বেরা উৎসব-দীনানথ মন্ডল
‘বেরা’ একটি পারসি শব্দ, যার অর্থ মহৎ উদ্দেশ্যে নৌপথে যাত্রা।তাই নদীর কাল্পনিক পীর বা কাল্পনিক দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতি বছর ভরা নদীর বুকে খাজা খিজিরের সন্মানে এক বর্ণময় আলোক উৎসব অনুষ্ঠিত হতো।খাজা খিজির হলেন জলের সেই কাল্পনিক দেবতা।
এই উৎসবের সূত্রপাত ঘটে মুকাররম খাঁ-র আমলে। বাদশা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তিনি বাংলার সুবাদার হিসাবে ঢাকায় আসেন। তখন নদীমাতৃক বাংলায় রাজ্যশাসন ও বন্যা মোকাবিলার জন্য এক বিশাল নৌবাহিনী রাখা হতো। তাই নদীর পীর বা দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতি বছর ভরা নদীর বুকে খাজা খিজিরের সন্মানে এক বর্ণময় আলোক উৎসব ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হতো। এই উৎসবকে বেরা উৎসব তখনও বলা হতো। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বেরা উৎসব হয়ে আসছে।
নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ মুর্শিদাবাদে এই উৎসবের সূত্রপাত করেন। ১৭০৪ সালে বাংলা-বিহার-ওড়িশার সুবেদার হিসেবে মুর্শিদকুলী খাঁ মুর্শিদাবাদে আসার পর থেকেই প্রতি বছর নিয়ম করে দিল্লির মসনদে বাৎসরিক কর সংগ্রহ করে পাঠাতেন। মালপত্র বজরায় তুলে নিয়ে নদী পথ দিয়েই ওই যাত্রার শুরু হতো। ওই বজরার যাত্রা শুরুর মুহূর্তে তোপ দাগা হত। ওই যাত্রাপথ মঙ্গলময় করতেই বেরা উৎসবের সূচনা।
মুর্শিদাবাদে নবাবের আমল থেকে হয়ে আসা এই আলোকদান উৎসব প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে প্লাবনে কানায় কানায় ভর্তি ভাগিরথী নদীর বুকে সম্পন্ন হয়। কলাগাছের ভেলা তৈরি করে রঙ বেরঙের কাগজ, মোমবাতি, প্রদীপ দিয়ে সুসজ্জিত করে খাজা খিজিরের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মুর্শিদকুলীর আমলে বেরা উৎসবের ভেলাটি তিনশো হাত লম্বা ও চওড়া হতো। এখন আর এতো বড়ো হয় না। এক বর্ণাঢ্য মিছিল সহকারে খাজা খিজিরের সির্নী বেরার উপর আনা হতো। বেরার উপর সোনা ও রূপার প্রদীপ জ্বালিয়ে মনস্কামনা পূরণের জন্য খাজা খিজিরের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। নদীর পাড়ে শুরু হতো আতশবাজি পোড়ানো।এখনও হয়। নবাবী নৌকা বজরা সহ সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ধরনের বজরা আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এই উৎসবে যোগ দিত। নদীর দু’পাড়ে অসংখ্য মানুষ এই দৃশ্য উপভোগ করতো। আজও করে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584