লক্ষ্মী পূজায় নিলামে ওঠে জিলিপি

0
255

সুদীপ কুমার খাঁড়া,ঝাড়গ্রামঃ

অখন্ড মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন ও আকর্ষণীয় পূজা গুলির মধ্যে অন‍্যতম হলো ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর-২ ব্লকের হাড়দা গ্রামের সর্বজনীন লক্ষ্মী পূজা।আর ৫ দিন ধরে চলা লক্ষ্মী পূজা এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা মেলা হাড়দা বাসীদের কাছে শারদোৎসবের আসল আনন্দ বয়ে আনে।বিউলির ডালের সাথে আতপ চালের গুঁড়া মিশিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি জিলিপি এখানকার লক্ষ্মী পূজার বিশেষ আকর্ষণ।

জিলিপি ভাজার কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

এই জিলিপির টানে প্রায় প্রতিদিনেই লক্ষ্মী পূজায় ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ।পূজা উপলক্ষে প্রায় দুশো কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হয় বলে জানান গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সৌমেন মন্ডল।মানুষের বিশ্বাস এই জিলিপিতে মিশে থাকে দেবীর আশীর্বাদ।এই পূজার অপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো কোজাগরী পূর্ণিমায় এখানে শুধুমাত্র লক্ষ্মীদেবী নন লক্ষ্মীর সাথে সরস্বতীর দেবীর আরাধনাও করা হয়।এরই সাথে পূজিত হন নারায়ন ও চারজন সখী।সখীরা লুকলুকানী নামে পরিচিত।এবারে পূজার ১৫৭ তম বছরে পা দিলো।

নিজস্ব চিত্র

পূজার বাজেট প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা।পূজা উপলক্ষ্যে দুদিন কোলকাতার যাত্রাদলের যাত্রাপালাগান সহ পাঁচ দিন ধরে চলছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। শুধু হাড়দা বা পাশাপাশি এলাকার মানুষ নন,অনেক দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখানে পূজা এবং পূজাকে কেন্দ্র করে বসা মেলা দেখতে আসেন।কিংবদন্তী ও জনশ্রুতি অনুসারে স্বপ্নাদেশ পেয়ে হাড়দা গ্রামের মোড়ল হিসেবে পরিচিত মন্ডলদের পূর্বপুরুষ অক্রুর মন্ডল ১৮৬২ খ্রীস্টাব্দে পারিবারিক ভাবে এই পূজা শুরু করেন। তখন মন্ডলরা ছিলেন সংখ‍্যায় চল্লিশ ঘর মতো।সেই মন্ডল “বাকুল”এর সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। তাঁরা এখন প্রায় চারশো ঘর।পাশাপাশি পূজায় যোগ দিয়েছেন গ্রামের অন‍্যান‍্য বাসিন্দারাও।তবে পূজার মূল দায়িত্ব পালন করেন মন্ডলরাই।আগে খড়ের ছাউনির মাটির ঘরে পূজা হতো বছর সাতেক আগে পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর একচালার কাঠামোর উপর প্রতিমা তৈরি হয় লক্ষ্মীর বাঁ দিকে থাকেন স্বরসতী তাদের দু পাশে থাকেন চারজন সখী।সবার উপরে থাকেন নারায়ন। লক্ষ্মী-সরস্বতী একসাথে পূজা করার কারণ খুঁজতে গিয়ে পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা গেল বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী নারায়ণের দুই স্ত্রী লক্ষ্মী ও সরস্বতী, সে কারণে এখানে দুই স্ত্রীর সঙ্গে নারায়ন পূজা করা হয় ।

নিজস্ব চিত্র

বংশাপরম্পরায় নির্দিষ্ট ব্রাহ্মন পরিবার এখানে পূজা করেন।দেব-দেবীদের চিরাচরিত অন্নভোগের পাশাপাশি লুচি,সুজি, নাড়ু নিবেদন করা হয়।এখানে পূজার খরচ গ্রামের মানুষরাই জোগান। বাইরের কারোও কাছ থেকে সেভাবে চাঁদা নেওয়া হয় না।নিলামের মাধ্যমে এখানকার প্রসিদ্ধ জিলিপি বিক্রি করার অনুমতি পায় কোন একটি নির্দিষ্ট দোকান।পূজা কমিটির সূত্রে জানা গেছে এবারে সর্বোচ্চ ১লক্ষ ১০ হাজার টাকা দর দিয়ে জিলিপি দোকান করার অনুমতি পেয়েছেন রাজেশ মন্ডল।কোজাগরীর সন্ধ্যায় এলাকার পুরুষ ও মহিলারা একসঙ্গে শঙ্খ ধ্বনি ও হরিনাম সংকীর্তন সহযোগে গ্রামের মন্ডল দিঘির ঘাটে জল ভরতে যান।এই দিঘিতে প্রতিবছর আতশবাজির প্রদর্শন হয়।এ বছররের নতুন ধরনের আতশবাজির খেলা তাক লাগিয়ে দেয় উপস্থিত মানুষ জনদের। পূজা এই পাঁচটি দিনকে বর্ণময় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি পূজা কমিটির সম্পাদক সুপ্রিয় মন্ডল, সভাপতি প্রদীপ কুমার মন্ডল সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। পূজা ঘিরে গোটা এলাকায় পুরো জমজমাট উৎসবের মেজাজ।

আরও পড়ুনঃ চাষীর কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে রাজ্য সরকার

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here