ঞার আওতা থেকে বাদ দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, বেদ-এর পবিত্রতা মানা না-মানার প্রশ্নে কোনও জেদাজেদি না দেখিয়ে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি ধর্মের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে যদি হিন্দু ও মুসলমানদেরকে সম্মান ও সৌহার্দ্যের পরিবেশে পরস্পরের সঙ্গী হিসেবে বসবাস করতে দেয়া হতো তাহলে কোনও সমস্যাই থাকত না–তিনি লিখছেন–“কিন্তু তা হবার নয়, কারণ মিস্টার সাভারকর শাসনকার্যে মুসলিম নেশনকে হিন্দু নেশনের সাথে পরস্পর-সমান হতে দেবেন না। মিস্টার সাভারকর চাইছেন যে হিন্দু নেশন হবে আধিপত্যকারী নেশন আর মুসলিম নেশন হবে তার অধীনস্ত নেশন”।

    ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে এই সাভারকারের পোর্ট্রেইট স্থাপন করে তৎকালীন বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকারের সন্দেহ জনক ভূমিকার প্রশ্ন তখন জোরালোভাবে উঠেছিল। যখন তাঁর ‘হিন্দুত্ব’ তত্ত্ব লিখছেন ঠিক সেই সময়েই জেইলবন্দী ‘বীর’ সাভারকার ব্রিটিশ সরকারের কাছে এক মুচলেকা-পত্রে লিখছেন, “যদি মহানুভব ও আসীম দয়ালু সরকার আমাকে মাফ করে দেন তাহলে আমি কথা দিচ্ছি যে আমি সংবিধানবাদী বিকাশের সবচেয়ে কট্টর সমর্থক থাকব ও ইংরেজ সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব”।

    জিন্নার ছবিকে ইস্যু করে যোগি প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে ‘হিন্দু যুবা বাহিনী’ তথা আরএসএস আমুতে তান্ডব চালিয়ে জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্বের রাজনীতিকে মোটেই আক্রমণ করছে না, বরং তা সাভারকারের দ্বি-জাতি-তত্ত্বের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা পর্বের রাজনৈতিক মীমাংসা তথা পাকিস্তান গঠনকে তারা হিন্দুদের পরাজয় হিসেবে জনমানসে প্রতিভাত করতে চায়। এবং সেই ‘পরাজয়’-এর ক্ষোভ চাপিয়ে দিতে চায় ভারতের বর্তমান মুসলিম জনতার ওপর। জিন্নাকে আক্রমণের লক্ষ্যে বসিয়ে দিয়ে আসলে সাধারণভাবে মুসলমান সমাজকে ঘৃণার চাঁদমারি বানাতে চায়। সাভারকরের দ্বিজাতি তত্ত্বকেই আরো একবার সামনে তুলে ধরে বলতে চায় যে ভারতে হিন্দু ও মুসলমান ঐতিহাসিকভাবে বিবদমান দুই পৃথক নেশন। পার্লামেন্টে সাভারকরকে বসিয়ে আর আমুসু থেকে জিন্নাকে হঠিয়ে বুঝিয়ে দিতে চায় যে এদেশে মুসলমানদেরকে ‘হিন্দু নেশন’-এর অধীনস্ত থাকতে হবে। বালগঙ্গাধর তিলক এবং ভগত সিং-সুখদেব-রাজগুরুর পক্ষ নিয়ে ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে কেবল মাত্র মহম্মদ আলি জিন্নাই যে মামলা লড়েছিলেন সেই তথ্যও সরকারী নথি থেকে মুছে দেওয়ার দাবি তুলেছে ওরা। এবং কেবল জিন্নাই নন, আমুর দেয়াল থেকে এমনকি আমুর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমেদ খানের প্রতিকৃতিও খুলে ফেলে দিয়েছে ওরা। সেখানে টাঙিয়েছে নরেন্দ্র মোদির ছবি!

