সম্পাদকীয়
আট নভেম্বর 2016।রাত্রি আটটার ঘোষনা। কেঁপে উঠছিল দেশ।হদ্দ গ্রাম থেকে মেট্রোপলিটন শহর।ব্যাঙ্কের সামনে সর্পিল লাইন।ভুক্তভোগী আমজনতার স্মৃতিতে এখনো দগদগে ক্ষত।
দেশের নির্বাচিত সরকারের প্রধান হয়ে সেদিন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর কথাকে বিশ্বাস করেছিল মানুষ। দুর্নীতি কর দর মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে জর্জরিত মানুষ ভেবেছিল এইতো পাবো এক নতুন দেশ। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন সন্ত্রাসবাদ- জালনোট – কালোটাকা রুখতেই এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কষ্ট হবে কিন্তু দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত রোগ সারাতে এই কড়া দাওয়ায় ছাড়া অন্যপথ নেই। দেশের তাবড় অর্থনীতিবিদ বলেছেন এটি পথ নয়। অর্থনীতির আর্ন্তজাতিক খ্যাতিমান বিশারদরাও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন যে স্বপ্ন মোদী দেশের মানুষকে দেখাচ্ছেন তা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু মানুষ ভরসা রেখেছিল এই দেশ নেতার কথায়।
কি চেয়েছিল মানুষ?-অনৈতিকভাবে সম্পদের অসম বন্টনে একশ্রেণীর মুনাফাখোর ধনীর অসৎ সম্পদ জাতীয় আয়ে পর্যবসিত হবে। শিক্ষা জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি জনকল্যাণে তা ব্যবহৃত হবে।সন্তানের মুখে দিনের শেষে একমুঠো অন্ন, প্রিয়জনের রোগযন্ত্রণায় পথ্য আর নিরাপত্তা এইতো চাওয়া। এইটুকু চাওয়াতেই স্বীকার করেছে শত কষ্ট।প্রতিদিন বেড়েছে মৃতের তালিকা।প্রাণময় মানুষগুলো বেরিয়েছে বাতিল নোট বদলে নতুন নোটের আশায় সেই মানুষ ফিরেছে প্রাণহীন শবদেহ্ হয়ে। তবুও মানুষ ফেটে পড়েনি ধিক্কারে বরং ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দেওয়া দেশপ্রেমের সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে।
প্রতিদিন সরকার বদলেছে নিয়ম, নাজেহাল হয়েছে ব্যাঙ্ককর্মীরাও। কিন্তু তারপর?
প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নেওয়া পঞ্চাশদিন অতিক্রম করে আজ তিনশো ছেষট্টি দিনে আজও মানুষ লাইনে দাঁড়ায়,আজও জঙ্গীহানায় মৃত মায়ের কান্না অনুরণিত হয় এ দেশের আকাশে বাতাসে। আজও অসৎ সম্পদের পাহাড়ে বসে কিছু মানুষ। বে-রোজগারীতে মলিন দেশের যুব সমাজ।
অর্থনীতির লাভ ক্ষতি বা রাজনৈতিক প্রভাবের চেয়েও নোটবন্দি সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করলো বিশ্বাসের,মানবিকতার। সত্যিই স্বাধীনতা পরবর্তী এ দেশের সকল প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ছাপিয়ে গেছেন। তবে ইতিবাচকে নয় নেতিবাচকে। দেশের মানুষের দেশপ্রেমকে খেলো করেছেন, সৈনিকের বীরত্ব আত্মত্যাগের দৃষ্টান্তকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির স্বার্থে অপব্যবহার করেছেন। সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা হরণ করেছেন, কন্ঠরোধ করেছেন। সর্বোপরি রিজার্ভ ব্যঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নিরপেক্ষতা সম্মান ভূলুন্ঠিত করেছেন বিশ্বের দরবারে।
ফলে আজ ভারতবাসী আর ‘মিত্র:’ আহ্বানে আর পুলকিত হচ্ছে না বরং আজ সরকার তার ঘোষিত নীতি থেকে সরে এসেছে অনেকটাই, ব্যর্থ প্রতিটি পদক্ষেপে সেই ব্যর্থতার দায়িত্ব ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার স্বার্থে অস্বীকার করে এ দেশের আপামর মানুষের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা এই সরকার করলো তার নজির এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এখনো পর্যন্ত বিরল। তাই নোটবন্দির বর্ষ পূর্তিতে দেশের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য কেমন যেন অজুহাতের শোনায়।নীরব মোদীজীও। কিন্তু এ নীরবতা তো এ দেশের মানুষ চায়নি, এ দেশের মানুষ কামনা করছিল তিনি ছাপান্ন ইঞ্চি বুক বাজিয়ে বলবেন ‘বলছিলাম করে দেখিয়েছি।‘ তা তো হয়-ই-নি উল্টে শাক দিয়ে ব্যর্থতার মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করছেন। এতগুলো প্রণহানির দায় কি অস্বীকার করতে পারবেন মোদীজী?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584