বেহুলা লক্ষিন্দরের প্রতীকী বিয়ের অনুষ্ঠান

0
342

শ্যামল রায়,মঙ্গলকোটঃ

মনসা মঙ্গল কাব্যে মঙ্গলকোটের কো গ্রামের নাম ছিল উজানী নগর।কাব্য অনুযায়ী উজানী নগরের মেয়ে বেহুলা কে স্মরণ করে আজও পার্শ্ববর্তী জাল পারা ও গনপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বেহুলা লক্ষিন্দর বিবাহ দেওয়ার রীতি আজও বজায় রেখেছে।বেহুলা লক্ষিনদারের বিবাহ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে উৎসব।উৎসব চলবে আট দিন ধরে।সেই সাথে চলবে নানান ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথা মেনে একটি প্রাচীন বট গাছকে লক্ষিন্দার ও মনসার ঘটকে বেহুলা কল্পনা করে প্রতিকী বিবাহ দেওয়ার রীতি আজও বিদ্যমান।গায়ে হলুদের সুতো বটগাছের চারিদিকে বেঁধে সাতপাকে ঘোরানো হয় দেবী মনসার ঘট।মঙ্গলকোটের চান গ্রাম পঞ্চায়েতের এই দুই গ্রামে বেহুলা লক্ষিন্দরের বিবাহ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে।
জাল পাড়া ও গণপুর গ্রামে মনসা বন্দনা ঘিরে বহু কাল ধরে প্রচলিত রয়েছে এক রহস্যময় ঐতিহাসিক কাহিনী।আরো জানা গিয়েছে যে জাল পাড়া গ্রামে বহুকাল আগে একটি পুকুর থেকে মনসার মূর্তির আদলে একটি প্রস্তরখন্ড পাওয়া গিয়েছিল।গ্রামেরই কোন এক বাসিন্দা দেবী মনসার স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মূর্তিটি তুলে দেবীর আরাধনার করতে শুরু করেন। মূর্তিটি যেহেতু কার্তিক মাসে পাওয়া গিয়েছিল তাই এই সময় উৎসব পালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।তবে বেহুলা লক্ষীন্দরের প্রতিকী বিবাহ দেওয়ার রীতি কবে থেকে চালু হয়েছে নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।
তবে কথিত যে মঙ্গলকোটের অজয়ের তীরবর্তী অঞ্চলের যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে তা অতি প্রাচীন তা ঘিরে রয়েছে প্রাচীন রীতি লোক শিল্পীরা।মনসা মন্দিরে খোল কর্তাল সহযোগে মনসার পালা গান পরিবেশন করে থাকেন।
মনসা মঙ্গলের মোট নয়টি অধ্যায় এখানে উত্থাপিত হয়।লোকশিল্পী দয়াময় পাল জানিয়েছেন যে মনসার আবির্ভাব বেহুলা লক্ষিন্দরের বিবাহ ও তার করুন পরিণতি চাঁদ সওদাগরের সর্বনাশ সবশেষে চাঁদের পূজো ও বেহুলা লক্ষিনদারের বিবাহের অষ্টমঙ্গলা পর্যন্ত পালার মাধ্যমে গান গেয়ে শোনানো হয় বাসিন্দাদের।এরপর অষ্টম দিনে এক মহিলা দেবীর ঘাট নিয়ে মনসা মন্দির থেকে গ্রামেরই এক মনসার থানে যান।সেখানেই রীতি অনুযায়ী পুরনো বট গাছের সামনে বেহুলা লক্ষিনদারের প্রতিকী বিবাহ হয়।বট গাছের চারিদিকে সাত পাক ঘুরে একটি হলুদ সুতো পড়ানো হয়।বটগাছ কে সাক্ষী রেখে চলে বেহুলা লক্ষিন্দরের বিবাহ পর্ব তারপর আবার মূল মন্দিরে এসে চলে মনসা পূজো।আট দিন ধরে পাঁচালীর মাধ্যমে দেবী মনসাকে বন্দনা করা হয়।হলুদ সুতো দিয়ে গাছ বেঁধে দেয়ার অর্থ হলো মানুষের যে গাছ রক্ষার তাগিদ ছিল তা জানান দেয়া এছাড়া সাপকে দেবতা হিসেবে পুজো করার অর্থ সাপকে না মারা।মনসা সর্পকুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসাবে গ্রামবাংলায় আজও পূজিত হয়ে আসছেন।হিন্দু পুরাণে ও মনসা কে সর্পকুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে কল্পনা করা হয় মঙ্গলকাব্যের ধারার প্রাচীনতম ফসল মনসামঙ্গল কাব্য।সর্পদেবতা মনসা কে অবলম্বন করে তা লেখা হয়েছে।
তাই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে মনসামঙ্গল কাব্যের সেই উজানী নগরী আজকের মঙ্গলকোটের কো গ্রাম।তাই মঙ্গলকোট এলাকায় মনসার পুজোর প্রচলন ব্যতিক্রমী নয় তবে মনসা পুজো সাধারণত পঞ্চমী তিথি বা মাসের সংক্রান্তিতে হওয়ার প্রচলন আছে।জালপাড়া গণপাড়া গ্রামে কার্তিক মাসে দেবী মনসার আরাধনা ব্যতিক্রমী ঘটনা।তাই মঙ্গলকোটে চলছে বেহুলা লক্ষিনদারের প্রতীকী বিয়ের রীতি উৎসব।

আরও পড়ুনঃ দুর্গোৎসবের রেশ না কাটতেই নদীয়া সাজতে চলেছে জগদ্ধাত্রী পুজোয়

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here