    আমুর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্যর সৈয়দ আহমেদ খানের নাম সরিয়ে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের নাম দেওয়ার দাবিও তুলেছে সঙ্ঘীরা। ২০১৪ সাল থেকেই তারা এই দাবি তুলছে। সৈয়দ আহমেদ খানের বিপ্রতীপে তাঁকে ‘অবহেলিত হিন্দু জাঠ রাজা’ হিসেবে তুলে ধরে মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে চাইছে জাঠ গরিমা। ভারতের মুসলিম সমাজের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ‘মহামেডান এংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ’ স্থাপিত হয় ১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্টের কাছ থেকে ৭৪ একর জমি কিনে। ১৯২০ সনে নাম হয় ‘আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি’। মহেন্দ্র প্রতাপ ১৮৯৫-এ এই কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৯ সনে তিনি আমুকে ৩ একর জমি দান করেছিলেন। আমুসুর আজীবন সদস্যদের মধ্যে তিনিও একজন এবং তাঁর মৃত্যুর দু’বছর আগে ১৯৭৭ এ আমু তাঁকে বিশেষ সম্বর্ধনা দেয়। এত দিন পর হঠাৎ তাঁর জাঠ-হিন্দু পরিচিতিকে তুলে ধরে সাম্প্রদায়িক আবেগ তৈরী করতে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছে বিজেপি! কিন্তু মজার বিষয় হলো রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ ছিলেন একজন অগ্রণী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ঘোষিত মার্ক্সবাদী লেখক-সাংবাদিক যিনি, জাতীয় কংগ্রেসে ১৯২৯ সালে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি গৃহীত হওয়ার অনেক আগে, ১৯১৫ সনেই কাবুলে প্রথম স্বাধীন ভারত সরকার ‘মোক্তার-ই-হুকুমত-ই-হিন্দ’ স্থাপন করেছিলেন যার প্রধান মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন মৌলবি বরকতুল্লা, গৃহমন্ত্রী মৌলানা ওবাইদুল্লা সিন্ধি ও প্রেসিডেন্ট স্বয়ং মহেন্দ্র প্রতাপ সিং, সোভিয়েত বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের সাথে গিয়ে দেখা করেছিলেন ও সাহায্য পেয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে ১৯৫৭ সালে বিজেপির তৎকালীন অবতার ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রার্থী অটল বিহারী বাজপেয়িকে মথুরা কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে পরাস্ত করেছিলেন। প্রফেসর রাম পুনিয়ানির ভাষায় “বিজেপি যে কেবল জনসাধারণের আত্মপরিচিতিকেই ম্যানিপুলেট করছে তাই নয়, তারা ঐতিহাসিক আইকনদের পরিচিতিকেও ম্যানিপুলেট করছে”। একদিকে তাঁরা আম্বেদকরের গলায় মালা দিচ্ছে অন্যদিকে দেশজুড়েই আম্বেদকর মূর্তি ভাঙছে। সম্প্রতি আগ্রা পৌরভবনের আম্বেদকর মূর্তি সরিয়ে দীন দয়াল উপাধ্যায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে যোগি সরকারের নির্দেশে।

    সাভারকারের তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়েই গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ’ বা আরএসএস। তাদের ঘোষিত লক্ষ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা। আম্বেদকর এই লক্ষ্যকে ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে ‘গ্রেটেস্ট ক্যালামিটি’ বা চরম বিপর্যয় হিসেবে সচেতন করেছিলেন এবং যে কোনও মূল্যে তাকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ‘ক্যালামিটি’ প্রকট চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে। উনা থেকে উন্নাও, কাঠুয়া থেকে আলিগড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে গড়চিরোলির আদিবাসী, ছোট্ট আসিফা থেকে শুরু করে প্রৌঢ় জাফর খান, আফ্রাজুল থেকে শুরু করে সিবঘাতুল্লা, শ্রমজীবিদের স্বল্প সঞ্চয় থেকে শুরু করে ভদ্রবিত্তের ব্যাঙ্ক আমানত, আপনা রুচিমে খানা থেকে শুরু করে আপনার ব্যক্তিগত আধার-তথ্য, দলিতের ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে মুসলমানের নামাজ পড়া, আদালত থেকে শুরু করে সংবিধান, জাতবর্ণের নির্যাতন নিবারণ আইন থেকে শুরু করে নরনারীর প্রেমবিবাহের মৌলিক অধিকার—সমস্ত ক্ষেত্রেই হিন্দুত্ব ক্যালামিটি প্রকট হয়ে উঠছে। ‘সম্পদ ও সমাজের ওপর উচ্চ বর্ণ হিন্দুর আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার ছকবাজীরই আরেক নাম হিন্দুত্ব’—ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর একথা সুস্পষ্ট দৃঢ়তায় বারবার উদ্ঘাটিত করেছেন।

    পরিশেষে একথা আমাদের না বোঝার কোনও কারণ থাকতে পারেনা যে ইতিহাসের আরেক ভবিষ্যৎ বাঁকে গিয়ে দেশভাগের গ্লানি-বেদনার কোনও সুবিচার যদি আমরা অর্জন করতে চাই তাহলে তার শুরুর ধাপ অবশ্যই হতে হবে ইতিহাসের এক পর্বে অনেক রক্তক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে যে রাজনৈতিক মীমাংসায় আমরা পৌঁছেছিলাম সেই মীমাংসাকে সসম্মানে স্বীকার করা। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পরস্পরের সার্বভৌম অস্তিত্বকে সম্মান না ক’রে, প্রত্যেকে অন্যের ইতিহাস ও জাতীয় নায়কদের যথাযথ মর্যাদা না দিয়ে ভবিষ্যতে অন্য কোনও স্তরে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে কি?

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here