শুভশ্রী মৈত্রঃ
মুম্বাই ডায়েরিজ ২৬/১১
পরিচালকঃ নিখিল আদবানি ও নিখিল গঞ্জাল্ভেস
সিজনঃ ১
৮ পর্বের ওয়েব সিরিজ
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও
মুখ্য চরিত্রেঃ মোহিত রায়না, টিনা দেশাই, কঙ্কনা সেন শর্মা, শ্রেয়া ধন্বন্তরি, সত্যজিত দুবে, নাতাশা ভরদ্বাজ, ম্রুন্ময়ী দেশপান্ডে, প্রকাশ বেলাওয়াড়ি।
মূল ভাবনাঃ ৮ পর্বের এই ওয়েব সিরিজে মূলত উঠে এসেছে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের মুম্বাই হামলার শ্বাসরুদ্ধ করা ৬০ ঘন্টার এমন কিছু দিক, যেগুলো এর আগে কখনো সেভাবে আলোচনায় আসেনি। সেই কয়েক ঘন্টায় মুম্বাইয়ের সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে সাধারণ পুলিশ কর্মী ন্যূনতম পরিকাঠামোর ওপর ভরসা করে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন; একেবারে সামনের সারিতে থেকে এক অসম লড়াই লড়েছেন ‘মুম্বাই ডায়েরিজ-২৬/১১’ তারই কিছু চিত্র তুলে ধরেছে। তুলে ধরেছে আজকের ডিজিটাল মিডিয়ার ইঁদুর দৌড়ের ফলের ছবি।
আজকের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতে বিদেশী বিভিন্ন ধরণের থ্রিলার আমরা দেখতে পাই সহজেই। কিন্তু গ্রে’স অ্যানাটমির মত কোন মেডিক্যাল থ্রিলার আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি। সেদিক থেকে বিচার করলে মুম্বাই ডায়েরিজ কে প্রথম ভারতীয় মেডিক্যাল থ্রিলারও বলা যায়। ৮ পর্বের এই ওয়েব সিরিজ সব মিলিয়ে ‘মাল্টিলেয়ারড’ একটি চিত্রনাট্য। এবং অভিনেতা নির্বাচন থেকে শুরু করে আর্ট ডিরেকশন- প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে অসম্ভব যত্নের ছাপ রয়েছে গোটা সিরিজে।
গোটা গল্পে রয়েছে একাধিক সাবপ্লট- সামাজিক বৈষম্য, নেপোটিসিম, সিস্টেম্যাটিক অপ্রেশন, লিঙ্গ বৈষম্যের গভীরতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি বহুকিছু।
ডাক্তার কৌশিক ওবেরয়ঃ শরীরী ভাষায় এক আদ্যন্ত গোঁয়ার ডাক্তার। চরিত্রটি যেন মোহিত রায়নাকে ভেবেই তৈরি করা হয়েছে এমনটাই মনে হয়েছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। তার সঙ্গে নজর কেড়েছে বিভিন্ন মেডিক্যাল টার্মের সঠিক ব্যবহার, যার জন্য যথেষ্ট রিসার্চের প্রয়োজন হয়েছে।এখানে আরো একটি কথা না বললে চরিত্রের প্রতি অন্যায় করা হবে- ডাক্তার কৌশিক হলেন সেই চরিত্র যিনি একজন আদর্শ ‘মেন্টর’ এবং জুনিয়রদের ‘ফাদার ফিগার’।
চিত্রা দাসঃ কঙ্কণা সেন শর্মার অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কঙ্কণার নো মেকাপ লুক এবং স্বাভাবিক সাবলীলতা সব চরিত্রকেই এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়।
অনন্যা ঘোষঃ অনবদ্য অভিনয় টিনা দেশাই-এর। দায়িত্বজ্ঞানের পারফরমেন্সে ১০০ র মধ্যে ৮০ না দিলে অবিচার করা হবে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজের ১০০ শতাংশ দক্ষতা উজাড় করে দিয়েছেন।
আর যা বাকি থাকলো সে নিয়ে সত্যিই আজ গভীর ভাবে ভাবার সময় এসেছে। আজকের হাজার হাজার ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে দাঁড়িয়ে মিডিয়ারও সময় এসেছে শুধু টিআরপি আর ‘ব্রেকিং নিউজ’-এর বাইরে এসে নিজেদের একটু দায়িত্ববান হওয়া। ‘ক্রাইসিস’ থেকে টিআরপি না খুঁজে তাকে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা। মানুষ বাঁচলে তবেই না টিআরপি!
ওয়েবসিরিজের ৮ টি পর্ব দেখালো আজও দেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের ভরসা সরকারি হাসপাতালের ওই সাধারণ পরিকাঠামো যা দামি হাসপাতালের তথাকথিত ‘বিশ্বমান’ এর স্বাচ্ছন্দ দিতে পারেনা কিন্তু চিকিৎসায় অন্তত দশ গোল দিতে পারে দামি হাসপাতালকে। আর থাকলেন সাধারণ পুলিশকর্মী যারা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা হেলমেটের তোয়াক্কা না করে শুধু নিজেদের দায়িত্ব পালনকেই একমাত্র লক্ষ্য বলে বিশ্বাস করে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে। বেশি কিছু নেই জীবনে শুধু বিশ্বাস করেন উর্দির সম্মানে।
আরও পড়ুনঃ ঘরে এল নতুন সদস্য, কন্যা সন্তান জন্মানোর পর শাহির-রুচিকাকে শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত নেটদুনিয়া
এছাড়া আরও অনেক কিছু আছে মুম্বাই ডায়েরিজে যা সত্যিই বলে শেষ করা যায় না। আছে আত্মবিশ্বাস, আছে ইঁদুর দৌড়, আছে মানবিকতা। আর আছে সিরিজ শেষের গান, জুবিন নৌটিয়ালের গলায় – “ইয়ে হালাত হ্যায়, ইয়ে জসবাত হ্যায়—কিউ দিলমে ভরে সাওয়ালাত হ্যায়!”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584